আজ কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উহান থেকে প্রথম ফ্লাইটে ফেরত ৩৬১ জন বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে যে সমালোচনা চলছে, তা দেখে খুবই লজ্জা লাগছে।
প্রথমে আসি এই ছাত্রছাত্রীরা কারা?
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ শিক্ষা, গবেষণা ও আবিষ্কারের লক্ষে সর্বোচ্চ সম্মান ও আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে মেধাবীদের আকর্ষণ করে থাকে। সারা পৃথিবীর পণ্ডিতদের তাদের গবেষণা প্রতিষ্ঠান গুলোতে গবেষণার কাজে লাগিয়ে থাকেন।
যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের Fulbright Scholarship, জাপানের MEXT, South Korea এর KGSP, ইত্যাদি। ঠিক একইভাবে চায়নার সরকারি scholarship হোল Chinese Government Scholarship (CSC). এই scholarship টি মূলত পৃথিবীর স্বনামধন্য Scholarship গুলোর মধ্যে অন্যতম। এই Scholarship টি তারাই পেয়ে থাকে যারা কোন না কোনদিকে জগত বিখ্যাত (distinguished in their field).
হ্যাঁ, ঠিক উহান ফেরত ছাত্রছাত্রীরা ওই কাতারের পণ্ডিত। আপনি না মানলে তাদের কিছু আসে যায় না। তাদেরকে চাইনিজ সরকার দাওয়াত করেই নিয়ে এসেছে। চীনের সরকার তাদেরকে ঠিকই চিনেছে, ভুল করেনি। আপনার দেওয়া চারিত্রিক, সামাজিক বা মেধা প্রমাণের সার্টিফিকেট তাদের লাগবে না। তাঁরা নিজের পরিচয়ে নিজের যায়গা করে নেওয়ার সামর্থ্য রাখে। কোন মামা, খালু, চাচা, বা বড় ভাইদের পাশে দাড়িয়ে ছবি তুলে ফেসবুক রাজনীতিও তাদের দরকার নেই।তাঁরা scholarship অর্জনকারি বলেই বলছি এমনটি নয়। কোন নাগরিকের দায়িত্বই সরকার এড়িয়ে যেতে পারে না। প্রত্যেকটি নাগরিকের দেখভালের দায়িত্ব সরকারের উপর বর্তায়।
আর হ্যাঁ, এরা যখন দুনিয়া কাঁপানো আবিষ্কার বা বড় কোন অর্জন করবে তখন সবাই ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নিজেদের সন্তান বলে দাবি করবে। বিদেশীদের কাছে গিয়ে নিজেরা ক্রেডিট নেওয়ার চেষ্টা করবে আবার ক্রেডিট নিয়েও নিবে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবিষ্কারক টিম নাসায় না যেতে পারলেও আমলারা কিন্তু ঠিকই নাসা ঘুরে এসেছে আবিষ্কারক দের সাথে না নিয়েই।
এখন কথা হচ্ছে, তাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়া হোল কেন এবং এতে করে রোগ ছড়িয়ে নাকি বাংলাদেশের মহান ব্যক্তিত্বগুলো মরে যাবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে কতিপয় ব্যক্তিত্বরা যেভাবে মন্তব্যের ঝড় তুলেছে, যেভাবে তাঁরা গালিগালাজ, এবং জ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন তাতে করে মনে হচ্ছে। যে উহান ফেরত যারা তাঁরা তাদের মাতৃভূমি আপনাদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। আবার এটাও শোনা যাচ্ছে যে তাঁরা নাকি রাস্তায় প্রতিবাদ মিছিল বের করবে, যাতে চায়না থেকে বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের দেশে ফিরতে দেওয়া না হয়। কত খানি মস্তিষ্ক বিকৃত হলে এই কথাগুলো বলা যায়!
