Site icon মুক্তিপত্র

অধিকার কেউ দেয় না, অধিকার আদায় করে নিতে হয়

A protester waves a Bangladeshi flag during a demonstration by the students of Dhaka University in Dhaka, Bangladesh on April 9, 2018, to protest against the quota system used in government recruitment, which they claimed were "discriminatory". At least 100 people were injured as police clashed with students. (Photo by Khandaker Azizur Rahman Sumon/NurPhoto via Getty Images)

সরকার ব্যাবস্থায় বসে থাকা লোকজন ও তাদের সংস্পর্শে থাকা লোকজনের হাতে জিম্মি সারাদেশের মানুষ। জনকল্যান ও সঠিকভাবে দেশ পরিচালনায় নিয়োজিত বেতনভুক্ত সরকারী কর্মচারী হতে মন্ত্রী পর্যন্ত সকলেই যেন বনে গেছেন দেশের রাজা, আর তাদের কাছে জনগণ প্রজার আসনে বসে তাদের কুর্নিশ করা ও প্রতিনিয়ত তাদের হাস্যকর বক্তব্য হজম করে হাততালি দেয়ার পুতুল মাত্র।

জনগণের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা ৫টি মৌলিক চাহিদা পূরণের চিন্তা বাদ দিয়ে নিজেদের সকলপ্রকার উন্নয়নে ব্যস্ত সকলে।

খাদ্য পণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি অতিষ্ঠ জনজীবন, বস্ত্রহীন দরিদ্র শীতার্ত জনগোষ্ঠী, বাসস্থানহীন রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা নদীভাঙ্গা মানুষ অন্যদিকে ভাসানচরে শরনার্থীদের জন্য তৈরী হয় আধুনিক গ্রাম , সুচিকিৎসা আজ অর্থদিয়েও মেলেনা আর দরিদ্রদের জন্য তো চিকিৎসা বিলাসিতার পর্যায়ে চলেগেছে, শিক্ষাখাত পুরোটাই ধ্বংস হয়েগেছে তৈরী করছে বছর বছর রেকর্ড সংখ্যক মেধাহীন এপ্লাস নামক সার্টিফিকেট মাত্র।

দৈনিক খুন, ধর্ষণ, গুম, অপহরণ, রাস্তায় দেয়াল, মৌসুমে বাগানের গাছ কেটে নষ্ট করা, খামারে বিষ ঢালা, সড়কে বছর প্রতি ১২০০০ লাশ, প্রবাসে সম্ভ্রম হারানো নারী শ্রমিক দেশে ফিরে গোপনে, দেশে শেয়ারবাজার কেলেংকারিতে সব হারিয়ে গায়ে আত্মগোপনে থাকে উদ্দোক্তা, নির্বাক আলু চাষী, ধান বেচতে না পারা কৃষক, কাজ হারানো গার্মেন্টস কর্মীর নিরব কান্না… এই তালিকার কোন শেষ নেই।

তবুও দেশের প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। একের পর এক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প আসছে। ফ্লাইওভায়ে ছেয়ে যাচ্ছে বিভাগীয় শহরগুলো। বালির বাঁধ তৈরী করে দেয়া হচ্ছে সব নদী ভাঙন এলাকায়। খরচ বাড়িয়ে রডের স্থলে বাঁশ দিয়ে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরী হচ্ছে সরকারি দালান। আসছে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যায়বহুল মেট্রোরেল, বিআরটি। বিশ্বের সবচেয়ে ব্যায়বহুল সড়ক পথ। হাজার কোটি টাকা বাৎসরিক লোকসানে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথে নামছে শতকোটি টাকার নতুন আমদানিকৃত কোচ। লাখ টাকার বালিশ, চাদর, পর্দা কিংবা মেডিকেলের বই এর টেন্ডার। খাল, পুকুর, নদী খনন, বাঁধ নির্মান, লিফট ব্যবহার প্রশিক্ষনে বিদেশ ভ্রমন। এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে অদম্য গতিতিতে উন্নয়নের গাড়ি।

