এই লেখাটা বুঝতে গেলে আপনার আগে মানতে হবে ফ্যাসিবাদ একটা কাঠামো। তার কায়দাকানুন ব্যবহার করে যে কেউ ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠতে পারে। আওয়ামী লীগ যেমন শাহবাগের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী হয় উঠেছিলো, বর্তমানের ভাংচুর, আগুন, লুট ব্যবহার করে অন্য কারো ফ্যাসিবাদী হয়ে ওঠা অসম্ভব কিছু না।
লেখার শিরোনামে আমি শাহবাগের উদাহরণ টানছি কারণ শাহবাগ আমলে আমরা যেসব যুক্তি শুনতে পেয়েছিলাম, যেমন জামাতকে নিষিদ্ধ করো, তাদের ওপর হামলা করো, সবাইকে ফাঁসি দাও, একটা একটা শিবির ধরে জবাই করো–এই সব কথাই এখন ফিরে ফিরে আসছে। এখনকার নতুন মব চাইছে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে, আওয়ামী লীগারদের হামলা করতে, তাদের সবাইকে ফাঁসি দিতে, ছাত্রলীগকে জবাই করতে। এখন আবার বদলার যুক্তি ফিরে এসেছে। সারাদেশ জুড়ে চলছে তান্ডব, অগ্নিসংযোগ, লুট। সরকার প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গণদাবি পূরণে ব্যর্থ এটা স্পষ্ট। সেখান থেকে এখন মব একত্র হতে আইনের বাইরে গিয়ে ভেঙ্গেচুরে একাকার করছে। এটা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হতে পারে, হতে পারে বিদ্যমান ব্যবস্থা, প্রশাসন, আইনকাঠামো তথা সরকারের প্রতি অনাস্থার প্রকাশ। সরকার বিচার করছে না, তো রাস্তায় বিচার করো। কোন পদ্ধতি ছাড়া,যা হাতের কাছে পাও গুড়িয়ে দাও, আক্রমণ করো।
অথচ শিক্ষিত জাতি হতে হলে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজ করাতে হবে। আদালতের মাধ্যমে হাসিনা, তার কুশীলব, হুকুমের আসামী, তার দল আর যারা প্রকৃত অপরাধী–তাদের বিচার করতে হবে। ট্রুথ কমিশন গঠন করার মাধ্যমে নিরপরাধ আওয়ামী লীগারদের পুনর্বাসিত করতে হবে। সকলকে নাগরিক হিসেবে নিরাপত্তা দিতে হবে। যে যা করেছে সব প্রকাশ্যে আনতে হবে। তা না করে এসব ভাংচুর আর অগ্নিসংযোগ বিপ্লবের মহিমাকে কলংকিত করছে। এই ঢালাও আক্রমণ, লুটপাট বরং নতুন করে ফ্যাসিস্ট কায়দায় ক্ষমতায় যাবার জন্য বিশেষ একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা করে দিচ্ছে যারা ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের মতই উলটো মতবাদের ফ্যাসিজম শুরু করবে। আওয়ামী ট্যাগিং অলরেডি শুরু হয়ে গেছে এবং এই ট্যাগ হয়তো এই লেখার কারণে আমিও খাবো, তবে আমাকে সৎ বিশ্লেষণের দায়ে বলতেই হবে যে ফ্যাসিস্ট উৎখাত করতে গিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা ফ্যাসিস্ট আচরণই করছে। এটা বিপ্লব নয়, এটি জুলুম। যদি বিদ্যমান ফ্যাসিস্ট চিহ্ন স্থায়োভাবে মুছতে হয়, তবে প্রাতিষ্ঠানিক সভ্য প্রক্রয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। নাহলে এক ফ্যাসিস্ট গিয়ে অন্য ফ্যাসিস্ট আসবে। যা হাতের কাছে পেলাম জ্বালিয়ে দিলাম, এটা সভ্য তো নয়ই, এটা নতুন ফ্যাসিজমের আগমণী বার্তা।
আমি অন্তর্বতী সরকারের কাছে অনুরোধ করি, দ্রুত জনরোষের কারণ অনুসন্ধানপূর্বক পতিত স্বৈরাচারের বিচার নিশ্চিত করুন। তার পলাতক সাঙ্গপাঙ্গদের দেশে ফেওরত আনুন, কাঠগড়ায় আনুন। আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে বিচারের আওতায় আনুন। মানুষ আপনাদের কাছে দ্রুত ফলাফল চায় কারণ আপনারা কার্যত একটা বিপ্লবী সরপকার হবেন বলেই অনেকে আশা করেছিলো। সেই জায়গা থেকে জনগণের ক্ষোভকে প্রাতিষ্ঠানিক উপায়ে সমাধা করার দায়িত্ব আপনাদেরই নিতে হবে।
Leave A Reply