Site icon মুক্তিপত্র

দিনলিপিতে এইসব দিনরাত্রির দীর্ঘশ্বাস, ফাল্গুনের রক্তিম অর্ঘ্য

বুকশেলফ এ ধুলো জমেছিলো, ধুলো ঝেড়ে ঠিকঠাক করতে গিয়ে একটা পুুুরনো ডায়েরি খুঁজে পেলাম। একটা পাতায় বুকমার্ক দেয়া রক্তজবার পাপড়ি দিয়ে। দিনলিপি লেখার এই অভ্যেস এখনও আছে। পাতাটা উল্টে লেখাটা পড়লাম,

তারিখ: ১৩ ফাল্গুন,১৪২৫

“অবয়ব”

ছায়াময় আবির্ভাব তার,
মাথা উঁচিয়ে থাকা দালানের চেয়েও উঁচুতে,
ওই আকাশের ইশ্বরের কাছে একটাই প্রশ্ন ছিলো করার।
শুনতে পাচ্ছো, আটচল্লিশ বছর বয়সী কঙ্কালের আহাজারি?
আমার শহরের জীর্ণ প্রদীপের সলতে,
শিখার ধারক হয়ে আছে বহুদিন।
অক্সিজেন ফুরিয়ে আসছে প্রতিদিন,
শত চিৎকারে সেই অবয়ব,
ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে।
শেষ বিকেলের ছায়ামূর্তি মৃত্যুরেখা আঁকে।
সন্ধ্যার আলো আঁধারে সেদিন হঠাৎ তাঁকে দেখলাম,
অরবিন্দদা না? হ্যাঁ তাইতো, একবার ভাবলাম,
ডাকবো? তারপর একে একে যা ঘটে গেল!
তারপর আর ডাকতে পারিনি,
অরবিন্দদার পিছু নিতেই মনে হল
সামনে থেকে অনুদি হাতে একটা বই নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।
অনেককে দেখলাম সেদিন,
বীরু,ক্ষুদি,শফিক,রুমি, সুশীল, অনন্ত
ওদের সবাইকে। কারোর যেন কোন তাড়া নেই,
ধীর পদবিক্ষেপে হাটঁছে।
রাজপথে কেউ লক্ষ করেনি
তাদের ধীর, প্রশান্ত
অথচ দৃপ্ত, অগ্নিঝরা শপথের বন্ধন।
সবাই এই শতাব্দীর ব্যস্ততায় বিলীন।
কারইবা সময় আছে,
এই ভীড়ে আজ সবাই একত্রে থেকেও একা হয়ে গেছে।
সেই মিছিলের পিছু পিছু এসে দুটো বাচ্চাছেলেকে
অপরাজেয় বাংলার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে
থমকে গিয়েছিলাম। সুবী, খোকা!
কাছে গিয়ে বললাম,”কাদঁছো কেন? বোকা!”
বলল,” তুমি আছো তো,তোমার মতো আরো অনেকে।
আর কাদঁতে হবে না আমাদের, দেখো”
সত্যি! বঙ্গসন্তান আর কত?
কত লজ্জা, কষ্ট দেবে তাঁদের তোমরা?
হাতজোড় করছি আবারো, জাগো বাঙালি,
বাঙালির রক্ত কথা বলুক আবার।
তোমরা ভুলে গেলেও ইতিহাস তো ভুলবেনা
আবার ফিরিয়ে দেবে সেই স্বাক্ষর
ইতিহাস আপোষ করবেনা।

এইসব দমবন্ধ হয়ে আসা দিনরাত্রির দীর্ঘশ্বাসেেই হয়তো জন্ম এই কথামালার। ফাল্গুনের জন্য এও এক রক্তিম অর্ঘ্য।

লেখক: ইরাবতী চৌধুরী

Exit mobile version