স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা রাতের খাবার খেতে বসেছেন। হঠাৎ বেজে উঠলো তার ফোন। শেখ হাসিনা মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলেন, পুত্র জয়ের নাম ভেসে উঠেছে। হাসিনা ফোন না ধরে রাতের খাওয়া-দাওয়ায় মনোযোগ দিলেন। ফোন ধরছেন না দেখে, পাশ থেকে শেখ রেহানা বলে উঠলো, আপা ফোনটা ধরো… জরুরি কিছু হতে পারে!

এক গ্লাস লবণ পানিতে হাসিনা শুকনা রুটি ভিজিয়ে খেতে খেতে বললো.. ছাই জরুরি! মাসের প্রথম তো… মনে হয় টাকা দরকার! শেখ হাসিনা ফোন কেটে দেন। আবারও জয়ের ফোন। এবার হাসিনা ফোন ধরেই একটু রাগের সাথেই বললো… এই মাসে টাকা দিতে পারবো না! আমার কিছু নাই! সব লুট হয়ে গিয়েছে!

ওপাশ থেকে জয়ের উত্তেজিত গলা শোনা গেল। মা.. মা.. আমি টাইম মেশিন আবিষ্কার করে ফেলেছি!

শেখ হাসিনা বিরক্ত হয়ে বললো, আমার এখন সময় খারাপ! নতুন ঘড়ি দিয়ে কী করবো!

জয় আরও উত্তেজিত হয়ে বললো, মা.. এই টাইম মেশিন মানে ঘড়ি না! এই টাইম মেশিন দিয়ে ফিরে যাওয়া যায় অতিতে!

–মানে!- খুশিতে শেখ হাসিনার চোখ ও ভ্রু কপালে উঠে গেলো.. কী বলছিস তুই..! সত্যি?

—তিন সত্যি মা! এখন কী করতে হবে বলো। আমি তোমার কাছে টাইম মেশিন পাঠিয়ে দিয়েছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যাবে।

—তারপর কী করবো?

—তুমি নানার কাছে গিয়ে পরামর্শ নিতে পারো!

—তোর নানার কাছে যাবো না! সে বাপ হয়ে আমাকে বলে কি না, তুমি রিয়েলিটি মাইনে নাও!

—তাহলে কী করবা?

—আমি ওইদিনের সংবাদ সম্মেলনে যেতে চাই! এবার আর ভুল করেও রাজাকারের বাচ্চা বলবো না! মেধা খরচ করে সব কিছু সামাল দেবো!

—ঠিকাছে মা! টাইম মেশিন পেলে কনফার্ম করো.. তোমাকে নিয়ম বলে দেবো।

—হাসিনা ফোন রেখে খুশিতে জিন্দেগী… জিন্দেগী… গানটা গাইতে শুরু করেন!

এই দু:সময়ের মধ্যেও বড় বোনকে খুশি হতে দেখে শেখ রেহানা বলে উঠলেন, আপা তোমার কি হয়েছে?
নাচতে নাচতে শেখ হাসিনা বলে উঠলেন, আমার ছেলে জয় একটা টাইম মেশিন আবিষ্কার করেছে। ওই টাইম মেশিন দিয়ে আমি আবার ক্ষমতা ফিরে পাবো। কি মজা.. কি মজা! মেধা দিয়ে সব ঠিক করে ফেলবো।

হাসিনার কথা শুনে রেহানা বললো, সত্যি আপা…? আমাাদের জয় সত্যিই কিছু আবিষ্কার করেছে?

শেখ হাসিনা একটু বিরক্ত হয়ে বললো, করবে না কেনো? আমার ছেলে বলে কথা! একদম মায়ের মতোই মেধা পেয়েছে জয়!

ঠিক এমন সময় দরজায় ঠক..ঠক.. ঠক… শব্দ। জয়ের বানানো টাইম মেশিন চলে এসেছে!


পর্ব দুই—
টাইম মেশিন বাসায় আসার পর চালু করা হয়েছে! ফোনে জয় সব শিখিয়ে দিচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে হাসিনা চলে এলো সেই পুরোনো প্রেস কনফারেন্সে (সরকারি চাকরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা সুবিধা পাবে না… তাহলে কি রাজাকারের নাতি-নাতনিরা কোটা সুবিধা পাবে!?)

