ঘড়ির কাঁটা চারটে পেরিয়ে তখন সাড়ে চারটেয়।

নিরস যানজটের নাগপাশে তখনও বেশিরভাগ সদস্যই আটকে। লেটলতিফ উপাধি এড়াতে হবে। তাই মুক্তিফোরামের আরাফ ইবনে সাইফ, আসিফ ইমরান আর ফটোগ্রাফার সাজ্জাদ ভাইসহ চারজন নক করলেন দরজায়।

সহাস্যে দরজা খুলে দিলেন কাঙ্খিত জন। বরাবরের মতোই আপাদমস্তক কালোপোশাক। হাসি দেখে আশ্বস্ত হলাম যে ‘দেরী’ মার্জনীয়।

দেয়ালে দেয়ালে ঝোলানো গিটার আর অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র জানান দেয় এটা তাঁর কাজের জায়গা। সাথে ল্যাপটপ আর কি-বোর্ড দেখে মনে হলো কাজেই ব্যস্ত ছিলেন। তবু সবকিছু একপাশে ফেলে রেখে আমাদের দিকে মন দিলেন।

আমরাও যথারীতি পরিচয়পর্ব সেরে নিলাম। যাত্রা শুরু হলো আলাপচারিতার দিকে। মুক্তিফোরামের সাথে পরিচয়টা এভাবেই ঘটলো ফারজানা ওয়াহিদের। যাকে এককথায় সবাই ‘সায়ান’ নামেই চেনেন।

ছোট চুল, কালোপোশাকের পাশাপাশি জীবনমুখী গানও যার পরিচয়ের অংশ হয়েছে। মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছেন গভীর কথার গানের মাধ্যমে। কখনো কটাক্ষ করেছেন সমাজকে কখনোবা গানে গানেই সংশোধন চেয়েছেন রাষ্ট্রের ও রাজনীতির। জনমানুষের গানে পরিণত হয়েছে তার কথা ও সুর। গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে তরুণদের কাছেও। অচলায়তন ভাঙবার আহ্বান কড়া নেড়েছে ভিন্নরুচির শ্রোতাদের।

আর তাই সস্তা জনপ্রিয়তার দিকে না ঝূঁকে মন দিয়েছেন ভাবার্থমূলক গানে। এমন একজন ব্যক্তিত্বের জীবন দর্শন কাছ থেকে জানতে চাওয়ার সুযোগ খুব একটা মেলে না। নৈতিক ও দেশপ্রেমের আদর্শে উজ্জীবিত ব্যক্তিত্বদের নিয়ে পরিকল্পনা ছিলো মুক্তিফোরামের।

শুরুতেই ফারজানা ওয়াহিদ সায়ানকে ‘মুক্তিপদক’ দেয়ার মাধ্যমে সে লক্ষ্যে একধাপ এগিয়ে গেলো মুক্তিবাদ, বহুত্ববাদ ও জনপন্থী রাজনীতির আদর্শে লড়ে যাওয়া সংগঠনটি।

সন্ধ্যা হতে না হতেই অনুপম দেবাশীষ রায়, রুম্মান তার্শফিক, মারুফ আহমেদ চলে আসেন। পরপরই চলে আসেন নবীন ফোরামের আরিফ সোহেল। সবাই একসাথে হবার পরই শুরু হয় পদক আর সনদ দেয়ার পালা। ফটোগ্রাফারের মুহুর্মুহু ফ্ল্যাশ আর আনন্দের হাততালি। সেইসাথে সেলফির হিড়িক।

সবশেষে Indulgences-এর পক্ষ থেকে কেক কেটে আরেকদফা হাততালি। সাথে অনুপমের হেড়ে গলার গান। মুক্তিফোরামের সাথে সায়ানের প্রথম পরিচয়েই যে জমে ক্ষীর হয়ে যাবে তা ভাবনায় ছিলো না।

এবার সবার উপস্থিতিতে আলাপচারিতা জমে ক্রমেই রূপ নিলো আড্ডায়। দেশ ও দশের বিষয়ে নিজের অবস্থানের কথা বলেছেন সায়ান। নিজের গানের মতোই একদম ভীতিহীনভাবে বলে গেছেন আদর্শের কথাগুলো। যেমন দেখতে চান নিজের দেশ আর রাষ্ট্রকে। সেইসাথে আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে মুক্তিফোরামের হাত ধরেই ‘সূর্যের দিন আসবেই’। অনেকক্ষণ নানান প্রশ্ন আর আলাপচারিতায় সময় যখন শেষের পথে। তখনই আসরের মোড় ঘুরে গেলো।

মুক্তিফোরামের আগমনকে উপলক্ষ করে আলাপি সায়ান গিটার আর কণ্ঠে জ্বলে ওঠেন দ্রোহে। গেয়ে ওঠেন __ স্বাধীনতার পক্ষশক্তি তোমার কাছে কই আমার যত স্বাধীনতা সেসব এখন কই আমরা নাকি দেশের মালিক, তোমরা নাকি দাস করেছি ভুল সেসব কথায়, করেছি বিশ্বাস।

ঘড়ির কাঁটা টিকটিক করে।

একটা নতুন আশাবাদ নিয়ে চকচক করে ওঠে অনেক তরুণ চোখ। যেখানে শেষ সেখানেই শুরু করবার বাসনা পেয়ে মনে মস্তিষ্কে নিউরন। সাথে যোগান দেয় সায়ানের গান। আবারো দেখা হবে কোন দ্রোহ মন্ত্রের মঞ্চে। হয়ত বক্তায় নয়তো শ্রোতায়। তবু সূর্যের দিন আসবেই।

আসিফ আদনান মুক্তিফোরামের ভারপ্রাপ্ত আয়োজন সম্পাদক

Share.

মুক্তিফোরাম একটি মুক্তিবাদী, বহুত্ববাদী এবং জনপন্থী সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যে গড়ে ওঠা সংগঠিত গণমঞ্চ। এর লক্ষ্য হলো নতুন ধরণের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক চর্চা নির্মাণ। নোংরা হিসেবে রাজনীতির যে রূপকল্প এদেশের মানুষের কাছে নির্মাণ করা হয়েছে, সেটিকে চ্যালেঞ্জ করতে চায় মুক্তিফোরাম। আবার যেসব একক আদর্শ (যেমন বামপন্থা-ডানপন্থা) বা পরিচয়ের রাজনীতি (সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, জাতিবাদ) দিয়ে জনগণের সংহতি ও বৈচিত্র্য হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে তার একটি এন্টিডোট হয়ে ওঠাও মুক্তিফোরামের প্রকল্প।

Leave A Reply