এই যে মেয়েটার ছবি দেখছেন। ওর নাম ডলি। ডলি বেগম। নামে ও চেহারায় নিখাদ এ বাঙালি মেয়েটা অন্টারিও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত সংসদ সদস্য MPP, মানে মেম্বার অব দি প্রভিনশিয়াল পার্লামেন্ট!
বাংলাদেশে জন্ম নেয়া এই শুকনো শ্যামলা মেয়েটি টাকা চোরদের শায়েস্তা করতে মেরুদন্ড সোজা করে, মাথা উঁচু করে দাড়িয়েছে। কানাডার গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ অন্টারিও’র সংসদে এনডিপি প্রধান বিরোধী দল। ডলি’র দল এনডিপি’র সংসদীয় দলের বৈঠকে সিন্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশের ব্যাংকের টাকা মেরে আসা চোরদের সায়েস্তা করতে সংসদে আলাচনা করতে হবে। সিন্ধান্ত নিতে হবে পালিয়ে আসা এ সব লুটেরারা কানাডায় থাকতে পারবে কি’না? যদি প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় সরকারের আইনের কোন ফাঁক-ফোকর থাকে সেগুলো নিয়ে বাৎচিত করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে। এমটাই হবে সে আলোচনার বিষয়।
তারমানে টাকাচোরদের কাহিনী কানাডার প্রাদেশিক পার্লামেন্টে উঠছে! কানাডায় ইতিহাস সৃষ্টিকারী প্রথম বাংলাদেশী মেয়ে ডলি’র মাধ্যমেই ঘটতে যাচ্ছে আরেকটি যুগান্তকারী ঘটনা। সামাজিক এ আন্দোলন গড়াতে চলেছে আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক ধারায়। এটা আমাদের আন্দোলনের আরেক ধাপ অগ্রগতি।
তাহলে কি হলো? আমরা যে রাস্তায় বরফের উপর দাড়িয়ে লুটেরাদের না বলেছি, সমাবেশ করেছি, এখন তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাদেশিক সরকারের কানে যাচ্ছে। কিন্তু যারা বলেছিলেন, এগুলো করে কিছুই হবে না, এবং আজও যারা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব-বিভ্রান্তি-বিভক্তি ও অপপ্রচারে আছেন, তারা কানাডায় গড়ে ওঠা ইতিহাসের এই গৌরব থেকে বঞ্চিত হলেন, ছিটকে পরলেন।
লুটেরাদের তো দুইকান কাটা লজ্জাহীন ইতর। নিজ দেশের কন্যাসম এক মেয়ে এসব বুড়া চোরদের বিরুদ্ধে সংসদে অভিযোগ আনবে, শায়েস্তার কথা বলবে, তারপরও তারা বেঁচে থাকবে? আমি ভাবছি ডলির কথা, ওর কেমন লাগবে মাতৃভূমির এসব চোরদের নিয়ে কথা বলতে? নিজেকে কি একটু ছোট মনে হবে? মনে হলেও- তথাকথিত আত্মসম্মানের কথা বাদ দিয়ে ডলি আত্মমর্যাদা নিয়ে বাংলাদেশের প্রতারিত-বঞ্চিত মানুষের স্বার্থর পক্ষে কাজ করবেন। বিশ্বের বাঙালি অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখবে ডলির দেশাত্ববোধ ও দায়িত্ববোধ।
বিভিন্ন দেশে বাঙালি রাজনীতিক আছেন। ইংল্যান্ডে তিনজন বাংলাদেশী বংশদ্ভুদ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আছেন। সে সব দেশেও টাকা পাচার হচ্ছে, লুটেরাদের অবস্থান আছে কিন্তু তাদের এমন বিলের কথা, ভাবনার কথা শুনিনি। ডলি তৈরী করতে যাচ্ছে ভিনদেশে বাঙালির স্বার্থের পক্ষে এক অনুকরণীয় নজীর। এ সব লুটেরাদের প্রশ্নে নিরব থাকলেই তার নির্বাচনী তহবিলে বড় অংক চলে আসতো কিন্তু সে কথা সে কল্পনাও করেনি! কানাডার মূলধারার একজন সম্ভবনাময় তরুণ রাজনীতিক হিসেবে তারজন্য বিষয়টি স্পর্শকাতর হলেও তিনি তার পিতৃভূমির স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
মাঝে মাঝে খুব আলোকিত মানুষের ফেরীওয়ালার কথা মনে হয়! ইউরোপ-আমেরিকার অভিবাসিরা দেশে টাকা না পাঠানোয় তিনি তাদের অমানুষ বলে গালি দেন। তাদের পাসপোর্ট বাতিল, প্রবাসী করের পরামর্শ দেন। কিন্তু দেশের লুটপাট, অনিয়ম, অনাচারে তিনি নিরব! প্রবাসীদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা লুটেরাদের পাচারে কোন কথা নেই। বিদেশের মাটিতে প্রবাসীদের একহাত, কিন্তু দেশের মাটিতে নিশ্চুপ! বড়ই অদ্ভুদ সে আলোর রশ্মি যা প্রদীপের পাদদেশেই পৌছায় না!
আন্দোলনের শুরুতে লিখেছিলাম কানাডায় লুটেরাদের শান্তির জীবন হবে ফেরারী। এখন তাদের ঘাম ছুটছে, সামনে দূর্দিন! এখানে থাকলেও তাদের জীবন এখন স্বস্তির নয়। সহসাই ওদের কুকীর্তি জানবে এদেশের জনগণ। লুটেরা বিরোধী সংগ্রামে ডলি’র নাম ইতিহাসে আলাদা হয়েই থাকবে। তোমাকে অভিবাদন।
মন্জুরে খোদা টরিক, অধ্যাপক ও গবেষক, ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়, টরোন্টো, কানাডা।
1 Comment
Great content! Super high-quality! Keep it up! 🙂