Site icon মুক্তিপত্র

করোনা ভাইরাসের সময়ে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য

পুরো বিশ্বকেই করোনা ভাইরাস বেশ বড় রকমের নাড়া দিয়ে দিয়েছে। সবার মনের মাঝেই ঘুরপাক খাচ্ছে নানা ধরনের অনিশ্চয়তা এবং আশঙ্কা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনার এই আক্রমণকে আখ্যায়িত করেছেন মহামারী হিসেবে। কেউই সঠিকভাবে বলতে পারছেন না সামনে ঠিক কি অপেক্ষা করছে মানবজাতির জন্য। অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে করোনার এই আক্রমণ হচ্ছে আমাদের প্রজন্মের জন্য ৯/১১ এর আক্রমনের মত আবার অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে করোনা ভাইরাস ৯/১১ থেকেও বেশি ভয়ংকর কারন ৯/১১ সারা বিশ্বের প্রতিটি স্তরকে একসাথে এত ব্যাপকভাবে নাড়া দিতে পারেনি।
দেশের স্কুল-কলেজ এবং অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সবাইকে বলা হয়েছে নিজের ঘরে অবস্থান করতে। কোন প্রয়োজন ছাড়া নিজ ঘর থেকে বের হলে নেওয়া হবে আইনি ব্যাবস্থা। এছাড়াও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, বারবার হাত ধোওয়া, পরিছন্নতার বিষয়গুলো সঠিকভাবে মেনে চলা আর তার উপর রয়েছে সবসময় একটি আতঙ্ক কখন কোথা থেকে কি খবর আসে। নিজেদের প্রাত্যহিক জীবন যাত্রায় এমন হঠাৎ পরিবর্তনে যেখানে বড়দের মানসিক স্বাস্থ্য সামাল দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে, সেখানে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি মাথায় না রাখলেই নয়।
অনেক বাবা-মাই হয়ত ভাবছেন শিশুদেরকে করোনা ভাইরাসের কথাটি তারা কিভাবে বুঝিয়ে বলবেন, কিভাবে এই অস্থিতিশীল সময়ে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখবেন। চলুন যেনে আসি কিছু পদক্ষেপের কথা যার মাধ্যমে এই অস্থিতিশীল সময়ে আপনি আপনার শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য কিছুটা হলেও ঠিক রাখতে পারবেন।

১। সংযুক্ততা
– যেহেতু স্কুল বন্ধ দিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সব ধরণের বাইরে যাওয়ার প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, এমন অবস্থায় শিশুদের বাসায় বসে হাপিয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই চেষ্টা করুন আপনার শিশুকে তার বন্ধুদের সাথে সংযুক্ত রাখতে। সেটা হতে পারে ফোনে কথা বলার মাধ্যমে বা ভিডিও কলিং এর মাধ্যমে।

২। সক্রিয়তা
– চেষ্টা করুন আপনার শিশুকে শারীরিকভাবে কিছুটা সক্রিয় রাখতে। যেহেতু স্কুল বন্ধ এবং বাইরে গিয়েও খেলা সম্ভব নয়, চেষ্টা করুন ঘরের মাঝেই তাদের জন্য কিছুটা যায়গা খালি করে দিতে যেন সেখানে সে খেলতে পারে। প্রয়োজনে আপনিও শিশুর সাথে খেলুন এবং শিশুকে ঘরের কাজে আপনাকে সাহায্য করতে উদ্বুদ্ধ করুন। এতে শিশুর সাথে সাথে আপনার সময়ও ভালো কাটবে।

৩। লক্ষ্য রাখুন
– সর্বপ্রথম আপনি নিজে মাইন্ডফুল এবং বর্তমানে থাকুন। নিয়মিত আপনার শিশুটির সাথে কথা বলুন। সে কি ভাবছে, কি অনুভব করছে তা জানার চেষ্টা করুন। চারিদিকে অনেক খবরের ছড়াছড়ি চলছে। জানার চেষ্টা করুন আপনার শিশুটি কোন ভুল তথ্যের জন্য আতঙ্কিত বা বিভ্রান্ত হচ্ছে না তো। তাকে বর্তমান পরিস্থিতি তার উপযোগী করে বুঝিয়ে বলুন।
৪। শিখতে থাকুন
– একবিংশ শতাব্দীর বাবা-মাদের নিয়ে অন্যতম অভিযোগ ছিল তারা তাদের বাচ্চাদের সঠিকভাবে সময় দিতে পারে না। পরিস্থিতি যতটাই ঘোলাটে হোক না কেন, এখন কিন্তু সময় এসেছে এই অভিযোগকে ঘুচিয়ে দেবার! এ সময়টাকে কাজে লাগান। আপনার বাচ্চাদের সময় দিন। তাদেরকে নতুন জিনিস শেখান, এবং একসাথে নতুন জিনিস শিখুন। একসাথে বই পড়ুন, গান গান অথবা নতুন কোন বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শিখুন। এটি আপনার শিশুর মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখবে এবং আপনাকেও সাহায্য করবে দুশ্চিন্তা ভুলে থাকতে।

৫। সাহায্য করুন
– এই সময়টাই শ্রেষ্ঠ সময় যখন আপনি আপনার শিশুকে অন্যকে সাহায্য করার তাৎপর্য হাতেকলমে শেখাতে পারবেন। আপনার আশেপাশে দরিদ্র ও অসহায় কেউ থাকলে তাদের সাহায্য করুন এবং শিশুকে এর গুরুত্ব বুঝিয়ে বলুন। বাসায় বয়স্ক কেউ থাকলে তাদের সাহায্য করার ব্যাপারে অনুপ্রেরনা দিন। শিশুকে এই করোনা ভাইরাসের ব্যাপারটিকে মানবিকভাবে বুঝিয়ে বলুন। এটি আপনার শিশুকে ভবিষ্যতে একজন দয়ালু এবং ভালো মানুষ হতে সাহায্য করবে।
সবশেষে বলতে চাই করোনা ভাইরাস আমাদের সকলের জন্যই একটি চ্যালেঞ্জ স্বরূপ। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বর্তমানে শিশুদেরও আমাদের সাথে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। শিশুমন স্বাভাবিকভাবেই কৌতূহলী। তাই শিশু ভয়পাবে ভেবে তার থেকে সত্য লুকাবেন না, তাকে বিষয়গুলো তার উপযোগী করে বুঝিয়ে বলুন। না হলে সে অন্যকোথাও থেকে ভুল তথ্য জেনে বিভ্রান্ত ও আতঙ্কিত হবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিশুকে আপনার সাথে নিন। এটি তাকে তার ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত করে তুলবে।

Exit mobile version