বিজয়ের ৪৮ বছর পেরিয়ে ৪৯ এ পদার্পণ করল বাংলাদেশ।
স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরেও দেশের অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের দেশের একটি বৃহৎ অংশ প্রবাসে কর্মরত।
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১ কোটির বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। যারা প্রতিনিয়ত রেমিটেন্স প্রেরনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন। যাদের জন্য আমাদের নেতা মন্ত্রীরা সংসদে দাঁড়িয়ে রেকর্ড রেমিটেন্স এর ভাষন দিতে পারেন!
গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এই প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমান কত ছিল জানেন ? ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি! আমাদের অর্থমন্ত্রী বলেছেন চলতি অর্থবছরে সেটি ১৮ পেরিয়ে ২০ বিলিয়ন ডলারও ছাড়িয়ে যেতে পারে!
এমন লাভজনক খাত হওয়া স্বত্তেও বাজেটে সবচেয়ে অবহেলিত খাতের একটি হল “প্রবাসী কল্যান”।
স্বাধীনতার ৪ যুগ পেরিয়ে গেলেও প্রবাসে কর্মী প্রেরণে এখনো পর্যন্ত কোন নিয়ম নীতিমালা তৈরী করতে পারেনি প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়!
লাভজনক খাত হওয়া স্বত্তেও প্রবাসী কর্মীদের সেবাদানে দুতাবাস গুলোতে দেয়া হয়না পর্যাপ্ত কর্মীর নিয়োগ। যার জন্য বিভিন্ন কারনে দুতাবাসে যাওয়া প্রবাসীদের পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি।
সবচাইতে কম পারিশ্রমিক আয় এবং সবচেয়ে বেশি অভিবাসন ব্যায় বহন করে এইদেশের প্রবাসীরা। নিয়ম নীতি না থাকায় বিভিন্ন এজেন্সি ও দালালদের দ্বারা প্রতারিত হয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেনা প্রবাসীকর্মীরা।
দালল চক্রের দৌরাত্ম্যে আধুনিক দাসপ্রথার নজির সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ!
একটি পাসপোর্ট এর আবেদন প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে ভোগান্তির যাত্রা শুরু করেন প্রবাসে কর্মসংস্থান প্রত্যাশীরা। পাসপোর্ট অফিস গুলোতে দালালের দৌরাত্ম্য ওপেন সিক্রেট হয়ে গিয়েছে।
বিদেশে যাওয়ার শুরুতেই বিভিন্ন এজেন্সি আর দালাল চক্রের ফাঁদে পড়েন সহজ সরল খেটেখাওয়া লোকজন।
এজেন্সি গুলোর মিথ্যে আশ্বাসে দেশে জায়গা জমি বিক্রিকরে ঋনের বোঝা মাথায় নিয়ে বিদেশে গিয়ে কাজ এবং পারিশ্রমিকের সামঞ্জস্য না থাকায় ভিসা নবায়ন করতে না পেরে আবার অনেকেই হয়ে যান অবৈধ।
আর এই সমস্যা গুলো দিনে দিনে প্রকট আকার ধারন করেছে। যা জন্য মালয়শিয়া এবং সৌদিআরব হতে গত কয়েক মাসে ফেরত এসেছে হাজার হাজার বাংলাদেশি কর্মী। এতে করে অন্যান্য দেশে যেমন বাংলাদেশি কর্মী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনার সৃষ্টি হচ্ছে একই সাথে দেশের অর্থনীতিতে বিরুপ প্রভাব ডেকে আনছে।
দালাল চক্রের সিন্ডিকেটের কারনে মালয়শিয়া বাংলাদেশ হতে কর্মী নেয়া পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে! যা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক।
দালাল চক্রের প্রতারণার কারনে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গিয়ে নির্যাতনের স্বীকার হয়ে সম্ভ্রম পর্যন্ত হারাতে হচ্ছে নারীকর্মীদের! আমাদের নারীকর্মীদের মধ্যপ্রাচ্যে পশুর মত হাটে বিক্রি করাহয়!
বিভিন্ন সময় নির্যাতনের স্বীকার হয়ে কফিনে বন্দী হয়ে ফেরত আসছে রেমিটেন্স যোদ্ধার লাশ! ২০১৮-১৯ সালেও যার সংখ্যা ছিল তিন হাজারের বেশি!
আর ছুটিতে দেশে ফেরার পথে বিমানবন্দরে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষার বিড়ম্বনার কথা নতুন করে কি বলবো?
একজন প্রবাসী আমাদের পরিবার ও সরকারের কাছে অর্থ উৎপাদনের যন্ত্রমাত্র। দেশের অর্থনীতিতে যারা সবচেয়ে বেশি অবদান রাখেন স্বাধীনতার চার যুগ পার হলেও রাষ্ট্র আজ পর্যন্ত প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রদানের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। অথচ দেশের সরকার নির্বাচন ও উন্নয়নে অন্যতম আয়ের উৎস হিসেবে প্রবাসীদের মতামতও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
আর এই চরম সত্যগুলোকে প্রতিনিয়ত অস্বীকার করে পাশকাটিয়ে যাওয়ায় ব্যাস্ত মন্ত্রী, সচিব হতে শুরু করে দায়িত্বপ্রাপ্ত সকলে।
এই সবকিছুর আসলে শেষ কবে?
৪৮বছর তো শেষ!
কবে আমরা প্রবাসে কর্মী প্রেরনে একটি নিয়ম নীতি পাবো?
কবে এদেশের মানুষ দালাল চক্রের হাত হতে মুক্তি পাবে?
কবে এদেশের নারীকর্মীদের উপর যৌন নির্যাতন বন্ধে সরকার দৃঢ় পদক্ষেপ নিবে?
কবে প্রবাস হতে কফিন বন্দি রেমিটেন্স যোদ্ধার লাশের মিছিল আসা বন্ধ হবে? কবে আমরা ভোটাধিকার পবো?
এসব প্রশ্নের উত্তর আদৌ কি মিলবে?
মাননীয় প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী
আমরাতো দেশকে রেমিটেন্স দিচ্ছি, বিনিময়ে দেশ আমাদের কি দিচ্ছে? বলবেন কি?