এগুলো বলার আগে, দেখুন নিচের পয়েন্টগুলোঃ-
- তাঁরা দেশের সূর্য সন্তান, তাঁরা দেশের সম্পদ, তাঁরাই দেশের ভবিষ্যৎ।
- ওই ছোট্ট দেশের মধ্যেই ভিনদেশী ১০ লাখেরও অধিক রোহিঙ্গা কয়েক বছর ধরে আমাদের পকেট থেকে দেওয়া tax এর টাকায় খেয়ে পড়ে বংশবিস্তার করেই চলেছে।
- তাদের থাকার জন্য অনেকগুলো ক্যাম্প, ঘর-বাড়ি বানানো হয়েছে।
- হাজার হাজার প্রকল্প আর টাকা নষ্টের এলাহী কান্ড কারখানা ওই দেশেই দেখা যায় যেগুলো বিদেশী remittance এর উপর নির্ভরশীল।
৩০০-৫০০ ছাত্রছাত্রীদের থাকা-খাওয়া আর ১৪ দিনের দায়িত্ব সরকার নিতে পারবে না কেন? তাদেরকে কোন নিরিবিলি স্থানে কেন নিতে পারবে না? সারা দেশ মিলে কেন কয়েকশ ছাত্রছাত্রীর দেখভাল করা সম্ভব হবে না? তাও আবার সীমিত সময়ের জন্য। তাঁরা তো কোন রোগী নয়, শুধু নিরীক্ষণ উপলক্ষে তাদেরকে রাখা।
কেন তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় না তা খুবই পরিষ্কার। উহান থেকে যখন বাংলাদেশে এই ছাত্রছাত্রীদের নেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে বিবৃতি দেওয়া হয়। ঠিক তখন বাংলাদেশের মানুষজনকে খুশি করাও হোল। আবার বড় একটা বিল পাশ করাও গেল যেখান থেকে বড় বাবুদের পকেট ভারীও হল। কিন্তু যখনই ছাত্রছাত্রীদেরকে দেশে নিয়ে আসা হোল, ততক্ষণে বাবুদের দু-পয়সা কামানো শেষ। সুতরাং এবার ছাত্রছাত্রীদেরকে কোথায় রাখা হবে না হবে ওই অধ্যায় খতম। ফলাফল যা হবার তাই হোল। এক রুমে কয়েক ডজন করে দেওয়া হলো।
আপনারা যদি সত্যই শিক্ষিত ও বিবেকবান মানুষ হতে পাড়তেন, তাহলে কথাটা অন্যভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরতে পাড়তেন। যেমন, আপনারা দাবি তুলতে পারতেন, যে যারা ফেরত আসছে তাদেরকে ঢাকার কোলাহলের বাহিরে কোন না কোন অবকাশ যাপন বা কোন না কোন স্থানে নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য নিরাপদ দূরত্বে রাখা হোক। যাতে করে তারাও ভালো থাকে আবার সংক্রমণও যাতে না হয়।
তা না করে, মন্তব্য গুলো দেখে এটাই প্রতীয়মান হয় যে বাংলাদেশ নামক দেশের অভ্যন্তরে এক ভয়াবহ, জঘন্য, মারাত্মক, বিভিশিকাময় নীতি-নৈতিকতাহীনতার ব্যাধি ভর করে বসেছে। যা ধীরে ধীরে ওই সমাজকে একটা নষ্ট সমাজের প্রতিকৃতীতে রূপান্তর করেছে, করছে, এবং করতেই থাকবে।
লেখকঃ- শরীফ মোল্লাহ বেইজিং নরমাল ইউনিভার্সিটির একজন পিএইচডি গবেষক
1 Comment
লেখকের তীক্ষ্ণ হৃদয়স্পর্শী বক্তব্যের বিপরীতে কিছু লিখতে চাওয়ার মতো দুঃস্বাহস নেই আমার.উনার প্রতিটি বিশ্লেষণের ইতিবাচক কোন সমালোচনা করার যুক্তি যদি কারো থেকে থাকে এখানে শেয়ার করুণ. আর আমরা হাজার বছরের ( কিছু ছাপোষা তথাকথিত নৈতিকতা বিবর্জিত বুদ্ধিজীবীরা হর হামেশা যা উদ্গিরণ করে যাচ্ছেন বিভিন্ন মাধ্যমে) ঐতিজ্যবাহী সংস্কৃতির ধারক বাহক বাঙ্গালী আসলে কখনো সভ্য জাতি ছিলোই না.