বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের দায়বদ্ধতা শুধুমাত্র শ্রেণীকক্ষে ছাত্রদেরকে পাঠদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং সমাজের উন্নয়নে নিরন্তর গবেষণা ও গুণগত মানসম্পন্ন প্রকাশনা নিশ্চিত করাও তাঁর একটা মূল দায়িত্ব। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি নীতি মান সম্মত গবেষণা ও প্রকাশনা সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেনি, যা বৈশ্বিক জ্ঞানরাজ্যে আমাদের অবস্থানকে সংখ্যাগত ও গুণগত উভয়ক্ষেত্রে পিছিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশের গবেষণার সংখ্যাগত তুলনামূলক চিত্র:
‘স্কোপাস’ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি বৃহত্তম তথ্যব্যাংক, যারা স্ব-স্ব ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা মূল্যায়নকৃত (পিয়ার-রিভিউড) গবেষণা পত্রের দেশ ভিত্তিক একটি উপাত্ত প্রকাশ করে। স্কোপাসের হিসেবে ২০২১ সালে ভারতের গবেষকরা প্রকাশ করেছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৮৪৯ টি গবেষণাপত্র, পাকিস্তানের গবেষকরা ৩৫ হাজার ৬৬৩ টি, আর বাংলাদেশের গবেষকরা প্রকাশ করেছেন মাত্র ১১,৪৭৭ টি। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয় ‘স্টেট অফ নলেজ’ বা বৈশ্বিক জ্ঞান রাজ্যে সংখ্যাগত দিক থেকে আমাদের অবদান কোন পর্যায়ে আছে!
জার্নাল এর গুণগত মান নির্ণায়ন করা হয় কিভাবে?
একটি জার্নাল বা সাময়িকীর অবস্থান নির্ণয়ের সর্বাধিক প্রচলিত উপায় হচ্ছে ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর বা সাময়িকীটির প্রভাব মানযাচাই। ওই সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা পত্রগুলো অন্য গবেষক কর্তৃক কতবার উদ্ধৃত হয়েছে তার সাইটেশন সংখ্যা গড়ের মাধ্যমে গণনা করা হয়। একটি সাময়িকীর ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর যত বেশি সেই সাময়িকীটিকে তত বেশি মর্যাদাপূর্ণ বলে ধরে নেয়া হয়। কারণ এর মাধ্যমে জ্ঞানের পরিধি বা কান্ট্রিবিউশন টু নলেজ অনেক ইম্প্যাক্টফুল বলে ধরে নেয়া হয়। যদিও বিষয়ভেদে ‘ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর’ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, যেমন: চিকিৎসা বিজ্ঞানের -‘ অ্যা ক্যান্সার জার্নাল ফর ক্লিনিসিয়ান্স’ এর ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর ৭৭ দশমিক ৬৪ যেখানে মার্কেটিং এর বিখ্যাত ‘জার্নাল অফ মার্কেটিং’ এর ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর ২ দশমিক ১৩ (WOS, 2020)।
বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত কয়েকটি ডাটাবেস যেমন: ‘ওয়েব অফ সাইন্স’, ‘এবিএস’, ‘এবিডিসি’, ‘স্কিমাগো’ স্কোপাস ইত্যাদি জার্নাল সমূহকে তাদের ইম্প্যাক্টের উপর ভিত্তি করে সিরিয়াল করে থাকে (প্রতিটা ডাটাবেসের র্যাঙ্কিং পদ্ধতি ভিন্ন)। স্কিমাগো র্যাঙ্কিং এর ক্ষেত্রে জার্নাল গুলোকে চারটি ভাগ করেছে, যেমন: ‘কোয়ার্টার ১’ বা ‘কিউ-১’, ‘কিউ-২’, ‘কিউ-৩’ এবং কিউ-৪।
‘কিউ-১’,এর জার্নালগুলো সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ, এর পরে কিউ -২, কিউ-৩ এবং সবশেষে কিউ-৪ এর অবস্থান।
বাংলাদেশের প্রকাশনার গুণমানের তুলনামূলক চিত্র:
২০২০ সালে বাংলাদেশের ১০টি জার্নাল স্কিমাগোর র্যাঙ্কিং এ স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ৩ টি ‘কিউ-৩’ এ এবং ৬টি ‘কিউ-৪’ এ, এবং একটি কোনো কোয়ার্টারে নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৬২২০টি জার্নাল স্কিমাগোতে স্থান পেয়েছে যার মধ্যে প্রায় ২৪০০ টি জার্নাল ‘কিউ-১’ মানের।
আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের ৪৬৯ টি জার্নাল স্কিমাগো তে স্থান করে নিয়েছে যার মধ্যে ‘কিউ-১’ এ অবস্থান পেয়েছে ১৪ টি। দক্ষিণ এশিয়ার অপর দেশ পাকিস্তান হতে স্থান পেয়েছে ৬১ টি জার্নাল আছে যার মধ্যে ‘কিউ-২’ এ ২ টি, ‘কিউ-৩’ এ ২০ টি, ‘কিউ-৪’ এ ৩৫ টি, এবং ৪ টি জার্নাল কোনো র্যাঙ্কিং ছাড়া স্থান পেয়েছে।
যেখানে পাকিস্তানের ৬১ টি জার্নাল রয়েছে, সেখানে আমাদের অবদান মাত্র ১০টি! এছাড়া ‘কিউ-১’ বা ‘কিউ-২’ মানের আমাদের কোনো জার্নালই নেই।
বিষয় ভিত্তিক অবদান:
স্কিমগোর জার্নাল র্যাঙ্কিং এ স্থান পাওয়া বাংলাদেশের জার্নালগুলার মধ্যে আছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ৫টি, প্রকৌশল বিজ্ঞানের ২ টি, ফার্মাকোলজির ১ টি, উদ্ভিদবিদ্যার ১ টি এবং অর্থনীতির ১ টি। যে সকল জার্নাল স্কিমগোর র্যাঙ্কিং এ স্থান পেয়ে দেশের জ্ঞানের বিকাশে অবদান রাখছে তাদের এডিটোরিয়াল বোর্ড সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। আশা থাকবে যে গবেষকগণ ‘কিউ-৩’ এবং ‘কিউ-৪’ এর জার্নালগুলাকে পর্যায়ক্রমে ‘কিউ-২’ এবং ‘কিউ-১’ পর্যায়ে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। প্রকাশনার উদ্ধৃতি বাড়ানোর জন্য সুপ্রচলিত পদ্ধতির প্রয়োগ জরুরি (যেমন- গবেষকদের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম গুলোতে ধারণ করা, দেশি বিদেশী গবেষকদের সাথে নেটওয়ার্কিং এবং যৌথ প্রকাশনা এবং রিভিউ পেপার প্রকাশ করা ইত্যাদি)। এই বিষয়ে ইউজিসিও বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে বিভিন্নভাবে উৎসাহ এবং প্রণোদনা দিতে পারে।
সীমাবদ্ধতা কোথায়?
