ছাত্রলীগের খুনিদের অপকর্মের দায় অবশ্যই ছাত্রলীগের। ব্যক্তির দায় সংগঠনের নয় বলে ঢং না করে ছাত্রলীগের উচিত এই বদমাইশদের লালন পালনের দায় নতমুখে স্বীকার করা। ছাত্রলীগ নামের সংগঠনটিকে কেন নিষিদ্ধ করা হবে না মর্মে হাইকোর্ট যেদিন রুল জারি করবেন সেদিন জানবো- বাংলাদেশে আইনের শাসন খানিকটা হলেও প্রতিষ্ঠা হয়েছে।

হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি আর হিজবুত তাহরীর নামের নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনগুলোর সাথে আমি তাদের পার্থক্য দেখিনা। আমি মনে করি বিশ্বজিৎ হত্যা, রাবি ছাত্রের হাড় হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে দেয়া, ক্যালকুলেটরের কারণে চোখ নষ্ট করে দেয়া, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় সাধারণ ছাত্র এবং সংবাদমাধ্যমকর্মীদের মারধোর- প্রতিটি ঘটনায় এই সংগঠন একটি ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হওয়ার যাবতীয় গুণাবলী অর্জন করেছে।

আমি এও জানি এই বক্তব্যের কারণে আমাকে জামাত শিবির এবং রাজাকার ট্যাগ দেয়ার, সেটি না পারলে আমার চরিত্র নিয়ে যা তা মন্তব্য করার সীমাহীন নোংরামি নিয়ে ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা এসে হাজির হবেন। তাদের জানায়ে রাখি মুক্তিযুদ্ধ গবেষণার জন্য ২০১৫সালের মীনা মিডিয়া এওয়ার্ড আর জয় বাংলা ইয়ুথ এওয়ার্ড দুইটাই আমি পেয়েছি। এবং সেইসাথে আমি এও মনে করি কেউ শিবির কর্মী হলেও তার গায়ে হাত দেয়ার, মুখের কথা দিয়ে টর্চার করার অধিকারও কারোর নেই। ছাত্রলীগের ধরাকে সরা জ্ঞান করা এই শক্তির উৎস অবশ্যই তাদের দলীয় জোটের ট্যাগ।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি জয় এবং সহ সভাপতি লেখক ভট্টাচার্য যেভাবে ‘যদি’ ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকে কথাটি সিসিটিভি ফুটেজ আসার পরেও বলেছেন তাতেই নিশ্চিত হয় যে তারা এই বদমাইশ ১৮টি হত্যাকারীর সুযোগ্য পালনকারী। এই দুই মহানুভব(!) জাতির কাছে এসে করজোড়ে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত এরাও আমার কাছে সমান কালপ্রিট বলে বিবেচিত হবেন।

ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট ধান কাটতে গিয়ে চিকন কাতান পাড়ের লুংগী পরে যখন ধান কাটে তখন সেইটা সমগ্র ছাত্রলীগের ক্রেডিট আর খুন করলে ‘সে আমাদের কেউ না’, ‘হত্যাকারীর দল নেই’ বলে দায় সারা আর ‘যদি’ বলে প্রশ্রয় দেয়া হিপোক্রেসির চূড়ান্ত। বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার উন্নতি হোক, হাইকোর্টে কেউ নির্ভয়ে রিট করুক- কেন ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলা যাবেনা?

ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা শুনে রাখেন, এমনকি সক্রেটিসের বিচারের মতো ২৪০০বছর পর হলেও আপনারা নিষিদ্ধ হবেন। সেই দিন আমি না দেখতে পারলেও সেই ইচ্ছা পোষণ করে রাখলাম! আমি দেখে মরতে চাই হাইকোর্ট রুল জারি করে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী পরিষদকে কারণ দর্শাতে বলবে- ছাত্রলীগ কেন নিষিদ্ধ ঘোষিত হবে না?

লেখাঃ জান্নাতুন নাঈম প্রীতি, শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Share.

মুক্তিফোরাম একটি মুক্তিবাদী, বহুত্ববাদী এবং জনপন্থী সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যে গড়ে ওঠা সংগঠিত গণমঞ্চ। এর লক্ষ্য হলো নতুন ধরণের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক চর্চা নির্মাণ। নোংরা হিসেবে রাজনীতির যে রূপকল্প এদেশের মানুষের কাছে নির্মাণ করা হয়েছে, সেটিকে চ্যালেঞ্জ করতে চায় মুক্তিফোরাম। আবার যেসব একক আদর্শ (যেমন বামপন্থা-ডানপন্থা) বা পরিচয়ের রাজনীতি (সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, জাতিবাদ) দিয়ে জনগণের সংহতি ও বৈচিত্র্য হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে তার একটি এন্টিডোট হয়ে ওঠাও মুক্তিফোরামের প্রকল্প।

Leave A Reply