“পৃথিবীময় যে সংক্রামক রোগে,
আজকে সকলে ভুগছে একযোগে,
এখানে খানিক তারই পূর্বাভাস পাচ্ছি,
এখন বইছে পুব-বাতাস।
গোপনে আগুন বাড়ছে ধানক্ষেতে,
বিদেশী খবরে রেখেছি কান পেতে।
সভয়ে এদেশে কাটছে রাত্রিদিন,
লুব্ধ বাজারে রুগ্ন স্বপ্নহীন।”
– সুকান্ত ভট্টাচার্য
দূর্যোগের দিনে উপদেশমূলক বাক্যের স্থলে কাব্যের অবতারণা করছি কেন বলুন তো?
যেখানে কবি সুকান্তই বলেছেন, “গদ্যের কড়া হাতুড়িকে আজ হানো” কাব্যের অবতারণা করার কারণ মানসিক প্রশান্তি আনা। কবিতার ছন্দ মানুষকে প্রশান্তি দেয় আর এই দূর্যোগের সময়ে আপনার আমার মানসিক প্রশান্তিই সবথেকে প্রয়োজনীয়।
বাসায় আছি আজ ১২ দিন এবং একটা বারের জন্যও বাইরে বেরোনো হয়নি। কিন্তু ইন্টারনেটের কল্যাণে খবরাখবর রাখা আজকাল খুবই সহজ। সবচেয়ে যেটা লক্ষণীয় তা হচ্ছে, হুজুগে বাঙালির অযথা প্যানিকড হওয়া এবং খুব দ্রুত এই ভীতি ছড়িয়ে দেয়া। প্রচুর গুজব ছড়ানো, বিশ্বজুড়ে তোলপাড় ফেলে দেয়া এই Covid-19 কে নিয়ে ট্রল করা, বিচার-বিবেচনা এবং সাধারণ মানবিকতার বেশ অভাব ইত্যাদি চোখে পড়ছে অনলাইন নিউজপেপার থেকে শুরু করে টেলিভিশন চ্যানেল এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।
খুব ঠান্ডা মাথায় ভাবুন তো একবার, এই কাজগুলো কারা করছে আসলে? এরা মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থ অথবা অশান্তিতে আছে। আজকালকার আধুনিক পরিবারগুলোতে সদস্যদের মাঝে তৈরী হয়ে যাওয়া দূরত্ব এর জন্য দায়ী। একবার চিন্তা করুন আমরা কতটা অমানবিক হলে একজন সিনিয়র সিটিজেনকে জনসমক্ষে অপমান করে আবার সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাস্যরসাত্মকভাবে উপস্থাপন করি! একজন সিনিয়র সিটিজেন, তিনি যে পেশারই হউন না কেন তিনি বয়ঃজ্যেষ্ঠ এবং নূন্যতম একটা সম্মান বজায় রাখা আমাদের সংস্কৃতি আমাদের শিখিয়েছে। অথচ আমরা তা বেমালুম ভুলে বসে আছি।
আপনি আমি যত বড় ডিগ্রীধারীই হইনা কেন, বাবার বয়সী একজন মানুষের প্রতি সম্মান বজায় রেখে চলা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
একটা কথা, আমরা অনেকেই কানাডার উদাহরণ দিচ্ছি কথায় কথায়। কানাডার অর্থনৈতিক অবস্থা আর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থায় বিশাল প্রভেদ আছে এটা মাথায় রাখবেন। হুট করে লকডাউন দিলেই যে সবাই ঘরে চলে যেতে পারবে তা আমাদের প্রেক্ষাপটে কিছুটা অসম্ভবই বটে। কারণ একজন দিনমজুর ভাইরাস সংক্রামিত না হলেও কাজের অভাবে অনাহারে মারা যাবে এই সম্ভাবনাই বেশি। তবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অবস্থা এতোটাও খারাপ নয় যে একটা বা দুটো মাস রাষ্ট্র এই দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষগুলোকে দুবেলা অন্ন দিতে পারবেনা।
বঙ্গবন্ধু কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে পদ্মাসেতুর মতো ব্যয়বহুল স্থাপনা দেশের নিজ অর্থায়নে করছেন সেখানে এই মানুষগুলোর জন্য খরচ করাটা খুব কষ্টকর হবে? এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এবং জনতার কাছে আমার প্রশ্ন। যা বলছিলাম, আমরা যেহেতু আমাদের এই স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড থেকে সরে গেছি তার মানে আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। পরামর্শ একটাই, ঘরে থাকুন, পরিবার ও নিজেকে সময় দিন। নিজের মনে-মস্তিষ্কে প্রশান্তি আনুন এবং এই দূর্যোগ মোকাবেলায় প্যানিক না করে ঠান্ডা মাথায় সঠিক কাজটা করুন।
নিজে সচেতন থেকে সাবধানে থাকুন এবং সচেতনতা ছড়িয়ে দিন ; গুজব নয়!