Site icon মুক্তিপত্র

আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের কথা কি শুনবে বাংলাদেশ?

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রচলিত একটি অন্যতম আখ্যান হল যে আদিবাসীরা ছিল আমাদের স্বাধীনতার বিরোধী। অথচ কয়েকজন রাজার কর্মকান্ডের জন্যে প্রায়শই হারিয়ে যায় সাধারণ আদিবাসীদের বীরত্বগাঁথা। আমরা যেমন করে বুঝতে চাইনা বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের তীব্র তোড়ে হারিয়ে যাবার ভয় পেয়ে বাংলাদেশের বিরোধিতা করার যুক্তি, ঠিক তেমন করেই আমরা এড়িয়ে যাই বাংলাদেশের জন্যে অবাঙ্গালি জনগোষ্ঠীর সংগ্রামের কথা। হতে পারে আমরা এমনটা করি কেননা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় কল্পনায় আদিবাসী কোন চেহারার ঠাঁঁই নেই, আবার এমনও হতে পারে যে আমরা সামগ্রিকভাবেই আমাদের ইতিহাস নিয়ে উদাসীন–তাই দশ টাকার চটি জাতীয়তাবাদী ইতিহাস নিয়েই আমরা সন্তুষ্ট থাকি। ইতিহাসের খাঁজে ফোকরে যেসব গল্প লুকিয়ে থাকে সেসব শুনতে পাই না।

ঠিক সেজন্যেই আমাদের মূলধারার অধিকাংশ গণমাধ্যমের নজর এড়িয়ে গেছে বীর আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা চীন সাংমার মৃত্যু সংবাদ। বলতে পারেন আরেকজন মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর খবর প্রকাশ করবার জায়গা আমাদের সংবাদপত্রগুলোর নেই। তবে সংবাদপত্রের যদি সত্যিই জাতীয় চেতনায় আন্দোলন ঘটানোর কোন দায়িত্ব থেকে থাকে, তবে অবশ্যই এই সংবাদটি এবং তার সাথে মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসী অংশগ্রহণের ইতিহাস নিয়ে খবর করা উচিত ছিল। অতীতে হয়তো এমন করা হয়েছে, তবে যখন আপনি বহুদশকের জাতীয়তাবাদী ইতিহাসকল্পের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, তখন প্রতিটি সুযোগে এই হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসকে তুলে ধরতেই হবে।

তবে মূলধারার সংবাদপত্রের কাছ থেকে এমনটা আশা করাও বাতুলতা। এখনও তাদের অনেকে আদিবাসীদের আদিবাসী বলে সম্বোধন করতে পিছপা হন। প্রতিক্রিয়াশীলদের আক্রমণে পড়তে হবে বলে তারা নানান অপমানজনক নামে তাদের সম্বোধন করেন। ওদিকে সরকারের চাপ তো আছে। আদিবাসীদের আদিবাসী বলে ডাকলে যে তাদের আন্তর্জাতিক আইনে বর্ণিত অধিকারটুকু দিতে হয়। তাই আমাদের সংবাদপত্রে বারবার আসে, বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নাই। সেই ডামাডোলে হারিয়ে যায়–বাংলাদেশে বহু আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা আছে।

রয়ে যায় শুধু চীন সাংমাদের আক্ষেপ, “জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করলাম। যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করলাম কিন্তু স্বাধীন দেশেও জাতি হিসাবে আদিবাসী স্বীকৃতি পেলাম না। ‘উপজাতিই’ রয়ে গেলাম।”

মুক্তিফোরামের পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা চীন সাংমার আত্মার সদ্গতি কামনা করছি।

মুক্তিফোরামের পক্ষে এই সম্পাদকীয়টি রচনা করেছেন অনুপম দেবাশীষ রায়

Exit mobile version