১.
ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়ার ‘ইনফ্লুয়েন্সার কালচার’, ‘ভাইরাল কালচার’ কিংবা ‘হিউমার কালচার’— এক কথায় সোশ্যাল মিডিয়া উৎপাদিত পপ কালচার ও সমাজে এর বিপুল প্রভাবের ব্যাপারে সামাজিকভাবে ক্রিটিক্যাল হওয়ার সময় আসছে সম্ভবত।
২.
এমনিতে সোশ্যাল মিডিয়া একটা রেভ্যুলুশন তো বটেই। ‘জেন-জি’ এক অর্থে সোশ্যাল মিডিয়ারই সন্তান। এর রেভ্যুলুশনারি দিক বা উপযোগগুলা নিয়া অনেক লেখালেখি বা আলাপও হইছে বিগত দিনে। কিন্তু নিওলিবেরাল অর্থনীতির ইডিওলজিকাল অ্যাপারেটাস হিসেবে বা দেবোর্দিয়ান ভাষায় স্পেক্টাকলের নতুন ধরন হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়া বা নিউ মিডিয়ারে খুব বেশি উন্মোচন ও ব্যাখ্যা করতে পারি নাই আমরা। তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিকভাবে।
৩.
বাংলাদেশে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ছিল সোশাল মিডিয়ার রেভ্যুলুশনারি ভূমিকার সর্বোচ্চ মুহূর্ত। এখন, এই নতুন বাংলাদেশে, সোশ্যাল মিডিয়ার মতাদর্শিক দিকগুলোরে খুলে খুলে দেখানো এবং হাসিনার বানিয়ে দেওয়া ডিজিটাল ফ্যাসিজম ও এর নয়া কাঠামোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
৪.
সোশ্যাল মিডিয়া উৎপাদিত পপ কালচারের একটা বৈশিষ্ট্য হইল, ভোক্তারা এটিকে মতাদর্শ-নিরপেক্ষ মনে করে। মেইনস্ট্রিম মিডিয়ারে আমরা যেমন জাজ বা ক্রিটিক করি, তার প্রত্যেকটা নিউজের শব্দচয়ন, শিরোনাম ও ফুটেজরে পরখ করি, তারে ‘সম্মতি উৎপাদন’র মেকানিজম হিসেবে দেখি— সোশ্যাল মিডিয়ার এই পপ বা ভাইরাল কালচাররে, নানা কারণে, আমরা সেভাবে দেখি না/দেখতে পারি না।
সাধারণত একটা মিম পেজ, ফান পেজ, ক্রাশ অ্যান্ড কনফেশন পেজ বা একজন ভাইরাল ইনফ্লুয়েন্সাররে সোশ্যাল মিডিয়া ইউজাররা, মানে আমরা, খুবই মতাদর্শ-নিরপেক্ষভাবে কনজ্যুম করি। আবার যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়ার এই বিপুল কন্টেন্টের দুনিয়ায় পরিচয় গোপন রাখারও একটা দুর্দান্ত সুযোগ আছে (যেটা মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার অতোটা নাই), ফলে কন্টেন্টগুলারে ‘মতাদর্শ-নিরপেক্ষ’ভাবে ভোগ করা ছাড়া উপায়ও থাকে না বেশিরভাগ সময়।
সোশ্যাল মিডিয়ার এই পপ কন্টেন্ট কালচার তার মতাদর্শিক সম্মতি উৎপাদন জারি রাখে ঠিকই; কিন্তু এর সার্কুলেশন প্রক্রিয়ার বৈচিত্র্য, উৎপাদক-ভোক্তা সম্পর্কের ধরন ও গতিপ্রকৃতি এবং যোগাযোগের জটিল ও বহুস্তরিক কাঠামোর কারণে, আমরা এর সম্মতি উৎপাদন প্রক্রিয়াটারে সাধারণত চিহ্নিত করতে পারি না; মতাদর্শ-নিরপেক্ষ হয়ে পরোক্ষভাবে আমরা এরে হজম করি। বা বলা ভালো, সে-ই আমাদের হজম করে।
৫.
