ধর্মভিত্তিক রাজনীতি খারাপ। একটি স্বাধীন দেশে ধর্ম-লিঙ্গ-ভাষার ভিত্তিতে যদি আপনারা কিছু সংখ্যক মানুষ একত্রিত হন যখন কিনা আপনারা যার ভিত্তিতে একত্রিত হচ্ছেন, সেই দিক থেকে আপনি সংখ্যাগুরু, তখন প্রবল সম্ভাবনা আছে যে আপনি (এমন কি গণতান্ত্রিক উপায়ে) ক্ষমতা পেলেও অন্য ধর্ম/লিঙ্গ/ভাষার প্রতি ন্যায়বিচার করবেন না। তারা সংখ্যায় কম বলে, তাদের যৌক্তিক কথাও শুনবেন না, যদি আপনার ধর্মে বা ভাষা-লিঙ্গভিত্তিক আদর্শে অন্য ধর্ম-ভাষা-লিঙ্গের প্রতি বিষাদগার করা হয়ে থাকে।
কিন্তু, তাই বলে, ডাকসুর এই পদক্ষেপ সমর্থন করা যায়না। এই ডাকসুর কোনো কাজই আসলে সমর্থনযোগ্য না। এই ডাকসু প্রতারণা আর জালিয়াতির ডাকসু। ছাত্রলীগ বাদে প্রতিটি পরিষদ নির্বাচন বর্জন করেছিল ভোট শুরুর ৪-৫ ঘণ্টা পরেই, ভিপির দায়িত্ব আঁকড়ে থাকা নূরের প্যানেলও এর ব্যতিক্রম করেনি। এই ডাকসুর যেকোনো কাজকে সমর্থন করার অর্থ প্রকারান্তরে ভোট জালিয়াতি, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদকে সমর্থন।
দ্বিতীয়ত, শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা কোনো কাজের কথা না। পুরো দেশে চলবে, ক্যাম্পাসে চলবে না; এটা কোনো কাজের কথা না। আপনি যদি ঢাবিকে দেবালয় ভেবেও থাকেন, তাহলে মনে রাখা জরুরি, লোকালয় পুড়লে দেবালয় এড়ায় না। আমরা ২০১৩ সালে শাহবাগ বনাম শাপলা চত্বর দেখেছি। শেষ পর্যন্ত কে জিতেছিল এ হিসাব করতে গেলে আমার বমি পায়, কারণ আমার মনে পড়ে যায় সাইদী এখনো বেঁচে আছে রাষ্ট্রীয় খরচে খাচ্ছে-দাচ্ছে-ঘুমুচ্ছে। পরবর্তীতে আমরা দেখলাম বামপন্থী রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর পরম বন্ধু ও ভোট চোর আওয়ামীলীগ হেফাজতের মতো সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী-অসাংবিধানিক-অগণতান্ত্রিক-উগ্রবাদী-নারী বিদ্বেষী দলকে তোষণ করছে। রেলের কোটি-কোটি টাকা মূল্যের জমি দেয়া হলো হেফাজতকে, শফি উড়ে হেলিকপ্টারে; অনেক চিল।
আবার, এই আওয়ামীলীগের বাচ্চা ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে এসে অসাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি দেখালে সেখানে সন্দেহ করতে হয়। আমি পাকিস্তান আর আওয়ামীলীগকে সন্দেহ করি, তারা অপরাজিতা চা খাওয়ালেও।
এখন, দেখেন, এই রাষ্ট্রে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের একটা আলাপ আছে; শহুরে বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে। এ বিষয়ে কোনো আইন পাশ হয়নি, কোনো বিচারালয় এ সংক্রান্ত কোনো আদেশ দেয়নি। আমি মনে করি, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধে আইন প্রণয়ন একই সাথে প্রয়োজনীয় ও অনুচিত। প্রয়োজন কেন সেটা প্রথমেই বলেছি এবং আপনারা আরো ভাল জানেন-বুঝেন। অনুচিত কারণ, আপনার সমাজ এখনো ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির পক্ষে। আমি গণরুমে থাকা কালীন দেখেছি, লীগের ছেলে মনে করে কুটি-কুটি আলেমকে খুন করা হয়েছিল ৫মে তারিখে। এই মৌলবাদী দলগুলোর প্রোপাগান্ডা আর হেজিমনির কাছে আওয়ামী ডিজিএফআইয়ের সিনা জুরি সবক্ষেত্রে খাটে না।
আবার, রাষ্ট্র যখন আইন করে তখন আমাদের থেকে কিছু অধিকার নিয়ে নেয়, এই অধিকার নিয়ে নেয়ার বিনিময়ে রাষ্ট্র আমাদের তথাকথিত নিরাপত্তা দেয়। রাষ্ট্র আইন করে কখনোই আপনাকে কোনো অধিকার দেয়না। এখন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার অধিকার যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে খেয়ে দেয়া হয়, প্রথমেই সেটার ইমপ্যাক্ট পড়বেনা, ধীরে ধীরে বুঝবেন এই নজির দেখিয়ে দেখিয়ে আপনার আরো কত কত অধিকার খেয়ে দেয়া হচ্ছে। যারা ওয়ান পার্টি স্টেট তৈরি করতে চায় এবং প্রায় দ্বারপ্রান্তে তাদের জন্য এসব অবশ্য খুব ভালো খবর, স্বস্তির খবর।
ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতিকে সামাজিক ভাবে বয়কট করা ছাড়া আমাদের আসলে আর কিছু করার নেই, করা উচিৎ ও না।”
লেখকঃ ফাহিম শিহাব রেওয়াজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন ছাত্র