Site icon মুক্তিপত্র

আহারে ক্ষুধা!

যখন চিকিৎসা সংকট মোকাবেলার প্রস্তুতি নেয়ার দরকার ছিল, তখন তা না নিয়ে ক্রমাগত ধোঁকা আর মিথ্যা বলে গেছে বড় নেতা ও মন্ত্রীরা।

এখন খাদ্য সংকট ও অনাহার মোকাবেলার সময়, অথচ ত্রাণের চাল চুরিতে ব্যস্ত ছোট নেতারা। বড় নেতার পাশাপাশি পাতি নেতার পকেট ভরতে ইচ্ছা করেই ক্ষুধার অন্ন এবং বাঁচার পুষ্টি সাপ্লাই একদল দলীয় চোরের হাতে তুলে দিয়ে সরকার গুদামজাত করণের বন্দোবস্ত করেছে। আওয়ামীলীগের পলিটিক্যাল সায়েন্স এই লুটেরা কাঠামোর উপরই দাঁড়িয়ে আছে। এখানে সে ক্ষুধা প্রতিরোধের আগে নিজের টিকে থাকার ডিফেন্স আরো শক্ত করার আয়োজন করছে।আহা রাজনীতি!

বাঙালি তেতাল্লিশে, চুহাত্তরে
শুধু ক্ষুধায় মরেছে, শুধু দুর্ভিক্ষে!
হ্যাঁ বেপারোয়া ক্ষুধায় মরেছে।
আমরা ভুলে যাই বারবার।

ছবি-© S. Latif Hossain

লকডাউনের এই ক্ষুধার শহরে সারাদিন পর এক প্যাকেট খাবার পেয়ে খেয়ে শুকরিয়া মোনাজাত করছেন এক অতিদরিদ্র বৃদ্ধ,যিনি লকডাউনের আগে গ্রামে বাড়িতে ফিরতে পারেননি, যার কোন সঞ্চয় নেই।

অনাহারী মানুষের এই সংখ্যা সাড়ে ছয় কোটিতে পৌঁছাতে পারে।

১। সোয়া এক কোটি অতি দরিদ্র সরাসরি সপ্তাহের পরেই অনাহারে পড়েছেন।

২। পৌনে তিন কোটি দরিদ্র লকডাউনের ২য় সপ্তাহ থেকেই খাদ্য সংকটে পড়েছেন।

৩। সোয়া পাঁচ কোটি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক জনতার অন্তত অর্ধেক সঞ্চয় শেষে ৩য় সপ্তাহ শেষে বা এক মাসের মধ্যেই সংকটে পড়তে যাচ্ছেন।

৪। প্রতিষ্ঠানিক খাতে কাজ হারানো ১০ লাখের অন্তত অর্ধেক সঞ্চয় ফুরিয়ে সংকটে পড়তে পারে।

৫। আছেন বেকার যুবক, আছেন ফ্রি ল্যান্সার, টিউশানি করে বাঁচা মানুষ, আছেন হকার রিক্সা শ্রমিক, পরিবহণ, নির্মাণ শ্রমিক, দিনমজুর, ভাসমান শ্রমিক যারা স্বচ্চল ছিলেন, কারো কাছে হাত পাততেন না, যারা সামাজিক সুরক্ষা ভাতা পান না।

৬। এমনকি সংকটে পড়বেন ৭৮ থেকে ৮৪ লক্ষ মানুষ যারা সামাজিক সুরক্ষার ভাতা পান, কারণ ৬০০ টাকায় স্থানীয় নেতার, প্রশাসনের লোকের ক্ষুধা মিটিয়ে বাকি যা থাকে তা দিয়ে পুরা পরিবারের মাসের ক্ষুধা মিটে না। এমনকি পুরা ৬০০ টাকার ভাতাও পুরা পরিবারের সবার ক্ষুধা মেটাতে অপ্রতুল।

৭। এমনকি ফসলের অপেক্ষায় থাকা কৃষক, ঠিক ফসলের আগে যার কাজ নেই ও মৌসুম চেঞ্জ হওয়ায় অন্য কৃষি উৎপাদনও কম, এমনিকি এদিকে বাজারেও দর নেই। এই কৃষকই অনাহারের মুখে পরতে যাচ্ছে, যারা ঠিক গতবছরেই রেকর্ড ফলন ফলিয়েছেন কিন্তু ধান বা ফলনের ন্যায্য দাম পাননি। এখন সঠিক বিতরণের অভাবে উৎপাদন কারী শ্রমিক কৃষকই অনাহারে!

আহারে ক্ষুধা!
আহারে শ্রম!
আহারে জীবন!

মার্চ থেকে ডিসেম্বর
উন্নিশ শ চুহাত্তর,
তেতাল্লিশের মন্বন্তর,
কেন আসে ঘুরে ঘুরে
লঙ্গরখানা ডাস্টবিনে
অনাহারী মানুষের সন্তান
কাক ও কুকুরের মত
খাবার খোঁজে!

ফাইজ তাইয়েব আহমেদ, লেখক ও গবেষক

Exit mobile version