কিন্তু আদতে এগুলো মোটেই মতাদর্শ-নিরপেক্ষ কোনো ব্যাপার না। সোশাল মিডিয়ার পপ কন্টেন্ট কালচার ভয়াবহরকম ব্যবসাবান্ধব জিনিস; তাই নিওলিবেরাল পুঁজির নিজের স্বার্থেই এর বিকাশ উর্ধ্বমুখী। সে একদিকে নিওলিবেরাল পুঁজির অবাধ বিকাশ ও টিকে থাকার যুক্তিগুলারে পুনরুৎপাদন করে; অন্যদিকে, এর সহায়ক ও উদ্বৃত্ত হিসাবে বিবিধ মতাদর্শের বিকাশে ভূমিকা রাখে।
৬.
হাসিনার আমলে শুরু হওয়া ‘টেকনো-ফ্যাসিজম’ বা ‘ডিজিটাল ফ্যাসিজম’র মতাদর্শিক দিকটারে আমরা আগে অতোটা গুরুত্ব দিই নাই; কারণ তখন সোশ্যাল মিডিয়া হাসিনার ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের একটা গুরুত্বপূর্ণ টুলও ছিল বটে। আমরা সোশ্যাল মিডিয়ার গণতান্ত্রিক সম্ভাবনাগুলারে এক্সপ্লোর করছিলাম তখন। তাছাড়া হাসিনার ফ্যাসিজমে রাজনীতি নাই হয়ে যাওয়ায়, সোশ্যাল মিডিয়ার এই পপ কালচারে ডুবে ছিলাম আমরা সবাই; এর মতাদর্শিক দিকগুলাও আমাদের সামনে স্পষ্ট হতে পারে নাই অতো।
তবে এখন আমরা জানি যে, হাসিনার এনটিএমসি ইন্টারনেট ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। এবং ওই প্রযুক্তিগুলা এখনো সক্রিয়।
৭.
৫ আগস্টের পর একটা বয়ান প্রায়ই দেখবেন যে, ছাত্র সংগঠনগুলা মারামারি না করে অনলাইনে তর্কবিতর্ক করছে, এটা খুব ভালো ও ইতিবাচক একটা পরিবর্তন। হয়ত। কিন্তু এটাও ঠিক যে, ফিজিকালি একজন মানুষকে আঘাত করার যে ক্ষতি, শত শত মিম পেজ, ফেক আইডি ও ফেক পোর্টাল দিয়ে ওই মানুষটার বিরুদ্ধে নানাবিধ কুরুচিপূর্ণ কন্টেন্ট উৎপাদন করে তাকে একটা দেশব্যাপী সামাজিক ঘেন্না ও আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করে তোলা তারচে কোনো অংশেই কম ক্ষতিকর না। এবং সেইটা হচ্ছে।
যুক্তিতর্কের বিকল্প হিসেবে ভায়োলেন্স খারাপ। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার ‘বট কালচার’-ও ডায়ালগের বিকল্প না আসলে। বরং এই বট কালচারের গন্তব্য শেষমেশ ওই ভায়োলেন্সই।
৮.
ফলে ডিজিটাল কনটেন্ট, ডিজিটাল কালচার কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার উৎপাদিত পপ কালচাররে আমাদের গ্লোবাল সার্ভেইলেন্স ক্যাপিটালিজম, টেকনো-ফ্যাশিজম ও নিওলিবেরাল ইকোনমির মতাদর্শিক লেন্স দিয়ে দেখার ও মোকাবেলা করার সময় আসছে সম্ভবত। এখনই যদি আমরা যোগাযোগের এই নয়া মধ্যমের নৈতিক দায় নিয়ে আলাপ তুলতে না পারি, তাইলে ভবিষ্যতে আমাদের ভুগতে হবে।
৯.
