Site icon মুক্তিপত্র

হাস্যকর আমাদের বর্তমান

শিরোনামে কি মনে হচ্ছে খুব জমিয়ে হাস্যরসাত্মক কিছু একটা লিখবো? তাহলে মনে হওয়াটা নেহাৎ ভুল নয়। যা লিখিতে চলেছি তা অর্থাৎ বিষয়বস্তু বেশ জটিল হলেও আজকাল আমাদের কাছে হাস্যকর হয়ে গেছে। যাক, আর ভূমিকা না করলেও চলবে। এবার মূল কথা শুরু করা যাক।

ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ফলশ্রুতিতে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়, ভারত এবং পাকিস্তান।

ভারতবর্ষ থাকাকালীন যে অংশ পূর্ববঙ্গ নামে পরিচিত ছিলো তা হয়ে যায় পাকিস্তানের প্রদেশ পূর্ব পাকিস্তান। এই বিভাজনেও ত্রুটি ছিলো, যা হয়েছিলো কায়েদে আজম জিন্নাহ্ এর গোয়ার্তুমির কারণে আর শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের সাথে তার বিরোধ হওয়ায়, শেরে বাংলার রুষ্ঠ হওয়ায়।

জিন্নাহ্ ক্ষমতার লোভ করে পাকিস্তানের বড়লাট হয়ে ধরা কে সরা জ্ঞান করেছিলেন। এই একই লোভ সঞ্চারিত হয় তারই উত্তরসূরি লিয়াকত আলী খান, ইস্কান্দার মির্জা, আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খানের মধ্যে। ক্ষমতা পেয়ে হিতাহিত জ্ঞানশুন্য হয়েছিলেন তারা। অন্যদিকে শেরেবাংলা, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানী সাহেব আর শেখ মুজিব অটল থেকেছেন শেষ অব্দি।

তবে সেই সময়ের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের জালে তাঁদের মতো জাঁদরেল ব্যক্তিও আটকা পড়ে কিছু ভুল করেছিলেন। যার মাশুল তাঁদের দিতে হয়েছে। শেখ মুজিব তো মাশুল দেয়ার আগে আক্ষেপ করারও সুযোগ পাননি। কথাগুলো তাঁদের সম্পর্কে জেনেই বলছি। হ্যাঁ এখন অনেকে বলবেন এরমধ্যে হাস্যকর কি ছিলো! সবটাই তো গুরুগম্ভীর আলোচনা। ধৈর্যশীল হউন।

বাংলাদেশে ঘটমান ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে যা পাওয়া যায় তার পুরোটাই হাস্যকর। একটা গণতান্ত্রিক দেশে খুনের, ধর্ষণের, দূর্নীতির যেকোন অন্যায়ের বিচার “চাইতে” হয়, রাজপথে নেমে বিক্ষোভ-সমাবেশ, মিটিং-মিছিল করতে হয় ; তারপর আশ্বাস দেয়া হয় যে বিচার হবে! বিচারকার্য অসম্পূর্ণ থেকে যায়, দুইদিন পর মানুষ ভুলে যায়। এর চাইতে হাস্যকর আর কি হতে পারে?

একটা গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধী দল বলে কোন”কিছু”র অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় না। এটা হাস্যকর না? সরকারে যে দল আছে তারা অন্য আরেকদলকে যে কোন ঘটনার জন্য বিনা দ্বিধায় দোষারোপ করে, সেই দলও আবার পাল্টা সরকারকে দোষারোপ করে। এটা হাস্যকর না! দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে অথচ মানুষ অন্নের অভাবে, অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। দেশের মন্ত্রী, এমপি,ফুলে ফেঁপে বড়লোক হয়ে ওঠারা, বিভিন্ন দলের মাথারা বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন। কারণ তারাই তো দেশে প্রচুর অপদার্থ ডাক্তার তৈরি করেছেন আর এটা তারা জানেন।

একটা দেশের সরকারব্যবস্থা কেমন হলে সেই দেশের শিক্ষার্থীরা, স্কুল-কলেজের বাচ্চারা রাজপথে আন্দোলনে নামে? সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হয়? মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয়?

আবার আন্দোলন চলাকালীন বুক ফুলিয়ে বলা হয় যে, “অমুক দল সরকারে থাকায় কথা বলতে দেয়!” এটা হাস্যকর না? সরকার কি কারো বাপের সম্পত্তি? কথা বলার অধিকার আমাদের দেয় আমাদের সংবিধান। ‘৭২ এর সংবিধান।

ও আরো তো আছে। শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষিতের হার বাড়ছে। ভালো কথা। ভুরিভুরি এ-প্লাস পাচ্ছে। আরও ভালো কথা। কিন্তু শিক্ষিত হচ্ছে কি? মানুষ হচ্ছে কি? বুয়েটে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইত্যাদি সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলোতে চান্স পাচ্ছে। বেশ তো ভালো। কিন্তু কি শিখছে? পাঠ্যপুস্তক কি শেখাচ্ছে আমাদের? অমানুষ হতে? ছাত্ররাজনীতির নামে দলীয়করণ চলছে, মতের অমিল হলে মানুষ মারছে। হাস্যকর না?

একজন উপাচার্য মন্ত্রীদের বাড়ি বাড়ি দৌড়ে বেড়ায়, সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের নায্য কথা না মেনে অজুহাত দিতে থাকে, ছাত্রছাত্রীদের গালাগাল দেয়, তাদের নায্য দাবী অগ্রাহ্য করে পেটোয়া বাহিনী লেলিয়ে দেয়! হাস্যকর না? আরও অনেক অনেক কিছু বলার রয়ে গেছে। এই যে যা কিছু ঘটছে সবটাই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। এরা পাকিস্তানিদের পথে হাটছে। ভাবছে চেতনাকে কাজে লাগিয়ে উৎরে যাবে। তবে নেচার’স জাস্টিস বলে একটা কথা আছে। ক্ষমা প্রকৃতি করবে না। কথায় আছে না পিপীলিকার ডানা গজায় মরিবার তরে।

এই মুহুর্তে আমাদের এমন একজনকে দরকার যার ওপর ভরসা করে মানুষ অটল অবিচল থাকবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সিদ্ধান্তে। এই ফ্যাসিজমের অবসান ঘটানোর সাথে সাথে আরও একটা কাজ আছে, এই কলুষিত সমাজের বিনির্মাণ। মানুষকে মনুষ্যত্ব কি সেটা বোঝানো। কারণ আমরা সত্যিই বড্ড অমানুষ হয়ে গেছি। এই বাংলাদেশ ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের অভীষ্ট বাংলাদেশ নয়, সেই বাংলাদেশ আমাদের গড়তে হবে। কেউ যদি বলেন এও তো চেতনার কথা। ভাইরে ভাই চেতনার চৈতন্য হওয়া দরকার কিন্তু চেতনাধারী, হেলমেটধারী হওয়ার কথা তো বলি নাই।

হয়তোবা এটাই আমার শেষ লেখা। আমার আইডি তাহারা ডিসেবল করে দিতে পারে,আমাকে গুম,খুন,ধর্ষণ করতে পারে। যেকোন কিছুই হতে পারে। আমি বরিশালের মানুষ, শেরেবাংলার মানুষ। মুই কোনও হালার বাহুরেও ডরাই না।

আর বন্দর নগরী চট্টগ্রামে পড়াশোনা শুরু।
যতদিন বেঁচে আছি এমনই লিখে যাবো।

ন ডরাই।

ইরাবতী চৌধুরী  বিসিআইসি কলেজের  একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী

Exit mobile version