স্কিমগোতে স্থান পাওয়া বাংলাদেশের জার্নাল গুলোর বিষয় পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, বর্তমান সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে পর্যাপ্ত গবেষণা হচ্ছে না।
প্রথমত, দেশের রপ্তানির ৮০% আসে পোশাকশিল্প থেকে- কিন্তু পোশাকশিল্প সম্পর্কিত বাংলাদেশি কোনো জার্নাল স্কিমাগোতে নেই। বস্ত্র, পোশাক, পোশাকবিজ্ঞানের উপরে অন্যান্য দেশের অনেক জার্নাল স্কিমাগোতে আছে- কিন্তু এখানে আমাদের অবদান না থাকাটা পরিতাপের বিষয়।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের জিডিপির ৫৫% আসে সেবা খাত থেকে, কিন্তু সেবা খাতের কোনো জার্নাল স্কিমাগোতে নেই।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশর জিডিপির ১৩% আসে কৃষিখাত থেকে কিন্তু ‘বাংলাদেশ জার্নাল অফ বোটানি’ ছাড়া অন্য জার্নাল স্কিমাগোতে নেই। কৃষি প্রধান দেশ হিসেবে আমাদের আরো অবদান থাকা জরুরি।
চতুর্থ, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে কম্পিউটার বিজ্ঞান, আইন এবং ব্যবসা অনুষদের প্রাধান্য থাকলেও, এই বিষয় ভিত্তিক অনুষদের অবদান স্কিমাগোতে নেই (জার্নাল অফ ইসলামিক ইকোনমিক্স, ব্যাংকিং এন্ড ফাইন্যান্স ছাড়া)।
মানসম্পন্ন গবেষণার প্রতিবন্ধকতার কারণ এবং এর প্রতিকার:
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রচলিত নিয়োগ এবং পদোন্নতি পদ্ধতি শিক্ষকদের প্রকাশনা বিমুখতার অন্যতম কারণ বলে মনে করি। সম্প্রতি ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বমানে উন্নত করার নিমিত্তে একটি সমন্বিত নিয়োগ এবং পদোন্নতি নীতিমালা তৈরি করছে। বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর নিয়োগ দুর্নীতির কারণে এ ধরণের নিয়োগ নীতির প্রস্তাবনা এবং বাস্তবায়ন জরুরি।
ইউজিসির প্রস্তাবিত নীতিমালায় তিন বছর শিক্ষকতার পর প্রভাষককে সহকারী অধ্যাপক পদে যেখানে এমফিল থাকলে দুই এবং পিএইচডি থাকলে এক বছর পর পদোন্নতির প্রস্তাবনা করা হয়েছে (সূত্র- দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ০২/১৭/২০২২)।
এছাড়া প্রস্তাবনায় স্বীকৃত জার্নালে কমপক্ষে তিনটি প্রকাশনা থাকার কথা বলা হয়েছে। তবে নীতিমালায় পিএইচডি ছাড়াও প্রভাষক থেকে অধ্যাপক হওয়ার সুযোগ আছে।
প্রস্তাবিত এই নীতিমালার কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন।
প্রথমত, পৃথিবীর নামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি ডিগ্রীধারীদেরকেই প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের পিএইচডি করাটা খুবই জরুরি কারণ এটা অভিজ্ঞতামূলক বা ‘এম্পিরিক্যাল’ প্রক্রিয়া – যেটি বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে একটা সমস্যাকে কিভাবে সমাধানের দিকে নিয়ে যাওয়া যায় সেটা শিখায়।
এই অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে তাকে মৌলিক গবেষণা করতে সহায়তা করে। আমাদের দেশে অন্তত প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক হওয়ার জন্যে পিএইচডি থাকাটা বাধ্যতামূলক করা আবশ্যক।
