আমার ইংলিশ মিডিয়াম পড়ুয়া ছেলেরা আমার নিম্নমানের ইংলিশ একসেন্ট নিয়ে প্রায়ই হাসাহাসি করতো। না বললেই না, ইংলিশ মিডিয়ামে বাচ্চাদের নিরুপায় হয়েই ভর্তি করছি। আর তা ইংরেজী শিখানোর জন্য না। যাতে সভ্য ভদ্র একটা সিস্টেমে পড়াশোনা করতে পারে। ওদের সময়ে পিএসসি জে এস সি , আর সেইসব পরীক্ষায় আবার প্রশ্ন ফাঁস এইসব দেখে আর বাংলা মিডিয়ামে দেয়ার সাহস হয় নাই।
তো আমার দুর্বল একসেন্ট নিয়ে ওরা হাসাহাসি করলে ছোটবেলায় কিছু বলতাম না। একটু বড় হওয়ার পর ভাবলাম এখন কিছু সবক দেয়ার সময় হইছে।
একদিন যেই তাঁরা খুকখুক হাসি শুরু করছে গম্ভীর মুখে বললাম শোন। আমার গাম্ভীর্যে তাঁদের হাসির মাত্রা একটু কমলেও তা অব্যাহত রইলো। আমি তা উপেক্ষা করে বক্তব্য শুরু করলামঃ
ইংরেজী কি আমাদের মাতৃভাষা?
না।
তা হইলে এইটা একটা বিদেশী ভাষা। এই ভাষায় আমি মোটামুটি স্বচ্ছন্দে লিখতে পারি। কাজ চালানোর মতন কথা বলতে পারি। তো এর মধ্যে কয়েকটা শব্দের ভুল ভাল উচ্চারণ হইলে সমস্যা কি?
ওরা নির্বিকার ভাবে হাসি মাখা মুখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো।
আর তোরা তো দেখি অনেক বাংলা শব্দই ঠিকমতন বলতে পারিস না। মাতৃভাষা ঠিকমতন উচ্চারণ করতে না পারা বেশী লজ্জ্বার নাকি বিদেশী ভাষায় ভুল করা?
ওরা কি বুঝলো কি জানি, তবে বেশ বিরক্ত হইছে এইটা বুঝলাম। তবে তাঁর পর থেকে হাসাহাসি একটু কমে গেছেই বলে মনে হলো।
এইটা শুধু আমার ছেলেদের না, এইটা আমাদের জাতীয় সমস্যা। আমাদের জাতীয় বৈকল্য, জাতীয় হীনমন্যতা। আমরা বাংলা দুইকলম ঠিকমতন বলতে পারি কি পারি না তাতে কোন সমস্যা নাই, কিনতু ইংরেজীতে বাচচিত না পারলে আমাদের জাত পাত নিয়ে টানাটানি পড়ে যায়। কারণ ইংলিশ হইলো এলিটদের ভাষা। ইংলিশ ঠিকমতন না পারা মানে হাতে কলমে বুঝায়ে দেয়া তুমি এলিট না, তুমি হইলা সাধারণ, অতি সাধারণ। এইটা আমাদের অহমকে চুরমার করে দেয়।
অথচ আসলে কি? ইংরেজী জাস্ট আরেকটা ভাষা, হিন্দী যেমন আরেকটা ভাষা, ফ্রেঞ্চ যেমন আরেকটা ভাষা। হিন্দী না পারলে, ফ্রেঞ্চ না জানলে তো কোনদিন আমাদের মান সন্মান নিয়ে টানাটানি পড়ে না। ইংরেজী নিয়ে হয় কেন?
হ্যাঁ ইংলিশ একটা গ্লোবাল ল্যাংগুয়েজ, এই গ্লোবালাইজেশনের যুগে এটা একটা পাওয়ারফুল স্কিল। যেমন প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ জানাটাও এই যুগে একটা প্রয়োজনীয় স্কিল। কিন্তু আমি পাইথন না জানলে কি আমি খুবই ছোট মনে করতে থাকি নিজেকে? তাহলে ইংলিশ না পারলে এইরকম মনে করব কেন?
এর একটা বড় কারণ হইতে পারে আমাদের উচ্চশিক্ষায় বাংলা টেক্সট বই নাই। চাকুরীর বাজারে ইংলিশ না জানলে ভাত নাই। আরো অনেক কারণ আছে। এক ফেইসবুক পোস্টে লেখা সম্ভব না।
তবে মোদ্দা কথা হইলো ইংলিশ ভাষাটাকে নিজের আইডেন্টিটির অংশ বানায়ে ফেলা বাদ দিতে হবে। আপনার নিজের ভাষা আপনার আইডেন্টিটির অংশ। কোন বিজাতীয় ভাষা না।
লেখকঃ রুশাদ ফরিদী