এ সংক্রান্ত একটা রিডিং লিস্ট নিচে দিলাম। লিস্টের বইগুলা মূলত ডিজিটাল যামানার সোশ্যাল মিডিয়াকেন্দ্রিক সংস্কৃতির মতাদর্শিক ও ব্যবহারিক দিকগুলারে আমাদের সামনে ফর্শা করে তুলবে।
১. গাই দেবোর্দ— দ্য সোসাইটি অব দ্য স্পেক্টাকল (১৯৬৭)। আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজ ও সামাজিক সম্পর্কগুলা জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে না, বরং কিছু বানানো দৃশ্য, ছবি, চিত্র ও মিডিয়া রিপ্রেজেন্টেশনের আলোকে পরিচালিত ও পরিগঠিত হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ারেই দেবোর্দ বলছিলেন ‘স্পেক্টাকল’ বা ‘প্রদর্শনীসর্বস্ব সমাজ’। মার্ক্স-কথিত ‘কমোডিটি ফেটিশিজম’ এই সমাজের কেন্দ্রীয় চালিকাশক্তি।
২. লুই আলথুসার— ইডিওলজি অ্যান্ড ইডিওলজিকাল স্টেট অ্যাপারেটাস (১৯৭০)। রাষ্ট্র তার হেজিমনি টিকিয়ে রাখার জন্য কীভাবে মতাদর্শ বা ভাবাদর্শ উৎপাদন ও পুনরুৎপাদন করে চলে— এই ক্ল্যাসিকাল টেক্সটে তার সূত্র আবিষ্কার করছিলেন কাঠামোবাদী মার্ক্সিস্ট লুই আলথুসার।
৩. শোশানা জুবফ— দ্য এজ অব সার্ভেইলেন্স ক্যাপিটালিজম (২০১৯)। পুঁজি কী? মার্ক্সের সংজ্ঞা মোতাবেক, যেকোনো পণ্যের উদ্বৃত্ত মূল্য বা সারপ্লাস ভ্যালুই হইল পুঁজি৷ শোশানা জুবফ আবিষ্কার করেন ‘সার্ভেইলেন্স ক্যাপিটালিজম’। বিগ টেকগুলা (গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদি) মানুষের অভিজ্ঞতা ও আচরণগত গতিবিধিরেই তথ্য সংগ্রহ ও উৎপাদনের কাঁচামালে পরিণত করছে৷ এই প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল দুনিয়ায় বিবিধ পদ্ধতিতে যুক্ত মানুষের বিহেভিওরাল ফুটপ্রিন্টই হইল পুঁজির কাঁচামাল। এবং এই কাঁচামালকে কাজে লাগায়ে, মানুষের ভবিষ্যত আচরণ, পছন্দ, গতিবিধি ইত্যাদি অনুমান বা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে যে মুনাফা বা সারপ্লাস ভ্যালু ছেঁকে নেওয়া হচ্ছে, জুবফের ভাষায় এইটাই হইল ‘সার্ভেইলেন্স ক্যাপিটালিজম’।
এটা এমন এক জগৎ, যেখানে মানুষের মন ও মস্তিষ্ককে সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে রাইখা, সেখান থেকে উৎপাদিত উদ্বৃত্ত তথ্যভাণ্ডারকে কাজে লাগিয়ে মুনাফা তৈরি করা হয়।
এই প্রক্রিয়ায় বিগ টেকগুলো মানুষের প্রাইভেসিতে হানা দিয়া তাদের আচরণ, পছন্দ, মতামত ও ধারণার উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে; এবং এই নিয়ন্ত্রিত মানবসমাজকে তারা আরো বেশি মুনাফার জন্য লগ্নি করে।
