Site icon মুক্তিপত্র

তিরিশ টাকার গল্পটা

“দ্যাশের জন্য ৩০ টাকা দিতে পারুম।” 
– সামাদ ভাই হাতের টাকাগুলো আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন। কার্জনের সামনে নামতেই সামাদ ভাইয়ের কথাটা শুনে এতোটাই অবাক হয়েছি যে কয়েক মিনিট লোকটার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলাম। বাঁ হাত ভাঙা লোকটা আমার পরিচিত, শাহবাগ, টিএসসি,কার্জন, ফুলার রোডের এদিকেই রিকশা চালান। প্রায় বছর চারেক চিনি সামাদ ভাইকে। ইউনিভার্সিটির প্রথম দিক থেকে। আজ শাহবাগে বাস থেকে নামতেই সামাদ ভাই জোর করে রিকশায় উঠতে বললেন। শেষ দেখেছি তাকে মাস পাঁচেক আগে। সেদিনের পর আজ দেখা। মানুষটা মনেও রেখেছে! রিকশায় উঠতেই জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছি,কি করছি? আমিও বলতে থাকলাম। কথায় কথায় কথা এলো মুক্তকন্ঠের। সামাদ ভাই জানেন আমরা মানুষের জন্য এবং মানুষের প্রয়োজনে তাদের পাশে থাকার, তাদের কথা বলার জন্য কাজ করি। এই উত্তপ্ত, চাপা বিক্ষুব্ধ সময়ে বিকল্প গণমাধ্যম হয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি। জানালাম, আমরা জনগণের অনুদানে চলি, আমাদের স্পন্সর জনগণ। দেশের জন্য কাজ করি, দেশের মানুষ যতটুকু সাহায্য করে তাই সাহস জুগিয়ে যায়, অনুপ্রেরণা দেয় কাজ করার। তারপর কতো কথা হলো, সামাদ ভাই নিজের কথা বললেন। টানাপোড়েনের ছোট্ট সংসার তার। তবুও দিন কেটে যায়… 
“ কি হইলো আফনের আসিফ ভাই? আমি গরীব মানুষ, ট্যাকাও কম, নিবেন না?”- অনেকটা অভিমানের সুরেই বললেন। 
আমি মুচকি হেসে বললাম, “আমরা টাকা মেরে খেয়ে ফেললে?”
উনি উত্তর দিলেন, “বদ হজম হইবো… দ্যাশের ভালোর জন্য দেয়া ট্যাকা খাইয়া শান্তি পাইবেন কেমনে?”
এর মধ্যে অন্য প্যাসেঞ্জার পেয়ে গেলেন সামাদ ভাই। আমার হাতে টাকাগুলো গুঁজে দিয়ে একটা সুন্দর হাসি দিয়ে রিকশা নিয়ে চলে গেলেন। আমি হাতের টাকাগুলো সযত্নে মানিব্যাগে রেখে ফুলার রোডের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। এই সেদিনও ভাবছিলাম, অনেক মানুষ তো নিরাশ করে, বলে, ‘কি হবে!! কিচ্ছু বদলাতে পারবি?’ আজ সেই মানুষগুলোকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে ইচ্ছে করছিলো, ” ওই যে যাচ্ছেন রিকশা চালিয়ে, ওই মানুষটা বিশ্বাস করেন সুদিন আসবে। আর এই বিশ্বাসের জয় হবেই।” নিজেকে নিজেই বলতে লাগলাম,”থামা যাবে না। এই মানুষটির মতো আরও অনেকের বিশ্বাস, ভরসার মান তো রাখতেই হবে। সূর্যের দিন আসবেই।”

লেখা শেষ করে ডায়েরি বন্ধ করে পিরিচ দিয়ে ঢাকা চায়ের কাপটা নিয়ে বারান্দায় ইজিচেয়ারে বসলেন আসিফ। আকাশে একফালি চাঁদ, রাস্তায় স্ট্রিট ডগের আনাগোনা এখনও আছে। রাত পোহালেই আবার নতুন সূর্যোদয়ের সাথে নতুন দিনের কর্মব্যস্ততা শুরু।

( একটা সত্য ঘটনার আলোকে লেখা । নাম দুটো আর সামাদ ভাইয়ের দুটো কথা সত্য ঘটনার থেকে হুবহু তুলে দেয়া। বাকিটা কল্পনা… … … )

লেখক : ইরাবতী চৌধুরী 

আপনিও অনুদান পাঠাতে পারেন এই লিংকেঃ muktiforum.org/donate

Exit mobile version