Site icon মুক্তিপত্র

জনগণ কি ক্ষমতাসীনে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে ?

রবিবার (গতকাল) দুপুরে এক ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান এনিয়ে টানা দুইদিনে করোনায় কোনো আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়নি।

গতকাল মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইইডিসিআরসহ ল্যাবগুলোতে ১০৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে কারও শরীরে করোনা পজেটিভ পাওয়া যায়নি। ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বর্তমানে দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রয়েছেন ৪৮ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৫ জন।

খবরটি নিঃসন্দেহে আনন্দের। কারন করোনা মোকাবেলায় আমরা কিছুটা হলেও সফল। জ্বি সফল বলছি এই জন্য কারন সারা বিশ্বে করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর প্রতিটি দেশেই এত এত পদক্ষেপ নেয়ার পরও যেখানে নতুন সংক্রামন আর মৃত্যুর মিছিল থামাতে হিমসিম খাচ্ছে সেখানে গত দুই দিনে আমাদের দেশে নতুন কোন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় নি। আর এখন পর্যন্ত মারা গিয়েছেন পাঁচজন। জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে ৮ম এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক থেকে বিশ্বে ১২তম স্থানে থাকা একটি দেশের জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো সংবাদ।

এখন আসি ভিন্ন প্রসংঙ্গে, কোভিড-১৯ সংক্রামনের শুরুর দিন হতে আজ পর্যন্ত আমাদের দেশের সাধারন মানুষের কছে আইইডিসিআরের তথ্যের গ্রহনযোগ্যতা কতটুকু?

শুরুর দিক থেকেই করোনা সংকট মোকাবেলায় শতভাগ প্রস্তুতির কথা বলা হলেও একের পর এক অব্যবস্থাপনার চিত্র প্রতিনিয়ত ফুটে উঠছে প্রতিদিন। শুরু থেকেই টেষ্টিং কিট সংকট, পিপিই সংকট, মাস্ক সংকট, হাসপাতাল অব্যবস্থাপনা, প্রবাস ফেরত লোকজনের হোম কোয়ারেন্টাইন অব্যবস্থাপনা, যানবাহন চালু রেখে ছুটি ঘোষণা, শহর গুলোর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় অব্যবস্থাপনা, সব কিছু মিলিয়ে রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনার রোল মডেল বলা যেতে পারে।

যে কাজ গুলো রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে হওয়ার কথা ছিল সেই কাজগুলো শুরু করতে হয়েছে বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠনকে। বিভিন্ন স্থানে জিবাণুনাশক ছিটানোর কাজ থেকে শুরু করে দরিদ্র মানুষের জন্য ত্রান বিতরন সব জায়গায় প্রথমে কাজ শুরু হয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যাক্তিগত উদ্যোগে।

এবং বর্তমানে সবচাইতে মূল যে বিষয়টি স্বাস্থ্যসেবা সেটিও চলছে চরম অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে। কোভিড-১৯ সংক্রামনের লক্ষণ নিয়ে অনেকেই যোগাযোগ করলেও অভিযোগ আসছে তাদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না আইইডিসিআর হতে অন্যদিকে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিতদের জন্য সঠিক নির্দেশনা ও সুরক্ষা কিটের (পিপিই) অভাব থাকায় সাধারণ সর্দি-কাশি জ্বর গলাব্যাথা ও শ্বাসকষ্টের রোগী সহ সকল সাধারন রোগে আক্রান্তদেরও সেবা দিতে দ্বিধা দন্দে পড়ে যাচ্ছেন। যার ফলে সাধারন রোগীরাও পড়ছেন চরম ভোগান্তিতে।

আর টেষ্ট না করায় কোভিড-১৯ সংক্রামনে লক্ষন থাকা কয়েক জনের মৃত্যুতে পরিস্থতিকে আরো সমালোচনার মুখে ফেলে দিচ্ছে।

হতে পারে আইইডিসিআরের তথ্য শত ভাগ সঠিক, হয়ত কোভিড-১৯ এর লক্ষণ নিয়ে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের কেউই কোভিড-১৯ সংক্রামনের শিকার নয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সাধারণ জনগনের কাছে তথ্য গুলো বিশ্বাস যোগ্যতা পাচ্ছে না। এমনকি স্বয়ং স্বাস্থ্য মন্ত্রীও ভিডিও বার্তা দিয়ে প্রমান করতে হচ্ছে তিনি কোভিড-১৯ আক্রান্ত নয়।

কিন্তু কেন এই অবিশ্বাস?

কারনটা বের করা খুব কঠিন কিছু নয়। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে টানা তৃতীয় বারের মত ক্ষমতায় থাকা ক্ষমতাসীনেরা ঘটে যাওয়া অসংখ্য ঘটনা, দূর্ঘটনা, খুন, হত্যা, ধর্ষণ, দূর্ণীতি, লুটপাট আড়াল করতে বার বার মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। এবং প্রতিবার এই মিথ্যার আশ্রয়, তথ্য নিয়ন্ত্রন, ভিন্নমত দমনের মত বিষয় গুলো এত নগ্ন ভাবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম গুলোতে সাধারনের সামনে এসে পড়েছে যে ক্ষমতাসীনদের শতভাগ সত্য কথাটিও এখন মানুষ “মিথ্যাবাদী রাখাল বালকের” গল্পের ন্যয় অবিশ্বাস করছে।

সাধারন জনগণের কাছে তাদের সত্য-মিথ্যা কোনটাই গ্রহনযোগ্যতা পাচ্ছে না। কিন্তু বর্তমান বৈশ্বিক দূর্যোগকালীন সময়ে এটি একটি ভয়াবহ বিপদের লক্ষণ।

কারন বর্তমান দূর্যোগ মোকাবেলায় সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে রাষ্ট্রীয়ভাবে তথা ক্ষমতাসীনদের। তাদের ভুল পদক্ষেপ গুলো সমালোচনার যোগ্য কিন্তু তাদের সঠিক পদক্ষেপও যদি সাধারনের কাছে অগ্রহনযোগ্য হয় তবে বিপর্যয় অতি সন্নিকটে। কারন রাষ্ট্রের দুটি অন্যতম উপাদান হল জনগন এবং সরকার, এই দুটি উপাদানে যদি বিশ্বাসহীনতা জন্মনেয় তবে সেটি কোন রাষ্ট্রের জন্যই ভালো কিছু বয়ে আনে না। আর বিশ্বাস যোগ্যতা ফেরাতে জনগনের কাছে সঠিক ও সত্য তথ্য উপস্থাপন জরুরী। অথছ আইইডিসিআর প্রেস কনফারেন্স বাদ দিয়ে ভিডিও বার্তা পাঠানোর পদ্ধতি বেছে নিয়েছে যেখানে আইইডিসিআর এর প্রতিনিধিদের প্রশ্নোকরার কোন সুযোগও নেই। অন্যদিকে গত সপ্তাহে দেখলাম গুজব প্রতিরোধের নামে দেশের ইলেকট্রনিক মিডিয়ার উপর আরো নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।

সব মিলিয়ে তথ্য গোপন, তথ্য ফিল্টার করে প্রকাশের যে প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে তা দেশ ও দেশের জনগন ও বর্তমান ক্ষমতাসীনের মধ্যেকার যে অবিশ্বাসের সম্পর্কের জন্ম দিয়েছে সেটি কারো জন্যেই সুখের হবে বলে মনে হয় না।

সকলের মাঝে শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।

আবু রাইহান, মুক্তিফোরামের একজন সম্পাদক।

Exit mobile version