৪. জোডি ডিন— ব্লগ থিওরি (২০১০)। জোডি ডিন এই বইতে দেখান যে, ব্লগ বা সোশাল মিডিয়ায় আমাদের যোগাযোগের ধরনটাই খোদ একটা কমোডিটি বা পণ্য। সোশাল মিডিয়ায় আমাদের যোগাযোগ কেবল পারস্পরিক মতবিনিময় না, বরং এটা ঘটে একটা নিরন্তর সার্কুলেশন, প্রচার ও প্রসার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। সার্কুলেশনের এই অনন্ত লুপ আমাদের মন ও মগজের উপর পুঁজির দখলরে আরো শক্ত করে, ডিনের ভাষায় যার নাম ’কম্যুনিকেটিভ ক্যাপিটালিজম’।
এর ফলে কী ঘটে? আমরা সোশাল মিডিয়ার যে অ্যাক্টিভিটিগুলারে আমাদের সচেতন বা স্বাধীন কাজ বইলা ভাবি, আদতে সেগুলা আমাদের চারপাশে স্বাধীনতা বা গণতন্ত্রের একটা ইল্যুশন তৈরি করে মাত্র। আমরা ‘কম্যুনিকেটিভ ক্যাপিটালিজম’র দাস হিশাবে ফ্রি লেবার খাটতে থাকি।
ডেমোক্রেসি অ্যান্ড আদার নিওলিবেরাল ফ্যান্টাসিজ (২০০৯)। জোডি ডিনের এই বইয়ের আর্গুমেন্টও কাছাকাছি। ‘কম্যুনিকেটিভ ক্যাপিটালিজম’ কীভাবে বিভিন্ন নিওলিবেরাল মূল্যবোধরে এক ধরনের ফ্যান্টাশিতে রূপান্তরিত করছে, এবং বাস্তব পরিবর্তনরে ঠেকায়ে রাখছে— সেটাই এই বইতে দেখানোর চেষ্টা করছেন উনি।
৫. ক্রিশ্চিয়ান ফুকস— সোশাল মিডিয়া: আ ক্রিটিক্যাল ইন্ট্রোডাকশন (২০১৭)। এই বইতে ক্রিশ্চিয়ান ফুকস সোশাল মিডিয়ার ‘মতাদর্শ-নিরপেক্ষ’ চেহারার আড়ালে লুকানো পলিটিকাল ইকোনমি, ক্ষমতাসম্পর্ক ও মতাদর্শিক প্রকল্পগুলা উন্মোচন করছেন। সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে সংগঠিত বিপ্লবী তৎপরতাগুলার (আরব বসন্ত বা অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট) সীমাবদ্ধতাও নির্দেশ করছেন তিনি।
ডিজিটাল ক্যাপিটালিজম (২০২১)। ডিজিটাল শ্রম, যোগাযোগের পণ্যায়ন ও প্লাটফর্ম উপনিবেশবাদের মাধ্যমে কীভাবে ডিজিটাল মিডিয়া নতুন ধরনের পুঁজিবাদ ও পুঁজিবাদের উপযোগী সংস্কৃতি নির্মাণ করছে, এই বইতে মার্ক্সের থিওরি কাজে লাগিয়ে সেই দিকে আলো ফেলছেন ফুকস।
ডিজিটাল ফ্যাশিজম (২০২২)। অ্যাডোর্নো, নিউম্যান, এরিখ ফ্রমসহ অন্যান্য ক্রিটিকাল থিওরিস্টদের বরাতে ফুকস এই বইতে দেখাইছেন যে, কীভাবে ডিজিটাল প্লাটফর্মগুলোর যোগাযোগপদ্ধতি ব্যবহার কইরা ফ্যাসিজম, রাইট উইং পপুলিজম, জেনোফোবিয়া ইত্যাদি মতাদর্শরে নতুন ভাবে ও যুক্তিপদ্ধতিতে হাজির করা হচ্ছে; এবং কীভাবে ধীরে ধীরে একটা ডিজিটাল ফ্যাসিজম আমাদের গ্রাস করছে।
৬. নিক সিরনিচেক— প্লাটফর্ম ক্যাপিটালিজম (২০১৭)। সিরনিচেক এই বইতে দাবি করেন যে, টেকনোলজির যুগে ডাটাই হইল ক্যাপিটাল; আর ডিজিটাল প্লাটফর্মগুলা ক্যাপিটালিজমের নয়া বিবর্তন।
