আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩। ফেব্রুয়ারির এই তারিখটি আসলেই সবাই কেমন ভালোবাসা ছড়াতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। ভাবখানা এমন যে এই একটি নির্দিষ্ট দিন বাদে বছরের বাকি ৩৬৪ দিন ভালোবাসা আদান -প্রদান নিয়মের বহির্ভূত!
যাইহোক, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ১৪ই ফেব্রুয়ারি দিনটি এক অন্যরকম গুরুত্বপূর্ণ দিন। কেননা, ১৯৮২ সালের মজিদ শিক্ষানীতি (তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী) বাতিল সহ আরো কিছু দাবি পেশ করা হয়। পরবর্তীতে এ দাবি ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি থেকে গণমানুষের দাবি হিসেবে সোচ্চার হয়ে উঠে। তবে জেনে রাখা প্রয়োজন, মজিদ শিক্ষানীতিতে ছিল যে ‘প্রথম শ্রেণী থেকে আরবি আর দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে ইংলিশ ভাষা বাধ্যতামূলক করা’ যা বিজ্ঞানভিত্তিক ও দেশের উন্নয়ন মূলক ভাবমূর্তির আওতার একদমই বাইরে ছিল! আর ছাত্রসমাজ সেটাই করেছিলো, এমনকি নিজেদের জীবনও উৎসর্গ করেছে!
১৯৮৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারির এই দিনে তৎকালীন সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়নের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজ ও জনগণ জোরালো দাবি জানান। পরবর্তীতে সবাই মিলে স্বারকলিপী জমা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সচিবালয়ের দিকে রওনা দিলে পুলিশ নির্বিচারে গুলিবর্ষণ, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে এবং অনেক মানুষ আহত সহ নিহত হন।
আর সেই সময় থেকেই বাংলাদেশে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ‘ স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
কিন্তু কালক্রমে, বাংলাদেশের বর্তমান তরুণ সমাজ মাঝে মধ্যে বড়ই অভাগার মতো আচরণ করে! কেননা, বিশ্বাস করুন, এখনকার এ সমাজের গুটিকয়েক লোক বাদে বাকিরা জানেই না যে ১৪ই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে কেন গুরুত্বপূর্ণ! এমনকি এই তারিখটির গুরুত্ব সমাজের বিভিন্ন স্তরে পৌঁছানোর জন্য রাষ্ট্র নিজেও তেমন উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নেয় না, বা নিতে অনিহা পোষণ করে!
আমরা জানি, শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। যে জাতি যত বেশি সুশিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি উন্নত। আর যখন ভালোবাসার সাথে এই সুশিক্ষা সমাজের আনাচে-কানাচে পৌঁছে যাবে, ঠিক তখনই সমাজ, দেশ এবং সর্বোপরি পুরো পৃথিবী বসবাসের জন্য সুন্দর ও সাবলীল হয়ে উঠবে।
তাই, আমাদের উচিত ১৪ই ফেব্রুয়ারির স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের শিক্ষাকে প্রতিপাদ্য বিষয় করে এবং বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশের জনগণ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম নতুন করে দেশের কল্যাণের কথা ভাবতে শিখুক, দেশকে ভালোবাসতে শিখুক। তবেই না ১৪ই ফেব্রুয়ারির প্রকৃত মাহাত্ম্য সীমা ছাড়িয়ে বিস্তৃত লাভ করবে।
লেখক: কনাদ সরকার