এতে দেশে গবেষণার ক্ষেত্র এবং পরিধি- দুটোই বাড়বে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা সংস্কৃতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
দ্বিতীয়ত, সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী এবং পরে অধ্যাপক হওয়ার জন্যে প্রকাশনার সংখ্যা এবং লেখক হওয়ার শর্ত ছাড়াও স্কিমাগোর মতো ডাটাবেস থেকে অন্তত ‘কিউ- ৩’ বা ‘কিউ ৪’ মানের জার্নালে ২ থেকে ৪ টার মত প্রকাশনা যোগ করা জরুরি। ‘কিউ-১’ জার্নালে প্রকাশ করার মেধা এবং যোগ্যতা দুটোই আমাদের শিক্ষকদের আছে। শিক্ষকদের বড় একটা অংশ বিদেশে গিয়ে নিয়মিতভাবে ‘কিউ-১’ জার্নালে প্রকাশ করছেন। প্রকাশনার জন্যে গবেষণা বাজেটের চেয়েও প্রয়োজন মেধা ব্যবস্থাপনার সুচিন্তিত প্রয়োগ, সময়, একাগ্রতা এবং পিএইচডির শিক্ষালব্ধ জ্ঞানের প্রয়োগ।
তৃতীয়ত, উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মূলতঃ তিন ক্যাটেগরিতে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়, যেমন: ১) গবেষণা ভিত্তিক, ২) গবেষণা এবং শিক্ষকতা ভিত্তিক এবং ৩) শুধু শিক্ষকতা ভিত্তিক।
শিক্ষকদের লেকচার সংখ্যা নির্ভর করে তাদের গবেষণার উপরে। গবেষণা এবং প্রকাশনা যত বেশি শ্রেণি শিক্ষার পরিমাণ তত কম। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এই মডেল অনুসরণ করতে পারে। প্রতিটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট শতাংশ রিসার্চ ফ্যাকাল্টির নিয়োগ বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন, যাঁদের কাজ হবে স্বীকৃত এবং মানসম্পন্ন সাময়িকীতে প্রকাশনা নিশ্চিত করা। গবেষণা বরাদ্দের স্বল্পতা আছে বলে, বিশ্ববিদ্যালগুলোকে গবেষণা বরাদ্দ দেয়া ছাড়াও অল্প বাজেট ভিত্তিক রিসার্চ মেথডোলজিগুলো প্রয়োগ করে (যেমন: কেস স্টাডি, রিভিউ পেপার, এথনোগ্রাফি, নেটনোগ্রাফি, কোয়ালিটেটিভ ইন্টারভিউ, এবং শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে সার্ভে ডিজাইন) সার্বিক গবেষণা বাড়ানো প্রয়োজন।
চতুর্থ, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ নীতিতে অধ্যাপকদের প্রকাশনা করার বাধ্যবাধকতা না থাকায় তারা গবেষণায় মনোযোগ দেননা (অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া)। অভিজ্ঞতা ও বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানে অধ্যাপকবৃন্দ শীর্ষে অবস্থান করলেও পরিকল্পনাহীনতার কারণে তারা গবেষণায় মনোযোগ দেননা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদেরকেও নির্দিষ্টসংখ্যক প্রকাশনা (যেমন প্রতি ৩ বছরে ৬ টি প্রকাশনা অন্তত কিউ-৩ এবং কিউ-৪ মানের) প্রকাশ করার বিধান রাখা জরুরি। এতে উদীয়মান শিক্ষকরাও লাভবান হবেন- যৌথ প্রযোজনায় তাদের অধ্যাপকদের সাথে প্রকাশনা করতে পারবেন যেটা জ্ঞানের বিকাশ বা ‘নলেজ ট্রান্সফার’এবং বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