চোখের সামনে এমন অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে যাওয়ায়, শেখ হাসিনার চোখ ও ভ্রু আবারও কপালে উঠে এলো! কোনমতে নিজেকে সামলে নিতেই হাসিনা দেখলেন প্রভাস আমিন (এটিএন নিউজের, তৎকালীন হেড অব নিউজ, যিনি সেদিনের সেই সংবাদ সম্মেলনে ভরা মজলিসে শেখ হাসিনাকে এই প্রশ্ন করেছিলেন- আবেদনের জন্য কোটা লাগে না, প্রিলিমিনারিতে কোটা লাগে না,.. একদম শেষ মুহূর্তে গিয়ে কোটা এপ্লাই হয়। আসলে মেধায় সবাই সমান। এখন আমার সামনে যদি দুইটা অপশন থাকে–১. একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ২. আরেকজন রাজাকারের সন্তান। আমি অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে চাকরী দিবো) প্রশ্ন করার জন্য উঠে দাঁড়িয়েছে।

শেখ হাসিনা মনে মনে নিজেকে সামলে নিলেন। মনে মনে বললেন যত যাইহোক, ’রাজাকার’ শব্দটি আমি মুখেই আনবো না!

প্রভাস আমিন তেল ঢেলে চলেছেন। এক পর্যায়ে তেল খেতে খেতে, হাসিনা সব ভুলে গেলো। সে বলে ফেললো, কোটা মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতিরা পাবে না তো কী রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে?

ব্যাস! এরপর যা হওয়ার তাই হলো! ফুঁসে উঠলো ছাত্র সমাজ! রাতের বেলা শেখ হাসিনাকে খুব বকলো শেখ রেহানা!

—আপা একই ভুল বার বার কী করে হয়?

—আমি দু:খিত রে..! তেল খেতে খেতে সব ভুলে গিয়েলাম! এখন কী করবো?

—কী আর করবা? তোমার কাউয়া কাদেররে সামলাও! সে যদি আবার ছাত্রলীগকে লেলায় দেয়। আরেক ঘটনা ঘটবে!

শেখ হাসিনা কাউয়া কাদেরকে ফোন দিলো। কিন্তু ওই সময় কাউয়া কাদের জনৈক ছাত্রলীগ নেত্রী আতিকারে হাতে-কলমে রাজনীতি শেখাচ্ছিলো বলে আপার ফোনটা ধরলো না। রাজনীতির উত্তেজনায় সব উত্তাল হয়ে উঠেছে। এমন সময় ফোন ধরার কোনো মানেই হয় না।


পর্ব তিন—
পরদিন যা হওয়ার তাই হলো! কাউয়া কাদের দিলো ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিলো। আন্দোলন চরমে পৌঁছলো। ওদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদ কালা কামাল পুলিশকে গুলির অর্ডার দিলো।

আবু সাঈদের লাশ পড়লো! ফুঁসে উঠলো ছাত্র সমাজ। চারদিকে আন্দোলন শুরু হলো। শেখ হাসিনা কোনো তাল পাচ্ছেন না। রেহানা বুদ্ধি বের করলো, আপা এবার জাতির উদ্দেশে একটা ভাষণ দাও।

শেখ হাসিনা, মনে মনে ভাবলেন, এবার কোনো ভাবেই আর কালো শাড়ি পরিধান করা যাবে না। কিন্তু দেখা গেলো, সেই কালো শাড়ি ছাড়া পরিধান কারার মতো আর কোনো শাড়ি নেই। বাধ্য হয়ে কালো শাড়ি পরিধান করে ভাষণ দিতে হলো।
তবে এবার বেশ ভালো স্ক্রিপ্ট রাইটার ’কিছলুকে’ দিয়ে ভাষণ লিখিয়ে আনা হলো! সাথে রুমালের গ্লিসারিন!

ভাষন শুরু করতেই হাসিনা স্ক্রিপ্ট ঝাপসা দেখতে লাগলেন! আমার আব্বার স্বাধীন দেশ.. স্বজন হারানোর বেদনা… জয় বাংলা.. জয় বঙ্গবন্ধু!

ভাষণ শুনে জনতা আরও ফুঁসে উঠলো! রাতের বেলা শেখ রেহানা বললো, আপা তুমি আবার মারা খাইতে যাচ্ছো… আসলে তোমার স্বৈরাচারী মন ভালো কিছু হতে দিচ্ছে না।

হাসিনা কিছু বুদ্ধির জন্য জয়কে ফোন দিলো! জয় সব শুনে বললো, এসব কী বলছো মা? কীসের টাইম মেশিন? কীসের ফিরে যাওয়া! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না! মা, সকাল সকাল তুমি কী রেড লেবেলের বোতলটা খুলছো? কয় পেগ মারছো..!?

হাসিনা বিরক্ত হয়ে ফোন রেখে দিলো। জয় এমন কথা বলেছে শুনে, শেখ রেহানা বললো, আপা তুমি পিছনে আছো! আমাদের কাছে এটা অতিত হলেও! জয়ের কাছে এটা বর্তমান! তাই.. ও(জয়) কিছু জানে না!

