গত দুই মাসে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিগত ২০ বছরের সব চেয়ে রিমারকেবল ঘটনাটা ঘটেছে। বেন্সন এবং গোল্ড লিফের দাম বাড়ানোর কারনে এর সেল কমেছে। তাও যেন সেন পরিমান না, ৪৭% ।
এইটা একটা রিমারকেবেল ঘটনা। কারন, বাংলাদেশের টোবাকো ইন্ডাস্ট্রিতে একটা অদ্ভুত প্যাটার্ন আছে, যেইটা অর্থনীতির মুল একটা থিওরিকে ভুল প্রমান করে গ্যাছে আজকে প্রায় দুই দশক ধরে।
সেইটা হচ্ছে দাম বাড়ালে ডিমান্ড কমে। মাইক্রোইকনমিক্সের প্রথম লেকচারে এইটা পড়ানো হয়, ডিমান্ড কার্ভ হিসেবে । প্রাইস বাড়লে ডিমান্ড কমবে।
কিন্ত, বাংলাদেশের টোবাকো ইন্ডাস্ট্রিতে, সরকারেরা বিগত দুই দশক ধরে প্রতি বছর ট্যাক্সের পরিমান বাড়িয়েছে, যার ফলে সিগারেটের দাম বেড়েছে কিন্ত সিগারেটের সেল বেড়েছে , কমে নাই।
যেইটা ঘটতেছিল, সেইটা আবার আর একটা মজার বিষয়।
আমাদের সিগারেটের দামের বড় একটা অংশ ভ্যাট এবং সার্ভিস ডিউটি। এখানে অনেক গুলো লেভেল করা আছে, প্রিমিয়াম সিগারেট, উঁচু দামের সিগারেট, মধ্যম দামি সিগারেট, কম দামি সিগারেট, বিড়ি। একেক লেভেলে এক এক পরিমান ভ্যাট। উদ্দেশ্য হলো প্রিমিয়াম এবং হাই লেভেল সিগারেট থেকে বেশি ভ্যাট নেওয়া এবং কম দামি কাস্টমারের কাছ থেকে কম ভ্যাট নেওয়া এবং কম দামি সিগারেটের দাম কম রাখা।
সরকার যতই ডিউটি বাড়িয়েছে কাস্টমাররা, আপার লেভেল থেকে নিচের লেভেলে চলে গ্যাছে। কিন্ত সিগারেটের মোট সেল বেড়েছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি সহ বেশ কিছু নির্দেশকের সমান্তরাল ভাবে।
বিস্ময়কর ভাবে এত দিন, প্রিমিয়াম লেভেল মানে, বেন্সন এবং গোল্ডলিফ লেভেলে দাম বাড়ানোয় বিক্রিতে কোন প্রভাব পড়ে নাই। সরকার যতই দাম বাড়াক না কেন, এই লেভেলে সিগারেটের সেল প্রতি বছর বেড়েছে, যেইটা অর্থনীতির বইয়ে বলা হয়, ইনইলাস্টিক ডিমান্ড- যা খুবই অস্বাভাবিক ।
গত প্রায় কয়েক বছর ধরে, এক টাকা এক টাকা দাম বাড়ানো হয়েছে, বেনসন এবং গোল্ড লিফের । এবং সরকার এবং বিএটি ধারনা করেছে, এইটা বিশ্ব অর্থনীতিতে একটা অঘটন এবং এইটা কেয়ামত সে কেয়ামত তক চলতে থাকবে।
এবং এর ফলে এখন বিএটি থেকে দেশের মোট ভ্যাটের একটা বড় অংশ সংগ্রহ করা হয়।
কিন্ত এই অঘটন এই বছর, বাজেটের পরে দুই মাসে উলটে গেছে। ভ্যাট বাড়ানোর ফলে দাম বাড়ার কারনে, এই বছর বিএটির থেকে সরকার যে ভ্যাট পায় তা, ১৬% কমেছে।
এর মধ্যে প্রিমিয়াম ব্যান্ড থেকে ভ্যাট কালেকশান কমেছে, ৪১%, প্রায় অর্ধেক। মানে, জুলাই থেকে আগস্ট মাসে, বেন্সন এবং গোল্ড লিফ এবং সমমানের অন্য ব্রান্ড গুলোর সেল ৯৯.৯৮ কোটি স্টিক থেকে ৫০.৫৮ কোটি স্টিক মানে ৪১% কমে এসেছে।
এইটা একটা বিস্ময়কর বদল।
এইটা সরকারের রাজস্ব আয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় নামিয়ে আনছে।
এর ফলে, এই সময়ে প্রিমিয়াম বান্ড থেকে প্রাপ্ত ভ্যাট ৮৪৯ কোটি টাকা থেকে ৫০০ কোটি টাকায় নেমে গ্যাছে।
মিডিয়াম ব্রান্ডেও সিগারেট বিক্রি কমেছে।
কিন্ত পূর্বের ধারা বহাল রেখে, লো ব্রান্ডে সিগারেট বিক্রি বেড়েছে। কিন্ত এই লেভেলে সরকারের কালেকশান কম।
ফলে এই দুই মাসে, সিগারেটের এই ধাক্কার কারনে, এলটিইউ বা লারজ ট্যাকেসেশান ইউনিটে সরকারের মোট রাজস্ব কমেছে, প্রায় ১০০০ কোটি টাকা, যা পুরো বছরে প্রায় ৬০০০ কোটি টাকার ইম্প্যাক্ট ফেলবে।
এইটার অনেক গুলো ইম্প্যাক্ট আছে,
১। ইচ্ছা মত ট্যাক্স ভ্যাট ডিউটি বারিয়ে সরকার তার খুললাম খুল্লা খরচের প্রায় দেড় লক্ষ কোটি টাকা বাজেট ডেফিসিট কাভার দেয়ার যে স্বপ্ন দেখছে, সেইটা একটা পাইপ ড্রিম।
২। আমরা একটা সত্যিকারের দেখতে পারছি, মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ বিত্তের আয়ে। তারা এখন বাইটটা সরাসরি ফিল করছে, যার ফলে তাদের বড় একটা অংশ সিগারেট ছেড়ে দিয়েছে। কজ এই গ্রুপ সিগারেট ছেড়ে নিচের দিকে মুভ করেনা, জাস্ট ছেড়ে দেয়।
৩। তৃতীয় একটা বিষয়, সেইটা সোনার ডিম পাড়া হাঁসের গল্পের ক্লাসিক। সরকারের ভ্যাটের ৫০% আসে মাত্র ১০ টা কম্পানি থেকে। এই কম্পানি গুলো বেশির ভাগ বিদেশী এবং মোটামুটি এথিকাল। ঠিক মত ভ্যাট ট্যাক্স দেয়।
সরকার এদেরকে বেশি চিপা শুরু করছে, এবং এরাও এখন ডিসাইড করছে, ফাউল খেলবে। এরা এখন বিভিন্ন ধরনের উপায়ে তাদের লভ্যাংশ ধরে রাখছে। ফলে সরকারকে ভ্যাট দেওয়া কমায় দিছে।
ভুলে যাইয়েন না, এদের রিটেন্ড আরনিং সহ বিভিন্ন ইস্যুতে এই বাজেটে সরকার এদের টার্গেট করেছে।
জিয়া হাসান একজন স্বাধীন লেখক ও গবেষক