বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার অভিন্ন নদীসমূহের পানি বণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে টানাপোড়েন। বাংলাদেশের সরকার বিভিন্নবার মিষ্টি করে অনুরোধ করলে যখন ভারত শোনেনি, তখন সরকার বের করে তার কূটনৈতিক ব্রহ্মাস্ত্র–দ্য প্রিটি প্লিইইইইইইজ।
গাল ফুলিয়ে চোখ বড় বড় করে এই কথা বলায় ভারতের মন ভেজে এবং তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে সময়মতন হিস্যা কি, হিস্যার অতিরিক্ত পানি দেয়া হবে বাংলাদেশকে। তাই শুনে বাংলাদেশ সরকার শুরু করে উন্নয়ন নৃত্য এবং মনে আনন্দে ভারতকে ট্রানজিট, রামপাল সব দিয়ে দেয়।
ভারতও সেই কথা ভোলেনি। তারা আজ প্রতিদান দিতে প্রস্তুত। তাই আজ সময়মতন তারা বাংলাদেশকে তরল বন্ধুত্বের বন্যায় ভাসিয়ে দেবার প্রস্তুতি নিয়েছে।
ভারী বৃষ্টিপাতের পানি একা না খেয়ে বাংলাদেশের সাথে ভাগ করে নেবার জন্যে জন্য ফারাক্কা বাঁধের ১১৯টি গেটের সবগুলো খুলে দিয়েছে ভারত।
বাঁঁধ খুলে দেয়ার প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া বলেন যে উত্তর প্রদেশ ও বিহারে মানুষ মারা যাচ্ছে। সে সময়ে এক সাংবাদিক তাকে জানেন যে বাঁধ খুলে দিলে বাংলাদেশের মানুষ মারা যাবে। উত্তরে সোনিয়া গান্ধী খুব বিস্ময়ের সাথে বলেন, “তো?”
বাঁধ খুলে দেয়ায় সম্ভাব্য বন্যার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করা হল তারা বলেন, বন্যা একটি প্রাকৃতিক দূর্যোগ। এটিতে সরকারের কিছু করার নেই।
সাংবাদিকেরা তখন বলে, এটিতো প্রাকৃতিক দূর্যোগ নয়, এটি তো ভারতসৃষ্ট দূর্যোগ।
সরকারের ওই কর্মকর্তা তখন ভুরু কুঁচকে বলে, “ভারত কি প্রকৃতির বাইরে নাকি?”
এ বিষয়ে কিছু খ্যাতনামা বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের সাথে আলোচনা করলে তারা বলেন, বাঁধের গেট খুলে দেওয়াই সঠিক সিদ্ধান্ত। ভারত তো বাংলাদেশের স্বার্থে নিজেদের নাগরিককে মারতে পারে না। এই প্রতিবেদক তখন বিড়বিড় করে বলেন, “হ্যাঁ, ভারত কি আর বাংলাদেশ নাকি।” তবে বুদ্ধিজীবির ভারী চশমা দেখে ভয় পেয়ে চেপে যান এবং জিজ্ঞেস করেন, “কিন্তু বাঁধ না দিলে তো প্রাকৃতিক ভাবেই পানি বয়ে আসতো নদী দিয়ে আর দুইপারেই কম বন্যা হতো। তাইনা?”
হালকা কেশে পক্বকেশী বুদ্ধিজীবী বলেন, “যদি প্রাকৃতিক নিয়মে নদীকে বইতেই দেবে, তবে এতো কষ্ট করে এতোবড় রাষ্ট্রজুড়ে আইআইটি বানানো কেন?”
এই অকাট্য যুক্তিতে পরাস্ত হয়ে প্রতিবেদক তখন জিজ্ঞেস করেন, “বাংলাদেশে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্যে একটি জলাধার নির্মানের প্রস্তাব তো দেয়া হয়েছিলো। সেটার কি হল?”
চশমাটি একটুখানি নিচে নামিয়ে সেই বুদ্ধিজীবী তখন বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম ছোট জলাধার বানাতে। পরম বন্ধু বলে তারা আমাদের পুরো দেশটাকেই আস্ত জলাধার বানানোর ব্যবস্থা নিয়েছে। মাশাল্লাহ!”
সরেজমিনে দেখা যায় যে, এই খবরে নিতান্ত আনন্দিত হয়েছেন উত্তরবঙ্গের মানুষ। তারা বলছেন, এমনিতে তো কতো কষ্টে দারিদ্রে না খেয়ে মরি। এবারে তরল বন্ধুত্ব খেয়ে মরবো। বড় আনন্দ হচ্ছে।
এমন সময়ে আরেকজন স্থানীয় যোগ করেন, ভারত সব সময়ে আমাদের স্বার্থ দেখে এসেছে। এইযে দেখুন যাতে আমাদের পেয়াজ খেয়ে ঝাল না লাগে তাই সেটা রফতানি করা বন্ধ করে দিয়েছে। এমন অকৃত্রিম বন্ধু বা আর কার আছে? এমন সময়ে এই প্রতিবেদক দারুণ আবেগে গেয়ে ওঠেন, তুমি আমার পাশে বন্ধু হে বসিয়া থাকো। একটু বসিআআআআআআআ থাকো।
এটি একটি রম্য সংবাদ। মুক্তিফোরামের পক্ষে এটি রচনা করেছেন ফারুক রাসুল।