হঠাৎ হাসিনার মনে পড়লো, পলক এখনই মোবাইল নেট বন্ধ করবে। এটা হতে দেয়া যাবে না! মানুষ রেগে যাবে। কিন্তু ফোন দিতে বড্ড দেরি হয়ে গেলো। পলইক্যা দিছে নেট বন্ধ করে! আবার ফালতু একটা গল্পও বানাইছে।

না কিছুই বদলানো যাচ্ছে না! এত এত অযোগ্য লোক চারপাশে! জামাত-শিবির ট্যাগ কোনো কাজ করছে না! জঙ্গী ট্যাগও ব্যর্থ!


পার্ট চার—
হাসিনা মেট্রোরেল পরিদর্শন করতে এসেছেন! কাউয়া কাদের এই কাজ করিয়েছে!

উফ! সব আগের মতোই হচ্ছে! তবে কী পরিণতি আগের মতোই হবে! ক্ষমতা কী চলে যাবে? ক্ষমতা হারানোর ভয়ে শেখ হাসিনার চোখে পানি চলে আসলো।

সাংবাদিকরা সেই ছবি ও ভিডিও তুলে নিউজ করলো। মেট্রোরেলের শোকে কাঁদছেন প্রধানমন্ত্রী! শেখ হাসিনা এবার ভয় পেয়ে গেলেন! তারপর আর কী। সব কিছু আগের মতোই হতে লাগলো! তাকে রেখেই কাউয়া কাদের পালিয়ে গেলো! শামীম ওসমান অন্য দেশে খেলতে চলে গেলো! বেঈমান… সব বেঈমান!

৫ আগস্ট ২০২৪, সকাল ১০.৩০ মিনিট। তিন বাহিনীর প্রধান এসে বললেন, আমরা আপনাকে আর নিরাপত্তা দিতে পারবো না। আপনি পদত্যাগ করে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। আমরা আপনাকে সেফ এক্জিটের সহায়তা দিবো।

হাসিনা বললেন, আপনাদের সহায়তা আমার লাগবে না। আমার কাছে টাইম মেশিন আছে!

প্রধানরা বললেন… স্যার, এখন মিথ্যা বলার সময় না। আগে জীবন বাঁচান! তারপর তারা একরকম ধরে বেঁধে পদত্যাগ করিয়ে প্লেনে উঠিয়ে দিলো! সাথে শেখ রেহানাও এলো! শেখ হাসিনা টাইম মেশিনের জন্য অনেক কাঁদলো! ওই মেশিন থাকলে পিছনে যেয়ে আবার সব ঠিক করার চেষ্টা করা যেত!

শেখ হাসিনা বুদ্ধি বের করলেন, ভারত গিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে নিজের টাইম মেশিন নিতে আসবেন!
কিন্তু বিকালে গণভবন লুট হয়ে যাওয়ায় টাইম মেশিনটাও হারিয়ে গেলো! ওটা আর খুঁজে পাওয়া গেলো না!


৫ আগস্ট, ২০২৪। রাত ১১টা
শেখ হাসিনা জয়কে ফোন করে কাঁদলেন এবং বললেন, জয় তুই আবার একটা টাইম মেশিন আবিষ্কার কর। আমি পিছনের সময়ে ফিরে গিয়ে আবার সব ঠিক করে ফেলতে চাই।

ফোনের ওপাশ থেকে জয় বিরক্ত গলায় বলে উঠলেন, এসব কী বলো আম্মা… আমি কী জীবনে কেনো কিছু আবিষ্কার করতে পেরেছি? আমি তো শুধু শুধু ক্রেডিট নিতাম।

হাসিনা ফোন রেখে বিরক্ত গলায় বলে উঠলেন, অপদার্থ একটা! একদম বাবার মতোন হইছস তুই!

এই কথা শুনে ছোট বুবু রেহানা বললো.. কেন আপা, সেদিন না তুমি বললে… ছেলে একদম তোমার মতোন হইছে!
হাসিনা তখন রেহানার দিকে তাকিয়ে হিংস্র গলায় বলেন, তুই জামাত-শিবির। তুই রাজাকার!

লেখক: রোহিত হাসান কিসলু

Share.

মুক্তিফোরাম একটি মুক্তিবাদী, বহুত্ববাদী এবং জনপন্থী সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যে গড়ে ওঠা সংগঠিত গণমঞ্চ। এর লক্ষ্য হলো নতুন ধরণের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক চর্চা নির্মাণ। নোংরা হিসেবে রাজনীতির যে রূপকল্প এদেশের মানুষের কাছে নির্মাণ করা হয়েছে, সেটিকে চ্যালেঞ্জ করতে চায় মুক্তিফোরাম। আবার যেসব একক আদর্শ (যেমন বামপন্থা-ডানপন্থা) বা পরিচয়ের রাজনীতি (সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, জাতিবাদ) দিয়ে জনগণের সংহতি ও বৈচিত্র্য হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে তার একটি এন্টিডোট হয়ে ওঠাও মুক্তিফোরামের প্রকল্প।

Leave A Reply