আজকে সকালে ঘুম থেকে উঠি ভয়াবহ এই খবরটা শুনে..শোনার পর স্তব্ধ হয়ে গেসিলাম পুরাপুরি! একটা ছেলেকে মেরেই ফেললো.. কি ভয়ংকর! এদের অপছন্দ করতাম সবসময় কিন্তু যতটুকু ঘৃণা এরা ডিজারভ করে তার সিকিভাগও কি আমাদের কল্পনায় ছিল? সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপার হলো আমাদের জানা অজানায় এই হত্যার দায় আমাদেরই! We saw them doing these every now and then..and we kept silent! We let this happen.. We let this happen to an innocent!
যখন বুয়েটে প্রথম ভর্তি হই তখন র্যাগিং এর নামে পাওয়ার প্র্যাকটিস এর প্রথম রূপ দেখি..পাশের রুমের ছেলেকে শিবির সন্দেহে স্টাম্প দিয়ে পিটাতে দেখসি..প্রতিবাদ করি নাই! হয়তো প্রতিবাদ করা সুইসাইডের মতো ব্যাপার হতো! মোস্ট জুনিয়র ব্যাচের চেয়ে হলের বিড়ালের মর্যাদাও বেশী বলে কথা!
সেকেন্ড ইয়ারে বুয়েটের একদম প্রথম সারির একজন ব্যাচমেটকে টার্ম ফাইনালের আগে মেরে হসপিটালে পাঠায়..সে এখন জুনিয়রদের সাথে ক্লাস করে..আসলেই একটু বিতর্কিত কথাবার্তা বলসিলো এই অপরাধে আমরা ওর সাথে হওয়া এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করলাম না..বুয়েটে ট্যাগ দেয়া তো অনেক সহজ,পাছে নিজের ক্ষতি হয়! তারা আরো সাহস পেলো..আমরা আরো দূর্বল হলাম!
কিছুদিন পর শিবির সন্দেহে আরেক ব্যাচমেটকে ব্যাচমেটরাই কিছু সিনিয়রসহ বেধড়ক মারধর করলো! কারা তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না! বড় একটা প্ল্যাটফর্মে একটা পোস্ট আসলো! এবারে একটু প্রতিবাদের চেষ্টা করলাম! এবং শিবির সন্দেহে অন্য ছাত্র সংগঠন নিজের ব্যাচমেটকে পেটানোর একের পর এক জাস্টিফিকেশান আর মাইল্ড থ্রেট আসা শুরু করলো! সবচেয়ে তাজ্জবের ব্যাপার ছিলো কিছু তথাকথিত নিউট্রালও এটার জাস্টিফিকেশান নিয়ে হাজির! এখন অবশ্য ভোল পালটে গেসে! যাই হোক,আরেকবার নীরব হলাম আর এই একবারের জন্য আমি সম্ভবত নিজেকে ক্ষমা করতে পারি!
তারপর আসলো কোটা আন্দোলন, সড়ক আন্দোলন! একটা ছেলে সাহস করে প্রতিবাদ করলো.. এবং তার চুড়ান্ত মূল্য দিলো! সেই রাতে ওকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় কিছু সাহসী ব্যাচমেট বাধা দিলো, এবং ওদেরও স্টাম্প দিয়ে পেটানো হলো রুমে নিয়ে গিয়ে! আমরা আরো খোলসের মধ্যে ঢুকে গেলাম..তারা লাগামছাড়া হয়ে গেলো!
এরপর আমাদের ব্যাচমেটকে হল ফেস্টের টাকা না দেয়ার অপরাধে তারা মেরে পায়ের লিগামেন্ট ছিড়ে দিলো! জুনিয়রদের মেরে কানের পর্দা ফাটিয়ে দিলো! আমরা যেটা কখনো করতে পারি নাই সেটা আহসানউল্লাহ ১৮ করলো.. সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ!
ফাইনালি..আবরারকে মেরেই ফেললো ওরা! এই ঘটনা আমাদের আশেপাশে বারবার ঘটসে, আমরা প্রতিবাদ করি নাই, নিজেদের স্বান্তনা দিসি যে কিছুই করার নাই..আজকে আমাদের সাইলেন্স এর জন্য একজন জীবন দিলো!
লেট মি সে দিস ক্লিয়ারলি.. উপরের প্রতিটা ঘটনা ঘটাইসিলো বুয়েট ছাত্রলীগের সদস্যরা! এবং তারা এটা করতে পারসে কারণ সাংগঠনিকভাবে তারা পুরো ব্যাক আপ পায়! প্রতিটা ব্যাচ তার জুনিয়র ব্যাচকে ব্যাক আপ দেয়! চেইনের শীর্ষে থাকে পাওয়ারফুল নেতারা! আজকে ১৯ জনকে শাস্তি দিলেও এই অবস্থার কোন পরিবর্তন হবে না! কারণ নতুন ১৯ জন আসবে! যারা কলকাঠি নাড়ে তারা নাড়তেই থাকবে..আমরাও চুপ থাকবো! এই সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় চেইনটাকেই ছিড়ে ফেলা!
আজকে দাবীগুলা দেখে একটু দীর্ঘশ্বাস ফেললাম! ছাত্রদল বুয়েট থেকে সনি আপুকে কেড়ে নিসে, ছাত্রশিবির বুয়েট থেকে দ্বীপ ভাইকে কেড়ে নিসে, ছাত্রলীগ কেড়ে নিলো আবরারকে! আরো কেড়ে নিসে হাজার হাজার ছেলের আত্মসম্মান, বিবেক! বিনিময়ে কিছুই দেয় নাই! ছাত্ররাজনীতি বুয়েটকে হত্যা আর নিপিড়ন ছাড়া কক্ষনো কিছু দেয় নাই! এই ছাত্ররাজনীতির কোন দরকার নাই! যদি আমরা এই পাওয়ার প্র্যাকটিস বন্ধ করতে চাই, তাহলে একমাত্র সমাধান হচ্ছে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা!
ছাত্ররাজনীতিমুক্ত বুয়েট চাই!
লেখাঃ সাইফুল বারী ইফতু, শিক্ষার্থী, বুয়েট
1 Comment
Not Only Buet but all the Educational Institutions should be unpoliticised