মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০০ টাকা মুদ্রামানের নতুন নোট ছাড়া হবে। প্রথমে মনে হয়েছিল এটা স্মারক নোট হবে, কিন্তু এখন বলা হচ্ছে এটা লেনদেন ও স্মারক উভয় ধরনের হবে, একবছর পরে স্মারক নোট বন্ধ হয়ে লেনদেনের নোট সচল থাকবে।

যেহেতু আর্থিক খাতকে ক্যাশলেইস করার একটা ধারা তৈরি হয়েছে তাই পেমেন্ট সিস্টেমকে কিভাবে আরো বেশি নগদমুক্ত করা যায় তার চেষ্টায় থেকে মুজিববর্ষের ২০০ টাকা নোট একটি সম্মানসূচক স্মারক নোটেই সীমাবদ্ধ থাকা ভালো। মুজিব বর্ষের স্মারক হিসেবে পেমেন্ট গেইটওয়ে, ন্যাশনাল পে সুইচ-এনপিএসবি বা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্র্যান্সফার-বিইএফটিএন ইত্যাদি পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মে উচ্চ ক্যাপাসিটি ও উচ্চ নিরাপত্তা কিংবা আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশনের (পিসিআই ডিএসএস) ব্যবস্থা করার ঘোষণা আসলে সেটা বরং আরো বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারতো।

যেখানে দুই, পাঁচ, দশ, বিশ, পঞ্চাশ, একশ, পাচশ ও হাজার টাকার নোটের সামনে পিছনে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ও হলোগ্রাম রয়েছে সেখানে একই বৈশিষ্ট্য নিয়ে আরেকটি নতুন নোট কেন দরকার? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মানিত করতে ছবি ও হলোগ্রাম যুক্ত সত্তর টাকার স্মারক নোটও রয়েছে। তথাপি সম্মান জানানোর জন্য বড়জোর আরেকটি বড় মুদ্রামানের নোটের স্মারক মূদ্রাই যথেষ্ট।

বাংলাদেশে নতুন নোট নকশার মূল উদ্দেশ্যই যেন সব নোটেই এক ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠা করা। গোটা বিশ্বের নোটের ইতিহাসে এমনটা বিরল। সাধারণত বিভিন্ন নোটে ভিন্ন ভিন্ন নেতা, শিক্ষাবিদ, শিল্পী, বিজ্ঞানী, সংগ্রামী মুক্তিকামী ও বুদ্ধিজীবীর প্রতিকৃতি দিয়ে তাঁদের সাম্মানিত করার রেওয়াজ মানা হয়। বিশ্বে যা ঘটে বাংলাদেশে তার উল্টা। ব্যক্তি ও পরিবারতন্ত্রে বীতশ্রদ্ধ নাগরিকের চোখে কিংবা স্রেফ একাডেমিক এঙ্গেল থেকে এগুলো আসলে কর্তিত্ববাদী আলামত হিসেবেই ঠেকে!

ডিজিটাল পেমেন্টের যুগে কিছু দিন পর পর নগদ মূল্যমানের নতুন ডিজাইন ও মানের নোট, নোট প্রকল্পের নকশা, নিরাপত্তা, রিভিউ, ছাপানো ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করাকে সমীচীন মনে করি না, বরং এই বিনিয়োগ ক্ষুদ্র বা বড় যাই হোক না কেন তা ডিজিটাল পেমেন্ট সার্ভিস অবকাঠামোতে, তার নিরাপত্তা বিনিয়োগে যেতে পারে।

তদুপরি দুই, পাঁচ, দশ, বিশ, পঞ্চাশ, একশ, পাচশ ও হাজার টাকার সব নোটেরই সামনে পিছনে ভিতরে একই ছবি ও হলোগ্রামের ব্যবহার আসলে জাল নোট চক্রের অবৈধ কাজটাকে কিছুটা হলেও সহজ করে দেয়। বিপরীতে ভিন্ন ভিন্ন নোটে ভিন্ন ভিন্ন নিরাপত্তা বৈশিষ্ট থাকা সমীচীন।

ফাইজ তাইয়েব আহমেদ মুক্তিফোরামের একজন সম্পাদক

Share.

মুক্তিফোরাম একটি মুক্তিবাদী, বহুত্ববাদী এবং জনপন্থী সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যে গড়ে ওঠা সংগঠিত গণমঞ্চ। এর লক্ষ্য হলো নতুন ধরণের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক চর্চা নির্মাণ। নোংরা হিসেবে রাজনীতির যে রূপকল্প এদেশের মানুষের কাছে নির্মাণ করা হয়েছে, সেটিকে চ্যালেঞ্জ করতে চায় মুক্তিফোরাম। আবার যেসব একক আদর্শ (যেমন বামপন্থা-ডানপন্থা) বা পরিচয়ের রাজনীতি (সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, জাতিবাদ) দিয়ে জনগণের সংহতি ও বৈচিত্র্য হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে তার একটি এন্টিডোট হয়ে ওঠাও মুক্তিফোরামের প্রকল্প।

Leave A Reply