আমরা সবাই জানি ডিসেম্বর এর শুরুতে ভারতের লোকসভায় বর্তমান শাসক দল বিজেপি কতৃক “নাগরিকত্ব সংশোধনি আইন ২০১৯” নামে একটি আইন পাশ করা হয়েছে। যা নিয়ে সমগ্র ভারতের বিভিন্ন অংশে বিক্ষোভ করছে নাগরিকেরা এবং এর বাইরেও বিভিন্ন দেশে চলছে এই আইনের আলোচনা-সমালোচনা।

প্রশ্নো হতে পারে ভারতের একটি আইন তো তাদের আভ্যন্তরীন বিষয়, এটি নিয়ে আমরা বাংলাদেশিরা কেন কথা বলবো?

আমাদের কথা বলতে হবে এ জন্যই কারন এই আইনের ২ নং সেকশনে আফগানিস্থান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান হতে ভরতে আগত হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি এবং খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান করবে বলে বলা হয়েছে।

আমরা জানি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভিনদেশিদের নাগরিকত্ব প্রদানের আইন বা বিধি বিধান রয়েছে।
কিন্তু ভারতের নাগরিকত্ব আইনে নির্দিষ্ট করে শুধুমাত্র আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান এই তিনটি দেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি এবং খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদানেরর কথা বলা হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের উক্ত ধর্মের অনুসারি নাগরিকদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদানের কথা বলা হয়নি। অর্থাৎ দুবাই অথবা কানাডা বা অন্যান্য দেশ হতে আগত কোন হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি এবং খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ভারত নাগরিকত্ব প্রদান করবে না।

যার ফলে এটি একটি আঞ্চলিক ধর্মীয় বৈসম্যমূলক আইনে পরিনত হয়েছে। এবং বাংলাদেশ ও অন্য দুটি দেশের মুসলমান ও ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মাঝে জাতীগত বিভেদ তৈরীর চেষ্টা করা হয়েছে।

এছাড়াও এই আইনে objects & reasons এ স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, পাকিস্তানের সংবিধানে একটি বিশেষ ধর্মকে প্রধান্য দেয়ায় এসকল দেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি এবং খৃষ্টান ধর্মের অনুসারিরা স্বাধীন ভাবে তাদের নিজ ধর্ম ও আচার আচরন উৎসব পালন করতে পারছেনা, প্রতিনিয়ত নির্যাতনের স্বীকার হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব দেশে বসবাস করছে।

এই কথাগুলোর মধ্য দিয়ে ভারত স্পষ্টভাবে বাংলাদেশের সংবিধানকে যেমন হেয় প্রতিপন্ন করেছে একই ভাবে আফগানিস্থান ও পাকিস্তানের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও একটি ধর্মীয় উগ্রবাদি রাষ্ট্র হিসেবে চিন্হিত করেছে।

অথচ আমাদের বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকারে প্রতিটি ধর্মের নাগরিকদের নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার কথা স্পষ্ট ভাবে বলা আছে।

এক কথায় ভারতের এই আইনে বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আক্ষা দেয়া হয়েছে যা কি বাংলাদেশের এবং এর নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত লজ্জানক এবং আন্তর্জাতিক শিষ্ঠাচার বহিভূত।

কারন বাংলাদেশ কোন আইসিস বা তালেবান শাসিত রাষ্ট্র নয়, এখানে সকল ধর্মের মানুষের সম্প্রীতি বজায় রেখে সকলে বসবাস করছে।

প্রতিবেশি রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের এধরনের সাম্প্রদায়িক উষ্কানিমূলক আইন প্রনোয়ন বাংলদেশ সমগ্র দক্ষিন এশিয়ার ধর্মীয় সম্প্রীতিতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে যেকোন মুহুর্তে।

তাই ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের উচিত ভারতের এমন বর্ণবাদী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা।

এবং আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের উচিত অতিসত্বর বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে প্রশ্নোবিদ্ধ আইন প্রনোয়ন করায় ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর কুটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহন করা। কারন একটি রাষ্ট্র কখনো অন্য আরেকটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সংবিধান নিয়ে এধরনের বর্ণবাদী আইন প্রনোয়ন করতে পারে না।

আজ যদি বাংলাদেশের সংসদে ভারতের নাম ও ভারতীয় সংবিধানের আর্টিক্যাল ৩৭০ উল্লেখ করে কাশ্মিরের নির্যাতিত মুসলিমদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়া হবে বলে আইন পাশ হত তবে ভারতীয় সংবিধানকে হেয় করে আইন করায় বাংলাদেশের প্রতি ভারত কি পতিক্রিয়া দেখাত একবার চিন্তাকরে দেখুন তো?

তাই ভারতীয় বর্ণবাদী আইনের বিরুদ্ধে সকলে স্বোচ্চার হোন।
কারন আমরা কখনোই চাইনা ভারতের কারনে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকটের মত আরেকটি নতুন শরনার্থী সংকটে পড়ুক।

বাংলাদেশ হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্টান সহ সকল ধর্মের অনুসারীদের সম্প্রীতির একটি দেশ। এবং এই সম্প্রীতি বজায় রাখা ও সম্প্রীতি নষ্টের চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো আমাদের সকলের দায়িত্ব।

Share.

আবু রাইহান মুক্তিফোরামের একজন সম্পাদক ও সংগঠক

Leave A Reply