চারিদিকে নিরব হাহাকার, তবু চারপাশ নিরব নিশ্চুপ জনতা।

পেঁয়াজের কেজি ৩০০/- ছুঁয়েছে, বাজারে ৫০ টাকা কেজিতেও তেমন কোন সবজি পাওয়া যায় না। মাংস খাওয়া এখন বিলাসিতা। তবু আজ সকলে নিরব।

অন্ন চাই বস্ত্র চাই, বাঁচার মত বাঁচতে চাই।” বলে কোন স্লোগান নেই।

গনতন্ত্রের আগাছায় চাপাপড়ে গেছে নূর হোসেনের কবর।

সংগ্রাম, প্রতিবাদ, বিপ্লব নামক শব্দগুলো আজকের প্রজন্ম ইতিহাসের বইয়েই শুধু পড়ে।

বুদ্ধিজীবি আজ কেজি দরে টক-শোতে পাওয়া যায়।

নতুন প্রজন্ম আজ পরিবর্তন চায়, তবে সেটা ঘরে বসে।

দিন শেষে খোঁড়া যুক্তি এদেশে বাক স্বাধীনতা নেই, জীবনের নিরাপত্তা নেই। অপশাসনের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না আইসিটি আইন নয়তো আবরারের মত পিটিয়ে লাশ বানিয়ে দেয়ার ভয়। এ এক উট পাখির জীবন।

ভীত সন্ত্রস্ত সবার অপেক্ষা কবে আসবে কোন কান্ডারী হবে বিপ্লব।

চে গুয়াভারা বলেছিলেন “বিপ্লব কোন পাকা আপেল নয়, গাছ হতে পড়বে আর আপনি খাবেন। গাছ হতে আপেল পেড়ে আনার ব্যবস্থা করার নামই বিপ্লব”

রেসকোর্স সেদিনও আবদ্ধ ছিল শাসক দলের হাতে তবু মানুষের ঢল নেমেছিল বন্দুকের নল উপেক্ষা করে।

ইতিহাসে বুলেটের সামনে বুক পেতে দেয়া জাতীর তরুনেরা আজ আইসিটি আইন, লাঠিপেটা টিয়ারশেলের ভয়ে ভীত। এসব দেখে চলছে হায়নাদের লুটপাটের হাসি।

কারো এই বোধ নেই আমরা যদি এক পা বাড়াই পূঁজিবাদী চাটুকারের দল তিন পা পিছিয়ে যাবে। আমরা শুধু একে অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে, স্ব-অবস্থান হতে নেই কোন প্রতিবাদ।

১৮ কোটি মানুষের দেশ গুটিকয় লুটেরার হাতে জিম্মি। সবাই এগুলে কয়জনকে ওরা থামাবে? কয়জনকে পিটিয়ে মারবে? তার আগেই পদদলিত হয়ে মিশে যাবে মাটিতে।

বঙ্গবন্ধু যেদিন স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছিলেন সেদিনও এদেশে মতপ্রকাশের বাকস্বাধীনতা ছিল না তাই বলে আমাদের স্বাধীনতারর স্বপ্ন চাপা পড়ে যায় নি। মানুষ ঘরে বসে থাকেনি। তবে এখন কেন এই অনাচারে চুপ করে থাকা?

মুখ খুলুন, লিখুন, প্রতিবাদ করুন সকল অন্যায় আর শোষণের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদের অসংখ্য মাধ্যম রয়েছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে চুপকরে থাকার মানেই হল সত্য মতপ্রকাশে স্বদিচ্ছার অভাব।

কারন অধিকার কেউ দেয় না, অধিকার আদায় করে নিতে হয়।

রায়হান মুক্তিফোরামের একজন সদস্য। চাইলে আপনিও সদস্য হতে পারেন এই ঠিকানায়ঃ muktiforum.org/join

Exit mobile version