সকাল থেকে ভারী বৃষ্টিতে তিলোত্তমা ঢাকা মহানগরী এক ধাক্কায় রূপ পরিবর্তন করে নয়া সিঙ্গাপুর থেকে পরিণত হয়েছে প্রাচ্যের ভেনিসে। কেবলমাত্র আধা ঘন্টার বৃষ্টিতেই ঘটেছে এই অসাধারণ রূপান্তর। নগরীর মিরপুরের রোকেয়া সরণি ও কাজীপাড়া, জাহাঙ্গীরগেট, গ্রিনরোড, ইন্দিরা রোড, তেজগাঁও, কলাবাগান, তেজতুরিপাড়া, শুক্রাবাদ, ধানমন্ডি, জিগাতলা, শংকর, যাত্রাবাড়ি, বসুন্ধরা আবাসিক এবং পুরান ঢাকার অনেক এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে প্রাকৃতিক সুইমিং পুল।

এই ঘটনায় বিশেষ আনন্দ ব্যক্ত করেন পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা। তারা বলেন, “আমাদের সরকারের সাফল্য এই যে আমরা এক শহরেই দুই শহরের আমেজ সৃষ্টি করতে পেরেছি। শুকনা মৌসুমে সিঙ্গাপুর, ভেজা মৌসুমে ভেনিস। এমনটা পৃথিবীর আর কোন শহর করতে পারেনাই। এটি অনেকটা এক টিকিটে দুই সিনেমা দেখার মতন ব্যাপার। এই দৃশ্য অবলোকন করতে আমরা আগামী দিনগুলোতে বিদেশী পর্যটনে বিশেষ চাপ হবে বলে আশংকা করছি।”

দেশীয় বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের নানান গবেষণা দল উভচর যান বানানোর চেষ্টা করছে। আমরা তাদেরকে বলব আমাদের উদাহরণ অনুসরণ করতে। শহরে ড্রেনেজের ব্যবস্থা না করলে তারা দেখবেন সনাতনী স্থলযানগুলোই কেমন করে উচযানে পরিণত হয়। আমাদের বাংলামটর নদী এবং মিরপুর মহাসাগরে এখন দিব্যি চলাচল করছে সকল ধরণের যানবাহন। শান্তি ও গণতন্ত্রের মতন উভযান নির্মানেও বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে মডেল।”

তবে এই মনোরম ঘটনায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এই বিষয়ে সরকারদলের এক কর্তাব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “আমরা নগর গড়তে চেয়েছি আমাদের রাষ্ট্রের মতন। রাষ্ট্রের নেতা যেমন দুঃশাসনের নিচে মানুষ ভালো, তেমনি আমাদের শহরেও পানির নিচে রাস্তা ভালো।”
জলাবদ্ধতার নিরসন বিষয়ে তারা কি করবেন জিজ্ঞেস করলে বিএনপির একজন নেতা আবেগঘন কণ্ঠে বলে ওঠেন, “খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই।”

এমন সময়ে একজন পথচারীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন জলাবদ্ধতার সমস্যা এক সপ্তাহে সমস্যা সমাধান করে দিতে পারেন। ব্যখ্যা চাইতেই তিনি বেশ উঁচু গলায় বলে ওঠেন, “প্রথমে ধরতে হবে নাস্তিকগুলারে।” এ পর্যায়ে এই প্রতিবেদক দ্রুতপদে অকুস্থল ত্যাগ করেন।

রাস্তাঘাট ভ্রমণ করে সরেজমিনে দেখা যায় যে সামান্য দূরত্ব অতিক্রমণ করতে লাগছে অস্বাভাবিক সময়। তবে এর ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে নাগরিকদের সাহিত্য প্রতিভা। রাস্তায় যাবার পথে একজন নীল শাড়ি পরা নারীকে সুরেলা কণ্ঠে গাইতে শোনা যায়, “সিএনজি ছলাৎ ছলাৎ চলে রে, চারিদিকে জ্যাম রে।”

এটি একটি রম্য সংবাদ। মুক্তিফোরামের পক্ষে এটি রচনা করেছেন ফারুক রাসুল।

Share.

মুক্তিফোরাম একটি মুক্তিবাদী, বহুত্ববাদী এবং জনপন্থী সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যে গড়ে ওঠা সংগঠিত গণমঞ্চ। এর লক্ষ্য হলো নতুন ধরণের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক চর্চা নির্মাণ। নোংরা হিসেবে রাজনীতির যে রূপকল্প এদেশের মানুষের কাছে নির্মাণ করা হয়েছে, সেটিকে চ্যালেঞ্জ করতে চায় মুক্তিফোরাম। আবার যেসব একক আদর্শ (যেমন বামপন্থা-ডানপন্থা) বা পরিচয়ের রাজনীতি (সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, জাতিবাদ) দিয়ে জনগণের সংহতি ও বৈচিত্র্য হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে তার একটি এন্টিডোট হয়ে ওঠাও মুক্তিফোরামের প্রকল্প।

Leave A Reply