পঞ্চম, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হলো কী গুণমানের প্রকাশনাকে শিক্ষকদের পদোন্নতির মান হিসেবে মূল্যায়ন করবো? উন্নত বিশ্বে ওয়েব-অফ-সাইন্স, এবিএস, স্কিমাগো, স্কোপাস, এবং এবিডিসি ইত্যাদির মতো ডাটাবেসকে তাদের শিক্ষকদের গবেষণার তুলনামূলক নির্ণায়ক হিসেবে দেখে। ‘স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশনা থাকলেই হবে’-এমন প্রতিযোগিতাহীন অসম প্রকাশনা নীতি অবিবেচকের কাজ। মানহীন জার্নালের তামাশাপূর্ণ গবেষণাপত্রকে যখন ‘স্বীকৃত জার্নাল’এর তকমা দিয়ে পদোন্নতির সহজ ব্যবস্থায় মানহীন জার্নালই সার্বজনীন হিসেবে উঠে আসবে।
কার্যকরী এবং ইম্প্যাক্টফুল মৌলিক গবেষণা এবং অকার্যর্করী গুনবিবর্জিত গবেষণাকে যখন এক কাতারে ফেলা হবে তখন উদীয়মান তরুণ গবেষক মৌলিক গবেষণার প্রতি আগ্রহ হারাবেন অথবা বিদেশে যেখানে তার গবেষণার প্রকৃত মূল্যায়ন হয় সেখানে পালানোর পথ খুঁজবেন।
ষষ্ঠ, পিএইচডি’তে প্লেজিয়ারিজম (চৌর্য্যবৃত্তি) এর অসদ্ব্যবহার থেকে মুক্তির জন্যে রেফারেন্স এর সঠিক প্রয়োগ, সুপারভাইজর এবং কমিটির সাথে নিয়মিত মিটিং এবং প্লেজিয়ারিজম সফটওয়্যার এর বাধ্যবাধকতা অত্যাবশ্যক।
সপ্তম, বাংলাদেশে শিক্ষকরা প্রকাশনা করে কোনো অর্থনৈতিক পুরস্কার বা সম্মানী পান না।
(যদিও সৌদি আরব সহ কিছ দেশে প্রকাশনার কারণে সম্মানী দেয়ার রেওয়াজ আছে)।
সম্মানীতে গবেষক নিদারুনভাবে উৎসাহিত হন। ম্যানেজমেন্ট থেকে স্বীকৃতির মাধ্যমে গবেষক সমাজ তার কাজকে মূল্যায়ন করেন। সম্মানী তিন ধাপে হতে পারে। প্রথমটা প্রকাশনার পর আসে, দ্বিতীয়টা আসে উদ্ধৃতির মাধ্যমে- কিন্তু তৃতীয়টা নিশ্চিত করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারকদের। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পদোন্নতি নীতিতে মানসম্পন্ন প্রকাশনার প্রকৃত মূল্যায়নকে প্রতিষ্ঠা করা খুবই জরুরি। ইউজিসি মানসম্পন্ন প্রকাশনার জন্য পয়েন্ট ভিত্তিক র্যাঙ্কিং এর মাধ্যমে সম্মানী এবং রাষ্ট্রীয় পুরস্কার দিয়ে গবেষকদের কাজের স্বীকৃতি দিতে পারে।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালগুলোর জন্মলগ্ন থেকেই মেধাবী ছাত্ররাই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে এসেছেন, অথচ প্রকাশনায় তাদের অবদান বেশ হতাশাজনক। মেধার কমতি নেই, আছে মেধার ব্যবহার বা প্রয়োগের কমতি। এই দুরবস্থার দায় শুধুমাত্র নিয়োগ-নীতির অব্যবস্থাপনার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হবার সুযোগ নেই। বরং পরিকল্পনাহীন মানবসম্পদনীতিতেও বড় ধরণের গলদ রয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালগুলো যত দিন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ডেটাবেজ গুলোকে বাদ দিয়ে নামসর্বস্ব ‘স্বীকৃত জার্নাল’ এর পিছনে ছুটবে ততদিন পর্যন্ত মানসম্পন্ন গবেষণা বা প্রকাশনা কোনোটাই আশা করা যায় না। একাডেমিয়ায় একটা কথা প্রচলিত আছে – ‘পাবলিশ অর পেরিস’ অর্থাৎ হয় প্রকাশনা করো না হয় ধ্বংস হও।
আমরা আজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, যুগোপযোগী, প্রতিযোগিতামূলক এবং মানসম্পন্ন পদোন্নতি নীতি গ্রহণ করে সেটা ফিরিয়ে আনা যায় কিনা সেটা খতিয়ে দেখা এখন সময়ের দাবি।
ড: মাহমুদ হাসান
খণ্ডকালীন শিক্ষক, ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন কুইন্সল্যান্ড (অস্ট্রেলিয়া)