আমরা আমাদের দেশকে সিঙ্গাপুর, ভেনিস ইত্যাদি বানাতে ব্যস্ত। অথচ আমরা জাপানের উন্নতি নিয়ে কথা বললেও, জাপানের অনেক কিছুই ধারণ করতে পারি না। তাই, আমাদের জাপানের উন্নতির পাশাপাশি নিচের অনেক কিছুই চাইলে ধারণ করতে পারি। দেশকে গোছাতে পারি।

প্রত্যেক এলাকায় ছোট ছোট পুলিশ বক্স বা পুলিশ এর ছোট অফিস রাখা। এমন জায়গায় রাখা যেখান থেকে পুলিশ ভিতরে বসেই এলাকা মনিটর করতে পারে এবং কিছু হলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিতে পারে।

এতে করে কেও কোন বিচার দিতে গেলে আর পুলিশ স্টেশন এ ভিড় করতে হবে না। একালার পুলিশ বক্স, অফিসে যেয়েই জানাতে পারবে এবং একই সাথে, এলাকার সেফটির জন্য বড় ভূমিকা পালন করবে।

ট্রাফিক আইন কঠোর করতে হবে। যাবে সবাই রুল মানতে বাধ্য হয়। দরকার হলে কয়েন পার্কিং এর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যত্রতত্র পার্কিং করা বন্ধ করতে হবে এখনি।

পাবলিক ট্রান্সপোর্ট উন্নতি করা। যাতে মানুষ গাড়ির তুলনায় পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারে গুরুত্ব দেয়। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এর ক্ষেত্রে দূর পাল্লার বাস এর চেয়ে জোন অনুযায়ী বাস সার্ভিস থাকতে পারে। কোন লিডার বা বড় ভাইয়ের আন্ডার এ কোন ট্রান্সপোর্ট চলবে না। সকল তদারকি সরাসরি একটি কোম্পানি এবং সরকারের সংস্থা এর মধ্যে থাকবে। ভাড়াও নির্ধারিত করে দেওয়া হবে।

যেমনঃ শুধুমাত্র ধানমণ্ডি বা মিরপুর এর ভেতরে বাস চলবে। একটা রুট থাকবে, বাস স্টপেজ থাকবে, টাইম দেওয়া থাকবে। সেই নিয়মে বাস চলবে এবং থামবে। যেকোনো যায়গায় থামতে পারবে না।

শিক্ষা ব্যবস্থার কথা অনেকেই বলেছে। তাই এটা বিস্তারিত বলছি না। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি এবং শিক্ষা কে সহজ করা। জাপানে ছয় বছরের আগে বাচ্চাদের পড়াশুনা নাই। ভদ্রতা, নিয়ম কানুন, শরীর ফিট রাখা ইত্যাদি প্রাকটিস করানো হয়। ছয় বছর থেকে পড়াশুনা শুরু। একই সাথে জাপানের ৬ বছরের আগে বাচ্চাদের আলু চাষ করা এবং আলু উত্তোলন করার মতন কৃষি কাজ করায়। শিক্ষক এবং টিচার প্যারেন্টস অ্যাসোসিয়েশান বাচ্চাদের কে সাহায্য করে, শিখায়। এতে করে বাচ্চারা কৃষি কাজ কে গুরুত্ব এবং সম্মান দেয়। আমাদের দেশে “চাষা” একটা গালি হিসেবে ব্যবহার করা হলেও, এটা সত্যিকার অর্থে একটা সম্মানের শব্দ। এমনকি, ঘরের কাজ করা, খেলাধুলা এগুলা ছোট বেলা থেকে শিখালে বাচ্চাদের মস্তিষ্কে কখনোই কাওকে ছোট করে দেখার প্রবণতা আসবে না।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সকলের জন্য স্বাস্থ্য ইনস্যুরেন্স এর ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো হয়। কোম্পানি গুলোকে বাধ্যতামূলক ভাবে কর্মচারির জন্য স্বাস্থ্য ইনস্যুরেন্স করতে হবে।কিছু কোম্পানিতে এটা অনেক আগে থেকেই আছে যদিও। তাছাড়া লাইসেন্স ছাড়া গণহারে ফার্মাসি থেকে মেডিসিন বিক্রি, এন্টি বায়োটিক ব্যবহার ইত্যাদি বেপারে নিয়ম তৈরি করতে হবে। একই সাথে প্রতিবছর স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রত্যেক চাকুরীজীবীর পেনশন বাধ্যতামূলক করতে হবে। এতে, রিটায়ার্ড হলে চিন্তা থাকবে না। পেনশন বেতনের % হিসাবে নেওয়া যেতে পারে। এটা খুব গুরুত্তপুর্ন একজন মানুষকে ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা কমাতে।

