বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পরপর সেটিকে নিয়ে নানান প্রকার রাজনীতিও করা হয়েছে, হচ্ছে। হত্যা পরবর্তী সংবাদ শিরোনামে একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিক ঢাকা মেডিকেল কলেজের বরাতে জানিয়েছিলো যে ছাত্রের শরীরে কোন আঘাত ছিলো না।
অথচ সহপাঠিদের ভাষ্যমতে গত রাত আটটার দিকে শের-ই-বাংলা হলের এক হাজার ১১ নম্বর কক্ষ থেকে কয়েকজন ফাহাদকে ডেকে নিয়ে যায়। এর পর রাত দুইটা পর্যন্ত তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাদের ধারণা ২ হাজার ১১ নম্বর রুমে নিয়ে তাকে পিটানো হয়।
পরবর্তীতে শরীরে আঘাতের চিহ্নসহ ফাহাদের লাশের ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভেসে উঠলে ওই দৈনিক তাদের সংবাদ পরিবর্তন করে আঘাতের কথা স্বীকার করে, তবে আঘাতকারী গোষ্ঠীর নাম কৌশলে এড়িয়ে যায়।
তাদের অনেকে বলছেন যে ফাহাদকে পিটানো হয়েছে শিবির সন্দেহে। আসুন দেখি কেন তাকে এই শিবির ট্যাগ দেয়া হয়েছিলো–
অক্টোবরের ৫ তারিখ ফাহাদ স্ট্যাটাস দেয়–
“১.৪৭ এ দেশভাগের পর দেশের পশ্চিমাংশেে কোন সমুদ্রবন্দর ছিল না। তৎকালীন সরকার ৬ মাসের জন্য কলকাতা বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ করল। কিন্তু দাদারা নিজেদের রাস্তা নিজেদের মাপার পরামর্শ দিছিলো। বাধ্য হয়ে দুর্ভিক্ষ দমনে উদ্বোধনের আগেই মংলা বন্দর খুলে দেওয়া হয়েছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ ইন্ডিয়াকে সে মংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য হাত পাততে হচ্ছে।
২.কাবেরি নদীর পানি ছাড়াছাড়ি নিয়ে কানাড়ি আর তামিলদের কামড়াকামড়ি কয়েকবছর আগে শিরোনাম হয়েছিল। যে দেশের এক রাজ্যই অন্যকে পানি দিতে চাই না সেখানে আমরা বিনিময় ছাড়া দিনে দেড়লাখ কিউবিক মিটার পানি দিব।
৩.কয়েকবছর আগে নিজেদের সম্পদ রক্ষার দোহাই দিয়ে উত্তরভারত কয়লা-পাথর রপ্তানি বন্ধ করেছে অথচ আমরা তাদের গ্যাস দিব। যেখানে গ্যাসের অভাবে নিজেদের কারখানা বন্ধ করা লাগে সেখানে নিজের সম্পদ দিয়ে বন্ধুর বাতি জ্বালাব।
হয়তো এসুখের খোঁজেই কবি লিখেছেন-
পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও,
তার মত সুখ কোথাও কি আছে
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।”
তার আগে সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখ সে লেখে–
“কে বলে হিন্দুস্তান আমাদের কোন প্রতিদান দেয়না। এইযে ৫০০ টন ইলিশ পাওয়ামাত্র ফারাক্কা খুলে দিছে। এখন আমরা মনের সুখে পানি খাবো আর বেশি বেশি ইলিশ পালবো। ইনশাল্লাহ আগামী বছর এক্কেবারে ১০০১ টন ইলিশ পাঠাবো।”
ফাহাদের শেষ দুইটি স্ট্যাটাসই লেখা হয়েছে বাংলাদেশের নতজানু কূটনৈতিক নীতির গঠনমূলক এবং স্যাটিরিকাল সমালোচনা করে। এর মাঝে স্বাধীনতাবিরোধিতার বা চরমপন্থার বা উগ্রবাদ, জংগিবাদ খুজে পেতে আপনাকে হতে হবে চরম কল্পনাশক্তি সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের কোন গোষ্ঠীর সেই কল্পনাশক্তি রয়েছে এবং তার ওপরে ভর করে একজন শিক্ষার্থীকে মেরে ফেলার “হ্যাডম” রয়েছে, সেটি আমরা সকলেই জানি ও বুঝি।
তবু এই সহজ জানা বোঝার ব্যাপারটা কেউ জানবে না, বুঝবে না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ফাহাদের দেহে আঘাতের চিহ্ন খুজে পাবে না। তার মৃত্যুকে চালিয়ে দেয়া হবে আত্মহত্যা হিসেবে। তা না হলে, যদি আসলেই হত্যার ঘটনা ধরা পড়ে যায়, তবে প্রখর কল্পনাশক্তিসমৃদ্ধ ছাত্রসংগঠনটি হত্যাকারীদের বহিরাগত ঘোষণা করে শূলে চড়াবে আর তাদের শাস্তি দিয়ে জনতার বাহবা কুড়াবে। মাঝখানে পড়ে থাকবে ফাহাদের বিক্ষত মৃতদেহ এবং অতিভদ্র ভাষায় করা দুটো রাষ্ট্রের সমালোচনা।
আমাদের রাষ্ট্রে এখন রাষ্ট্রের সমালোচনা করা নিষিদ্ধ। এই নিষেধের জন্যে আইন লাগেনা, লাগে দৃষ্টান্ত–স্পেকটেকেল। ফাহাদ হলো সেই স্পেকটেকেল। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বললে কি পরিণাম হতে পারে তার হুশিয়ারি। এই জন্যে ফাহাদদের খুন করা হয়। প্রথমে তারা জেলে ভরে দেয় দেয় বিরোধীদের, তারপরে তারা চুপ করায় বিপ্লবীদের, তারপর তারা কিনে নেয় বুদ্ধিজীবিদের, তারপর তারা পোষ মানায় গণমাধ্যমকে, আর শেষে যখন তারা নিরীহ ছাত্রদের মারতে শুরু করে, তখন আর কথা বলার কেউ থাকেনা।
পৃথিবীর যেকোন রাষ্ট্রে এমন নৃশংস হত্যাকান্ডে সমাজ তোলপাড় হয়ে যেতো। আমাদের দেশে কি কিছু হবে?
হবে কি?
মুক্তিফোরামের পক্ষে সম্পাদকীয়টি রচনা করেছেন অনুপম দেবাশীষ রায়
3 Comments
Bro…আমরা সবাই কিন্তু জামাত শিবির কে মারলে তাকে ঠিক কাজ মনে করি ,কিন্তু কেন ? তারা কি নিশিদ্ব সংগঠন না কি ? ভাবতে পারেন আমি জানাত শিবির এ দেশে সব সম্ভব
চাইছিলাম share করতে সাহস পাইলাম না।
আবরার ফাহাদের স্ট্যাটাস হোক আমাদের সকলের স্ট্যাটাস