Site icon মুক্তিপত্র

মন্দের চেয়েও মন্দ ঋণ, এবং সরকারের ডাটা চুরি

ইলস্ট্রেশনঃ ডেইলি স্টারের রিপোর্ট থেকে নেয়া

আজকে ডেইলি স্টারের প্রথম পেইজে বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডাটা চুরির একটা বড় প্রমাণ এসেছে।

“Bad loans twice as large ” হেডলাইনে আইএমএফের কান্ট্রি রিপোর্টের বরাতে প্রকাশিত হয়েছে যে বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে মন্দ ঋণ এতদিন ধরে দাবি করে আসা এক লক্ষ দশ হাজার কোটি নয় বরং দুই লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকা।

এই রিপোর্টের ফলে এত বাংলাদেশের ব্যাঙ্কিং সেক্টরের মন্দ ঋণ, প্রায় দ্বিগুণ মানে এত দিন ধরে জানা ১১% মন্দ ঋণ, ২২% হয়ে গেল।

এই রিপোর্টের ফলে, বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদেরা সরকারের ডাটা চুরির আর একটা বড় প্রমান পাবেন তারা বাংলাদেশ যে একটি অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে সেইটা নিয়ে লম্বা লম্বা আর্টিকেল লিখবেন।

কিন্ত, বাংলাদেশের ব্যাঙ্কিং সেক্টরের ব্যাড ডেবট যে, ২.২ লক্ষ কোটি টাকার উপরে এইটা যে একটা খবর, হইতে পারে, এইটা আমাদের অনেকের জন্যে একটা খবর।

কারণ বিগত ছয় মাসে অন্তত দুইটি সেমিনারে, সরকারি ডাটা এনালাইজ করে আমরা আলোচনা করেছি, বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে মন্দ ঋণ ২ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা পার হয়েছে ।

আই এম এফের কাউন্ট্রি রিপোর্টের অনেক আগেই আমরা দেখিয়েছি কোর্টের কেইসে আটকানো ৮০ হাজার কোটি টাকা , নন কালেক্টিভেবল বলে ঘোষিত , ৩০ হাজার কোটি টাকা , বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক দেখাচ্ছে না, যে গুলো যোগ করলে মোট মন্দ ঋণ, ২ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাবে।

একই সাথে আমরা বলেছি, এর সাথে যোগ হবে ইতোমধ্যেই অবলোপন করা আরো ৫০ হাজার কোটি টাকা।

ফলে আমরা বিগত ছয় মাস ধরেই বলে এসেছি বাংলাদেশ সরকারের দাবিকৃত এক লক্ষ দশ হাজার কোটি টাকার মন্দ ঋণের বিষয়টি মিথ্যা।মোট মন্দ ঋণ, ২ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা। এবং যার সাথে ৫০ হাজার কোটি টাকা যোগ করলে, মোট মন্দ ঋণ হবে, ২৭০ হাজার কোটি টাকা।

ইন্টারেস্টিংলি , আলোচনা দুটোতে, আমি বলার আগেই উপস্থিত দর্শকদের কয়েকজন হাই কোর্টে ৮০ হাজার কোটি টাকা আটকে থাকার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তারমানে এই ৮০ হাজার কোটি টাকার বিষয়টা একটা পাবলিক নলেজ্। যারা বাংলাদেশের পাবলিক সেক্টরের ফাইন্যান্স ফলো করে তারা সকলেই জানেন যে, ১১০ হাজার কোটি টাকায় ৮০ হাজার কোটি টাকা কোর্টের ইঞ্জাংশন করা টাকা দেখানো হচ্ছেনা।

এই আলোচনায় আমরা আরো বলেছি, মন্দ ঋণ হিসেব করতে হলে আমাদেরকে আরও একটি ডাটা হাতে নিতে হবে, তা হচ্ছে ডাউটফুল এবং সাব-স্ট্যান্ডার্ড লোন। যেটা পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট মতে বর্তমানে ৮০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

ফলে আমরা মোট হিসাব পাচ্ছি,

এক লক্ষ ১০ হাজার কোটি -স্বীকৃত।
৮০ হাজার কোটি টাকা- হাইকোর্টের ইনজেকশনে আটকানো।
৩০ হাজার কোটি টাকা- নন কালেক্টিবেল বলে বিবির স্বীকৃত।
৮০ হাজার কোটি টাকা -ডাউটফুল এবং সাব-স্ট্যান্ডার্ড যা এখনো খেলাপি হয় নাই, কিন্ত আগামিতে খেলাপি হতে পারে।

ফলে আমাদের হিসেবে মোট মন্দ ঋণ দাঁড়াচ্ছে – ৩ লক্ষ কোটি টাকা।যা মোট ঋণের ২৫%। এর সাথে অবলোপিত ৫০ হাজার কোটি টাকা যোগ করলে, মোট মন্দঋণ হবে ৩৫০ হাজার কোটি টাকা যা মোট ঋণের ২৯%।

তারমানে আইএমএফের রিপোর্টে যে ২ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকার খবর পেয়ে ডেইলি স্টার আজকে ডাটা চুরির রিপোর্ট করল সেই রিপোর্টে এখনো ৬০ হাজার কোটি টাকা আন্ডার রিপোর্টেড ।

এইখানে যে আলাপগুলো করলাম তাতে কোন তথ্য গোপন নেই। সব ডাটা পাবলিকলি অ্যাভেইলেবল। কিন্তু এই যোগফল গুলো করার জন্য ডেইলি স্টারের আইএমএফের রিপোর্টের শরণাপন্ন হতে হয়। আমাদের কথা বিশ্বাস হয় না। এবং আইএমএফের বর্তমান রিপোর্টেও যে ভুল আছে এইটা বোঝার মত জ্ঞান ও তাদের নাই।

পাব্লিকলি এভেলেবল ইনফরমেশান থাকার পরেও, আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতে এই ডাটা চুরি নিয়ে এতো দিন ধরে চিল্লা চিল্লি করার পরেও, বিদেশীরা না বলা পর্যন্ত যাদের কাছে দিনের আলোর মত দেখা যাওয়া সত্য – সত্য বলে মনে হয়না আঙ্গুল চোষাই তাদের জন্যে উপযুক্ত কাজ। আঙ্গুলে মধু লাগানো থাকলে, আঙ্গুল চুষতে মজাই লাগার কথা।

লেখকঃ জিয়া হাসান একজন স্বাধীন লেখক ও গবেষক

Exit mobile version