সরকারি বা বেসরকারি চাকুরীর ক্ষেত্রে জব সিকিউরিটি থাকা জরুরি। চাইলেই বিশেষ কারন ছাড়া হুট করে কাওকে বাদ দিতে পারবে না। বাদ দিতে হলে তার জন্য একটা নির্দিস্ট মাসের বেতন দিতে হবে। যাতে ঐ ব্যক্তি পরবর্তি জব পাবা পর্জন্ত সমস্যায় না থাকে।

সরকারি চাকুরীজীবীদের দুর্নীতি এবং কাজের মনিটরিং এবং জবাবদিহিতা থাকা জরুরি। এমনকি, দুর্নীতি তে ধরা পড়লে বা দেশ এবং জনগণের ক্ষতি করলে, সেই সরকারি চাকুরীজীবীর চাকুরী চলে যাবে। এই নিয়ম করা দরকার। চাকুরী চলে যাবার ভয় থাকলে সকলে নিজের দায়িত্বে অনড় হবে।

দেশের যে কোন কাজে, রাষ্ট্রের অর্থ ব্যবহারের পুর্বে, সমস্ত খরচের হিসাব জনগণকে জানাতে হবে। একই সাথে ঠিকাদার কোম্পানির সাথে সরাসরি কাজ দেওয়া নেওয়া হোক। এতে রাষ্ট্রের অনেক খরচ বাঁচবে। অবাঞ্ছিত রাজনৈতিক সংগঠনের রাস্তা দখল করে প্রোগ্রাম বা দিবস পালন বন্ধ করা দরকার। জনগণের কোন রকম ক্ষতি করে বা বিশৃঙ্খলা করে ব্যক্তি বা রাজনৈতিক সংগঠনের প্রোগ্রাম হতে পারে না।

জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ফুটওভার ব্রিজ বা গভীর রাত, নীরব রাস্তা, শহর বা গ্রাম, সবজায়গা সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশ বক্স এর একটা সুফল হয়তো এক্ষেত্রে পাওয়া যাবে। এলাকা মাঠ উন্মুক্ত করতে হবে সকলের জন্য। কোন রাজনৈতিক দল এর তত্ত্বাবধানে কোন কিছু দখল থাকতে পারবে না। জনগণ সবকিছুর মালিক। তাই শুধুমাত্র প্রশাসন নিরাপত্তার জন্য দায়িত্বে থাকতে পারে। কিন্তু কোন রাজনৈতিক দল না।

সকল রকম ভোট, যেমন মন্ত্রী, মেয়র, কমিশনার, চেয়ারম্যান, মেম্বার ইত্যাদি এক সাথে করা যেতে পারে। তবে এই বেপারে আমার যেহেতু অভিজ্ঞতা বা পড়াশুনা নাই, তাই আমি এর চ্যালেঞ্জ গুলো সম্পর্কে জানা নেই। সকল ভোট এক সাথে হলে দলীয়করণ থেকে রক্ষা পাবে এবং সবাই উন্মুক্ত ভাবে ভোট চাইতে এবং দিতে পারবে।

উপরের বিষয়গুলি আমার দেখা এবং আলোচনা থেকে শেয়ার করেছি। দেশ কখনো একটা সরকার একা গড়তে পারে না। জনগণের অনেক বেশি সহযোগিতা লাগে। জনগণ সহযোগিতা না করলে দেশ কখনোই উন্নতি করতে পারে না। তাই আসুন, আমরা সকলে মিলে আমাদের দেশের জন্য  কাজ করি। মনে রাখতে হবে, দেশ কিন্তু সরকারের হয় না। দেশ জনগণের। সরকার ও জনগণের। সরকার শুধু জনগণের সার্থে দেশের জন্য কাজ করে। তাই, সকল কাজ সরকারের উপর ছেড়ে না দিয়ে, নিজেদের দায়িত্ব থেকে কাজ করতে হবে। তাহলেই দেশ হবে বর্তমান জাপানের মতন সভ্য, সহযোগিতাপরায়ণ, নিরাপদ এবং শক্তিশালী।

Share.

মুক্তিফোরাম একটি মুক্তিবাদী, বহুত্ববাদী এবং জনপন্থী সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যে গড়ে ওঠা সংগঠিত গণমঞ্চ। এর লক্ষ্য হলো নতুন ধরণের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক চর্চা নির্মাণ। নোংরা হিসেবে রাজনীতির যে রূপকল্প এদেশের মানুষের কাছে নির্মাণ করা হয়েছে, সেটিকে চ্যালেঞ্জ করতে চায় মুক্তিফোরাম। আবার যেসব একক আদর্শ (যেমন বামপন্থা-ডানপন্থা) বা পরিচয়ের রাজনীতি (সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, জাতিবাদ) দিয়ে জনগণের সংহতি ও বৈচিত্র্য হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে তার একটি এন্টিডোট হয়ে ওঠাও মুক্তিফোরামের প্রকল্প।

Leave A Reply