কপিরাইট মানুষের নৈতিকতা বিচার করে না। কপিরাইট মূলত কোন কনটেন্টের মালিকানা নির্ধারণ করে।
একজনের কোন সৃজনশীল কাজ অন্য কেউ কপিরাইট নিয়ে ব্যবহার করতে পারে, ব্যবসা করতে পারে, কিন্তু সেই কাজটা সে নিজে সৃজন করেছে এমনটা দেখাতে পারে না। তো, ন্যাশনাল জিওগ্রাফির কপিরাইট আছে কি নাই সেইটা কোন বিষয়ই না। আমরা যারা কপিলেফটের পক্ষে এবং কপিরাইট লঙ্ঘনকে সমর্থন করি, তারাও বিভিন্ন কাজের স্রষ্টাকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি সম্ভব হলে।এবং, এইটাও আসলে ইস্যু না।
যেকোনো বই লেখা মানেই তা যত্ন নিয়ে করা হবে এটাই কাম্য। বিশেষ করে সেই বই যখন স্কুল পর্যায়ের এবং এত বরেণ্যসব লোকজন এর দায়িত্বে তখন তার থেকে আন্তরিকতা ও যত্ন, কিংবা এটলিস্ট সিরিয়াসনেসের দরকার আছে। তারা বইয়ে কেন কপি মেরেছে সেটাও আসলে তেমন ব্যাপার না। এই ধরণের লেখাগুলা তো কোন না কোন বইয়ে আছেই। সমস্যা তাহলে কী?সরাসরি গুগল ট্রান্সলেটরে বসায়ে ট্রান্সলেট করা। এইসব বইয়ের ক্ষেত্রে যেইটা জরুরী, একজন লেখক কোন একটা বিষয়ে পড়াশোনা করে তারপর শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ করে নিজের মতো গুছিয়ে লিখবে। এবং, এইখানে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের এসেসমেন্ট মাথায় রাখতে হয়। এছাড়াও ভাবানুবাদ বলে একটা বিষয় আছে। এই কারণেই তাদেরকে রাখা হয়েছে। নাহলে তো র্যান্ডম একটা ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টও টপিক অনুযায়ী ধুমধাম অনেক কিছু ট্রান্সলেট করে ফেলতে পারে।
কিন্তু দেখা গেলও টেক্সটটা আসলে গুগল ট্রান্সলেটরে ফেলে করা। এতে সমস্যা কী? গুগল ট্রান্সলেটর এখনো কিছু বেসিক ফর্মালভঙ্গি ছাড়া বাক্য গঠন করতে পারে না। এটা যে গুগল ট্রান্সলেটরে ট্রান্সলেট করা তা কেউ কেন যাচাই করতে গেলো? কারণ পড়তে গিয়ে বাধা পড়ে। এ থেকেই বোঝা যায় যে তাদের আসলে ন্যুনতম আন্তরিকতাটুকু ছিলো না। একইসাথে এটা দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাপারও।শুধু বিজ্ঞান বইয়ে না, অন্য একটা বইয়ে দেখলাম জেন্ডার নিয়ে আলাপ হচ্ছে, খুবই ভালো কথা। কিন্তু সেইখানে জৈবিক লিঙ্গ, সামাজিক লিঙ্গ – এই দুই কঠিন শব্দ দেখে আমার নিজেরই হাসি পাচ্ছিলো। এবং, আমি প্রথমে বুঝতে পারি নাই যে কী বুঝাচ্ছিলো। এইটা আসলে সামগ্রিকভাবে আমাদের অধিকাংশ বইয়ের একই অবস্থা থাকার কথা। কারণ আমি নিজে যখন স্কুলে পড়তাম তখনও অনেক লেখা দেখে ইংরেজি কাঠামো মনে হতো, বাংলাই বুঝতে সমস্যা হতো।.
ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল দোষ স্বীকার করে একটা বিবৃতি দিয়েছেন দেখলাম। যদিও সেইটা অথেনটিক কিনা বা কোন পত্রিকায় গিয়েছে কিনা জানি না। কিন্তু তা দেখে অনেকে আবার গদগদ হয়ে গেছে। এই ধরণের কাজে যেকোনো সভ্য আর দায়িত্বশীল লোকের উচিত পদত্যাগ করা। যেহেতু এটা বাংলাদেশ, এবং এখানে আমতা আমতা করেও দোষ স্বীকার করা হয় না, তাই অনেকে এই ভার্চু সিগন্যালিং দেখেও খুশি হয়ে গেছেন।সেই বিবৃতিতে লেখা বইটির নাকি পরীক্ষামূলক সংস্করণ চালু আছে। আমি বুঝলাম না, কেন এত সিরিয়াস একটা জিনিসের পরীক্ষামূলক সংস্করণ পাবলিক পর্যায়ে চলবে? বাচ্চারা সবাই গিনিপিগ নাকি?
আমার জানামতে, বাংলাদেশে কিছু স্কুল থাকে, যেমন গভারনমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলগুলা, সেইসব স্কুলে বিশেষ উপায়ে অভিভাবকদের সম্মতিক্রমে নতুন নতুন শিক্ষা প্রক্রিয়া পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু এতো সেনসিটিভ জিনিস নিয়ে পাবলিক পর্যায়ে পরীক্ষামূলক সংস্করণ কেন ছাপা হবে?.হতে পারে জাফর ইকবাল বলেই এতো হইচই হচ্ছে। কিন্তু ঠিক সে কারণেই বইগুলাতে এই ধরণের ভুল থাকা উচিত ছিলো না। আর, কোন একটা অভিযোগ আসলে তা ঠিক করে এড্রেস না করে, অমুকে তমুক বলেই এই অভিযোগ সেইসব বলা খুবই অপেশাদার ও ফ্যালাসিমূলক কাজ।
লেখকঃ সুবিনয় মুস্তফী ইরন