৭. জোসে ভ্যান ডাইক— দ্য কালচার অব কানেক্টিভিটি: আ ক্রিটিক্যাল হিস্ট্রি অব সোশাল মিডিয়া (২০১৩)। ফেসবুক, টুইটার, ফ্লিকার, ইউটিউব ও উইকিপিডিয়া— পাঁচটা গুরুত্বপূর্ণ সোশাল প্লাটফর্ম বিশ্লেষণ করে, ভ্যান ডাইক এই বইতে একটা নতুন অর্থনৈতিক, মতাদর্শিক ও সাংস্কৃতিক ফেনোমেনা হিশাবে সোশাল মিডিয়ার উদ্ভব ও বিকাশকে বিশ্লেষণ করছেন।
৮. ইভগেনি মরোযভ— দ্য নেট ডিল্যুশন: দ্য ডার্ক সাইড অব ইন্টারনেট ফ্রিডম (২০১১)। মরোযভের এই বই দাবি করে যে, সোশাল মিডিয়ারে একটা গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল টুল ভাবাটা আশলে আমাদের ভুল ছিল। বরং নজরদারি, নিয়ন্ত্রণ, প্রোপাগাণ্ডা ও ইডিওলজিকাল অ্যাপারেটাসের পুনরুৎপাদনের মাধ্যমে, সোশাল মিডিয়া প্রায়শই ভয়াবহ কর্তৃত্ববাদী শাসনের ভিতটারে শক্ত করতে থাকে।
৯. জেইনেপ তুফেকচাই— টুইটার অ্যান্ড টিয়ার গ্যাস (২০১৭)। সোশাল মিডিয়া কীভাবে অ্যাক্টিভিজম ও আন্দোলনের চরিত্র পালটে দিছে, গোটা দুনিয়াব্যাপী, সোশাল মিডিয়াভিত্তিক অ্যাক্টিভিজম ও আন্দোলনগুলার মধ্যে মতাদর্শিক ও বাস্তবিক কী কী ধরনের চেঞ্জ আসছে, এবং এটা কীভাবে নিওলিবেরাল জামানার আন্দোলনগুলারে প্রভাবিত করছে, ইতিবাচক ও নেতিবাচক অর্থে,— তুফেকচাই এই বইতে তা তুলে ধরতে চাইছেন।
১০. টার্লেটন গিলেস্পি— কাস্টোডিয়ানস অব দ্য ইন্টারনেট (২০১৮)। কন্টেন্ট মডারেশন সিস্টেম ও অ্যালগরিদম কীভাবে সোশাল মিডিয়ার কার্যপ্রক্রিয়া ও মতাদর্শ উৎপাদন প্রক্রিয়ারে গোড়া থেকে প্রভাবিত করে রাখছে, সেটাই গিলেস্পির এই বইয়ের প্রধান বিষয়বস্তু।
১১. সারাহ বানেট-ওয়েইজার— এম্পাওয়ার্ড: পপুলার ফেমিনিজম অ্যান্ড পপুলার মিসোজিনি (২০১৮)। সোশাল মিডিয়ায় পুনর্গঠিত ও পুনরুৎপাদিত পপুলার ফেমিনিজম কীভাবে একই ধরনের পপুলার মিসোজিনি উৎপাদন করছে, এবং এই দুইয়ের অভিঘাতে কীভাবে নিওলিবেরাল অর্থনৈতিক কাঠামো ও যুক্তিপদ্ধতি পুনরুৎপাদিত হচ্ছে— সারাহ ওয়েইজারের এই বইতে সেটাই উঠে আসছে।
১২. বুং-চুল হান— ইন দ্য সোয়ার্ম: ডিজিটাল প্রসপেক্টস (২০১৭)। বুং-চুল হান এই বইতে বলতে চাইছেন যে, ডিজিটাল প্লাটফর্ম ও সোশাল মিডিয়া সমাজে অর্থবহ যোগাযোগ ও কম্যুনিটি তৈরির প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে; এবং স্থিতিশীল সমাজের বদলে একটা ‘মব’ মানসিকতা ও তাৎক্ষনিকতায় আক্রান্ত সমাজ তৈরি করছে।
১৩. টেক গ্লোবাল ইন্সটিটিউট— দ্য ডিজিটাল পুলিশ স্টেট: সার্ভেইলেন্স, সিক্রেসি অ্যান্ড স্টেট পাওয়ার ইন বাঙলাদেশ (২০২৫)। TGI-এর এই রিপোর্টে বিস্তারিত উইঠা আসছে, কীভাবে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট রেজিম বাংলাদেশকে একটা ডিজিটাল পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করছে।
তুহিন খান। কবি ও লেখক।