প্রিয় সহনাগরিক,

আপনি যদি এই চিঠিটা পড়তে পারেন, তার মানে হচ্ছে আপনি নিরাপদে আছেন, এবং আপনার নেট কানেকশন আছে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার মতো অবকাশ আছে। অর্থাৎ আপনি, আমাদের মতোই, বাংলাদেশের সুবিধাপ্রাপ্ত নাগরিক।

কিন্তু এই দেশেই বিপুলসংখ্যক মানুষ বাস করেন, যারা আমাদের সহনাগরিক, কিন্তু আপনার বা আমার মতো সুবিধাপ্রাপ্ত নন। শ্রেণীবিভাজন সবসময়ই ছিলো। করোনাভাইরাসে আগমনে সেই বিভাজন অস্বস্তিজনকভাবে সামনে আসছে।

সরকার তিনমাস সময় পেয়েছিলো সংকট মোকাবেলা করতে। সে এই সময় দলীয় কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত ছিলো। ফলে যখন বাংলাদেশে করোনার কারণে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো, দেখা গেলো আমাদের পিপিই নাই টেস্টিং কিট নাই কোনো ধরণের প্রস্তুতি নাই।

দেরীতে হলেও সংকটের স্বাস্থ্যগত দিকটা নিয়ে সরকারের টনক নড়ছে, বিদেশ থেকে বিভিন্নপ্রকার সাহায্য আসার সংবাদও শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এই সংকটের একটি অর্থনৈতিক দিকও আছে। করোনার কারণে সারা দেশ লকডাউনে গেলে, তাতে স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষেরা বিপদে পড়বে।

রাষ্ট্রের কথা ছিলো এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর। মাত্র ৭০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেই অন্তত ছয় মাস বাংলাদেশের দরিদ্রতম নাগরিকদেরকে পেটেভাতে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। বছরে লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয় এই দেশ থেকে, এই তথ্যটি মাথায় রাখলে, টাকার পরিমাণটা যে বেশি নয় সেটা বোঝা যাবে।

কিন্তু রাষ্ট্র যেভাবে অফিস-আদালত ছুটি দিয়ে সবাইকে গ্রামে যেতে উৎসাহিত করছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, মেহনতিদের পাশে দাঁড়ানোর কোনো চিন্তাই তার নাই। ফলে আমরা একটা গণমৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছি। আপনি-আমি হয়তো বেঁচে যাবো, একটু সচেতন থাকলেই, কিন্তু খেটে খাওয়া মানুষগুলো বাঁচবে না।

সবাইকে বলা হচ্ছে, ঘরে থাকো, ঘরে থাকো। অথচ শ্রম-ঘাম দিয়ে এই দেশটাকে যারা চালাচ্ছেন, সেই গার্মেন্টস শ্রমিকরা কারখানাগুলোতে গায়ে গা লাগিয়ে কাজ করেন, তাদের ঘরে থাকার উপায় নাই। শারীরিক নৈকট্যের কারণে করোনা যেহেতু দ্রুত ছড়ায়, সবচে বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছেন তারাই। মালিকদের উচিত ছিলো তাদেরকে সবেতন ছুটি দেয়া, সরকারের উচিত ছিলো মালিকদেরকে বাধ্য করা। বলাই বাহুল্য, এসবের কিছুই তারা করে নি। সরকার-মালিকপক্ষের কাছে শ্রমজীবীদের জীবনের কোনো দাম নেই। তাদের কাছে এই মানুষগুলো স্রেফ সংখ্যা মাত্র।

একটা দেশে রাষ্ট্র যখন ব্যর্থ হয়, সরকার যখন মুখ ফিরিয়ে নেয়, মানুষকেই তখন মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয়। আজকে সেই মনুষ্যত্বের পরীক্ষা দেয়ার সময় এসেছে। আমরা যদি এই পরীক্ষায় অংশ না নেই, উত্তরপ্রজন্মের কাছে মুখ দেখাতে পারবো না।

আসুন, আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ পাড়া-মহল্লায় যেসব শ্রমজীবী মানুষ আছেন, তাদের পাশে দাঁড়াই। তাদের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চাল-ডাল-তেল-লবন-পানি পৌঁছে দেই। ব্যক্তিগতভাবে, সাংগঠনিকভাবে, যেভাবে সম্ভব, সেভাবেই পাশে দাঁড়াই।

মুক্তিফোরাম এই কাজে বাংলাদেশের মানুষের পাশে থাকবে। আমাদের সীমিত সামর্থ্য নিয়েই আমরা কাজ করবো। বিপন্ন মানুষদেরকে বাঁচাবো। সেই উদ্দেশ্যে আমরা একটি তহবিল গঠন করছি। যার নাম আমরা দিয়েছি মানুষ বাঁচাও তহবিল। সেই তহবিলে সাহায্য করতে চাইলে বা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে সাহায্য করতে চাইলে যোগাযোগ করুনঃ ০১৬৪০৬৮০৭২৭ (আরিফ সোহেল), ০১৯৮৮৬৮৬০৮৬ (মুক্তিফোরামের বিকাশ–পার্সোনাল)। আপনি অন্য কোনো সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকলে, আপনার সংগঠন থেকেও এমন উদ্যোগ নিন, শ্রমজীবী মানুষের পাশে দাঁড়ান।

করোনা ক্রাইসিস কাটবেই, সূর্যের দিন আসবেই।

বিনীত,
মুক্তিফোরামের সম্পাদকবৃন্দের পক্ষ থেকে ইরফানুর রহমান রাফিন

Share.

মুক্তিফোরাম একটি মুক্তিবাদী, বহুত্ববাদী এবং জনপন্থী সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যে গড়ে ওঠা সংগঠিত গণমঞ্চ। এর লক্ষ্য হলো নতুন ধরণের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক চর্চা নির্মাণ। নোংরা হিসেবে রাজনীতির যে রূপকল্প এদেশের মানুষের কাছে নির্মাণ করা হয়েছে, সেটিকে চ্যালেঞ্জ করতে চায় মুক্তিফোরাম। আবার যেসব একক আদর্শ (যেমন বামপন্থা-ডানপন্থা) বা পরিচয়ের রাজনীতি (সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, জাতিবাদ) দিয়ে জনগণের সংহতি ও বৈচিত্র্য হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে তার একটি এন্টিডোট হয়ে ওঠাও মুক্তিফোরামের প্রকল্প।

Leave A Reply