Site icon মুক্তিপত্র

করোনায়ও যদি এভাবে ডাক্তারদের হত্যা করি, তাহলে আমাদের চিকিৎসা দিবে কে?

সিসিটিভির ফুটেজে দেখলাম একজন ডাক্তারকে সবাই মিলে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। কথাটা যত সহজে বললাম, তারচেয়ে বেশি সহজে নিরীহ মানুষটিকে মেরে ফেলেছে হায়েনারা, বর্বর পশুর দলেরা। বনের হিংস্র পশুর পেট যখন ভরা থাকে, ক্ষুধা থাকে না তখনও সে কোনো মানুষের প্রতি এতটা হিংস্র হয়ে আক্রমণ করে না।

জাতি হিসেবে এ দেশের মানুষরূপী পশুরা কতটা অসভ্য এবং ফ্রাস্টেটেড সেটা বুঝবেন তখন, যখন ডাক্তারের গায়ে অবলীলায় হাত তোলা যায়, হাত তোলাটাকে বিশাল একটা ক্রেডিটের কাজ মনে করা হয় এবং দলবল মিলে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়।

হাসপাতালে অক্সিজেন থাকে না, দোষ ডাক্তারের। হাতপাতালের চেয়ার টেবিল ভাংগা, দোষ ডাক্তারের। হাসপাতালে শত শত রোগীকে প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য পরিমাণ ডাক্তারকে সামলাতে হয়, দোষ ডাক্তারের।
একজন রোগী হাসপাতাল যেতে পথেই মারা গেলো, দোষ ডাক্তারের। সুতরাং, এ দেশে যে কারো মৃত্যুর জন্য সকল দোষই ডাক্তারের।

অথচ করোনার সময়টুকুই খেয়াল করেন। এ পর্যন্ত কতজন ডাক্তার মৃত্যুবরণ করলেন। যে আইসিইউ’র জন্য হাহাকার, সে আইসিউ প্রধান হিসেবে ৫ টা মেডিকেল কলেজ প্রধানের মৃত্যু হলো। অবস্থাটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে কয়দিন পর আইসিইউ পাবেন কিন্তু আইসিইউ চালানোর লোক পাবেন না। আর্থিক ক্ষতিপূরণ হিসেবে পরিবহন মালিকরা বাস ভাড়া বাড়িয়ে দিলেন। গার্মেন্টস শ্রমিকরাসহ বিভিন্ন খাতের লোকজন অনুদান পেলেন। ডাক্তাররা প্রাইভেট চেম্বারও অফ করে দিয়েছেন অন্য রোগীদের ঝুঁকি বিবেচনায়, অনেক হাসপাতালে দুই মাসের বেতনও আটকে আছে অনেক ডাক্তারের।

কিন্তু এসব যুক্তিতর্ক দিয়ে লাভ নেই। কারণ যে সমাজে মানুষের চেয়ে অমানুষের সংখ্যা বেশি, সে সমাজে সুস্থ মস্তিষ্কের লড়াইটা মাঝেমধ্যে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে৷ ভারতের হাতি মারাতে যাদের প্রাণটা হু হু করে কেঁদে উঠে, তাদের অনেকেই ডাক্তার মারার ঘটনা এড়িয়ে যায়। আত্মহত্যার জন্য যাদের এত মায়াকান্না, তাদেরও এটা জানা প্রয়োজন সুস্থ মানসিকতার কোনো মানুষ আত্মহত্যা করতে যায় না। তার জন্যেও একজন ডাক্তারের পরামর্শের দরকার পড়ে৷

সামাজিক নিরাপত্তায় ডাক্তারদের চেয়ে এখন একজন ধর্ষক, দূর্নীতিবাজ, লুটপাটকারী, মানবপাচারকারীর জীবন এ দেশে তুলনামূলক বেশি নিরাপদ। আবার আপনারাই বলবেন, কেনো ডাক্তাররা গ্রামে যায় না, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসে না। কারণ সেখানে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তার মেম্বারবাহিনী নিয়ে, ওমুক পাতি নেতা তমুখ গ্রুপ নিয়ে এসে ডাক্তারদের জীবননাশ করতে দুবার ভাববে না।

করোনা দুর্যোগেও যদি এ শিক্ষা না নেন, বেঁচে থাকতে আসলে কি প্রয়োজন? মনে রাখবেন, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রাজনৈতিক সংগঠনের অফিসের চেয়ে হাসপাতালের প্রয়োজন বেশি৷ হাজার হাজার রাজনীতিবিদদের চেয়ে সমাজে একজন ডাক্তারের প্রয়োজন বেশি। এই বোধটুকু যদি নিজের ভিতর জাগ্রত না হয়, তবে ডাইনোসরের মতো আপনার বিলুপ্ত হওয়াও সময়ের প্রয়োজন…

নিহত ডা. রাকিব
Exit mobile version