Site icon মুক্তিপত্র

প্রসঙ্গঃ ছাত্র রাজনীতি কি এবং কেন?

চেষ্টা করব খুব অল্প ভাষায় ছাত্র রাজনীতি সম্পর্কে একটা ওভারওল সার সংক্ষেপ বলতে। প্রথমেই বলে নিচ্ছি, বক্তব্যগুলো সম্পূর্ন আমার ব্যাক্তিগত মতামত। কোন মনিষীর সংজ্ঞা কিংবা তথ্যসূত্র নয়। অতএব দ্বিমত থাকাটাকেই আমি অনিবার্য এবং সত্য ধরে নিচ্ছি।

ছাত্র রাজনীতি

মোট কথায় ছাত্র রাজনীতি, ছাত্রদের রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি,জাতীয়তা, অর্থনীতি ,মানবিক বোধ, জাতীয়তাবোধ, সুশিক্ষিত, স্বশিক্ষিত এবং দেশপ্রেমিক করে গড়ে তোলার একটা প্ল্যাটফর্ম। যেখানে সুষ্ঠু ভাবে এসব চেতনার চর্চা হবে।

ছাত্র রাজনীতি কেন?

কারণ সমাজের অনিয়ম, নিপীড়ন, বৈষম্য এবং নানা বৈরি পরিবেশে ছাত্র তথা তরুণ সমাজ যত দ্রুত এগিয়ে আসতে পারে, তা বায়োজৈষ্ঠ্যদের পক্ষে সম্ভব নয়। যখনই একটা মানুষ ছাত্রত্ব তথা তরুণ বয়স পার করে পরিবারিক ও সামাজিক জীবনে প্রবেশ করে তখন তার নানাবিধ পিছুটান থাকে যেটা ছাত্রদের অত বেশী থাকে না কিংবা থাকলেও তারা অধিকাংশ সময় তা গুরুত্ব না দিয়ে দেশ এবং দশের, মানুষ এবং মানবের বৃহত্তর স্বার্থ নিয়ে চিন্তা করে। তাই একজন ছাত্রের ব্যাপারে যেসব গুন এবং আদর্শের কথা বললাম তা যদি চর্চা করার সুযোগ করে দেয়া যায় তাহলে দেশের এবং মানুষের দুঃসময়ে এই গোত্রটি দাঁড়িয়ে যাবে। অন্যায় ও নিপীড়নের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর হবে একেকজন সচেতন ছাত্র। তাই ছাত্র রাজনীতি নামক প্লাটফর্মের যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। ছাত্র রাজনীতি যারা করবে তারা সমাজের অনিয়ম নিয়ে কথা বলবে, তারা ছাত্র এবং দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হবে, তারা অরাজকতা প্রতিরোধ করবে এবং দেশ ও সমাজ যেভাবে চলা উচিত সেভাবে না চললে সেই সমাজ সুধরানোর দায়িত্ব গ্রহন করবে। সমাজ যদি ঘুনে ধরে যায়, তবে বিপ্লবের মাধ্যমে সমগ্র সমাজ ভেঙে দিয়ে নতুন সমাজ বিনির্মানের জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে ঝাপিয়ে পড়বে। ইতিহাসের পাতা ঘাটলে এর হাজার হাজার উদাহরণ আপনারা পেয়ে যাবেন তাই আমি আর কষ্ট করে দিচ্ছি না।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ছাত্র রাজনীতিঃ

বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির কথা আসলেই আমরা অতীতকে টেনে আনি। কিন্তু এর চেয়ে হাস্যকর বিষয় হলো আমরা শধু অতীতই টেনে আনি না, আমরা সুদূর অতীত ঘাটি। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য একাত্তর পরবর্তী সময় বাংলাদেশে ছাত্ররা যে রাজনীতি করেছে অথবা তাদের দিয়ে যে রাজনীতি করানো হয়েছে সেটা কোন কালেই ছাত্ররাজনীতির মধ্যে পড়ে না। সেটাকে বলা যায় আদর্শহীন ক্ষমতালোভী সন্ত্রাসনির্ভর রাজনীতি। তারমানে ছাত্র রাজনীতির সুফল সর্বশেষ সঠিকভাবে বাংলাদেশ পেয়েছিল আজ থেকে ৪৮ বছর আগে। অনেকে বলবে নব্বইয়ের গণতন্ত্র পুরুরুদ্ধারের আন্দোলনেও তো ছাত্রদের ভূমিকা সর্বোচ্চ ছিল। আমি বলব ভুল বলছেন। যে ক্ষমতা নির্ভর রাজনীতি ছাত্রদের দিয়ে করানো হচ্ছিল সেটাতে যখন ভাটা পড়ে স্বৈরশাসনের হাতে দেশ চলে যায় তখন ক্ষমতালিপ্সু রাজনীতিকেরা আমার ক্ষমতা পুরুরুদ্ধার জন্যে ছাত্রদের ব্যাবহার করেছে খালি। তারপরো যদি সেটাকেও ছাত্র রাজনীতির অর্জন হিসেবে ধরে নেই তারপরেও বলা যায় এরপর ২৯ বছরে বাংলাদেশে সুষ্ঠ কোন ছাত্র রাজনীতি হয় নি। ছাত্রদের বিভিন্ন দল নির্বাচনের সময়ে কেবল ক্ষমতা দখলের মাধ্যম হিসেবে ব্যাবহার করেছে। ক্ষমতা যাওয়া, এবং বিরোধীরমতকে বাধাগ্রস্থ করার জন্যে পেটোয়া বাহিনী হিসেবে ব্যাবহৃত হওয়া ছাড়া ছাত্র রাজনীতি আর কোন সুফল এনে দিতে পারে নি নব্বই পরবর্তী সময়ে। এর মাঝে এই ছাত্র রাজনীতির নামে ক্ষমতার রাজনীতি করে কেউ কেউ অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন। এটাকে হাস্যরসের খাতিরে এক ধরনের সুফল হিসেবে ধরে নেয়া যায়। কিন্তু সত্যিকারের ছাত্র রাজনীতি যাকে বলে সেটা নব্বই পরবর্তী প্রজন্ম দেখতে কিংবা করতে ব্যার্থ হয়েছে কিংবা তাদের করতে দেয়া হয় নি। কিন্তু এই রাজনীতির নামে গত ত্রিশটি বছর দেশে এক ধরনের ত্রাসের, সন্ত্রাসের, হত্যার, টেন্ডারবাজী-চাদাবাজির রাজত্ব কায়েম হয়েছে। আর তখন ক্ষমতাসীন কিংবা বায়োজৈষ্ঠ্য রাজনীতিবিদরা চাইলেও এর পরিবর্তন করতে পারেন নি বা করেন নি, কারন এই ছাত্রদের ব্যাবহার করেই তাদের ৫ বছর পর পর ক্ষমতায় আসতে হয়। তাই ছাত্রদের হাতে তুলে দেয়া হয় এক ধরনে অসীম ক্ষমতা। আর যার প্রেক্ষাপটেই এই ক্ষমতার লোভে স্কুল ছাত্ররা ছাত্র রাজনীতির নামে হত্যার-সন্ত্রাসের রাজনীতিতে ঢুকে পড়েছে এবং এই সব অনাকাংক্ষিত ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে। তাই বর্তমানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন কি না সেটা নিয়ে আমার কোন মতামত নেই । তবে দেশের মানুষের এখন ভাবার সময় এসেছে এই রাজনীতির নৈতিকতা এবং স্থায়িত্ব নিয়ে কারণ আপনি রাষ্ট্রের কাছে এই ভাবনার দায়িত্ব তুলে দেয়া মানে শেয়ালের কাছে মুরগী বন্ধক দেয়ার মত ঘটনা।
ভাল থাকবেন।
নীলাদ্রি – মুক্তিফোরামের একজন কলামিস্ট
Exit mobile version