বাবা প্লিজ,তুমি চুলগুলা কেটে ফেলো!

আমি চাই না তুমি এমনভাবে মারা যাও যাতে করে মানুষ বলুক তোমার ছেলে তো পৃথিবীর কারো জন্য কিছু করতে পারে নাই। বরং আমি চাই, সবাই আমাকে বলুক তোমার ছেলে পৃথিবীর আলো বাতাসের তথাকথিত পরিপূর্ণ দাম দিয়েছে।

তোমার মৃত্যুটা অযথা হোক, তুমি একটু সুন্দরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে তারপর মরো! এটাও বলছে “বাবা, তোমার সত্যবাদী হওয়া লাগবে না, তুমি শুধু বেঁচে থাকো”।

আজকে আম্মু এক্সাক্টলি এমনভাবেই বলছে। কথার পিছনে অনেক কান্না লুকিয়ে ছিল, কিন্ত আম্মু প্রকাশ করেনি। আমিও আর বেশী কিছু না বলে চলে আসছি। শুধু মাথায় বাঁজতেছে “বাবা, তোমার সত্যবাদী হওয়া লাগবে না, তুমি শুধু বেঁচে থাকো”।

বিশ্বাস করুন ভাই, আপনাদের এই বাংলার রাজনীতি আমার লাইফটাই হেল করে দিছে। ইন্টার লেভেলে এসে এনএসআই শেষ করছে, তারপর তো আছেই আপনাদের এই রাজনীতির কুটমন্ত্র যা দিয়ে ফ্যামিলিকে ভয় দেখাতে পারেন আপনারা।

বিশ্বাস করুন ভাই, সবার স্বপ্ন থাকে ঢাবি কিন্তু আমার স্বপ্ন ছিল রাবি। রাবিতে ভর্তি পরীক্ষায় ১৫৪তম হইছিলাম, ফাইন্যান্স আসলো কিন্তু ভর্তি হতে পারলাম না। একবুক হতাশা নিয়ে অজপাড়াগাঁয়ে পড়ে থাকলাম।

এখন আপনারা জিজ্ঞাসা করুন কেন পারলাম না ভর্তি হতে। পারি নাই ঐ যে আপনাদের রাজনীতির নষ্ট খেলা। আমি শিবির করি, আমি জঙ্গি, আমায় আপনারা ক্রসফয়ারে মারবেন, আমায় আপনারা পিটিয়ে মারবেন, আমায় আপনারা কুপিয়ে মারবেন এই ভয়টা আমার মা’য়ের বুকে পেরেক দিয়ে ঢুকিয়ে রাখছেন।.

আমি জীবনে কোনো সিদ্ধান্ত ফ্যামিলি থেকে নেইনি বরং যা করছি নিজের ইচ্ছামত। কিন্তু রাবিতে ভর্তির সময় পারিনি শুধুমাত্র মা’য়ের মুখের দিকে তাকিয়ে। অথচ আমি যে খুব ভদ্র তাও না বরং চরম মাপের বেয়াদব আমি।

আমি খুব করে ডিপ্রেশনে থাকি।

কি করলাম জীবনে? শুধু শুধু পৃথিবীর আলো বাতাস নষ্ট করছি। আম্মুকে আমি তখন বলছিলাম “তুমি আজ রাবিতে ভর্তি হতে মানা করছো, আগামীতে তুমি বলবে বাসা থেকে বের হওয়া লাগবে না”। ঠিক এখন তাইই হচ্ছে।

বুয়েটের মত জায়গা যেখানে দেশের সেরা মেধাবীদের স্থান। যেখান থেকে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের শিক্ষক উঠে আসবে সবাই জানে কিন্তু কি দুর্ভাগ্য সেখান থেকে এখন খুনী বের হয়ে আসছে।

“যাক বাবা, একরকম বেঁচে গেছি এতটা মেধাবী হই নাই, যতটুকু মেধাবী হলে মানুষ হয়ে মানুষ খুন করা যায়”।

আমার বাসা টুঙ্গিপাড়ায়, আমার প্রতিদিনের ঘুম ভাঙ্গে রাজনীতির কবি’র ভাষণ শুনে আবার ঘুমুতে যাইও তার ভাষণ শুনে। আমি জানি তার অবদান। তাকে আমরা বাংলার অন্য সবার চেয়ে বেশীই শ্রদ্ধা করি আর সেইজন্যই এতটা কষ্ট হয় যে তার নাম করে, তার আদর্শের উপর কলঙ্ক লেপ্টে কেউ তার আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করছে। কি অদ্ভুত!

ভাইরে আমি মানুষ। আমার অন্য কোনো পরিচয় লাগবে না। শুধু একটু বাঁচতে দে। আমার মা-বাপের দিকে তাকানো লাগবে না বরং তোমার মা’য়ের দিকে তাকিয়ে আমার উপর কৃপা কর।

আর তা যদি না পারো তাহলে সেইদিনের জন্য প্রস্তুত হও যেদিন আমাদের ভিতরের খুনী, শুকর জেগে উঠবে।

লিখেছেনঃ প্রিথুলা,বশেমুরবিপ্রবি

Share.

মুক্তিফোরাম একটি মুক্তিবাদী, বহুত্ববাদী এবং জনপন্থী সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যে গড়ে ওঠা সংগঠিত গণমঞ্চ। এর লক্ষ্য হলো নতুন ধরণের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক চর্চা নির্মাণ। নোংরা হিসেবে রাজনীতির যে রূপকল্প এদেশের মানুষের কাছে নির্মাণ করা হয়েছে, সেটিকে চ্যালেঞ্জ করতে চায় মুক্তিফোরাম। আবার যেসব একক আদর্শ (যেমন বামপন্থা-ডানপন্থা) বা পরিচয়ের রাজনীতি (সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, জাতিবাদ) দিয়ে জনগণের সংহতি ও বৈচিত্র্য হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে তার একটি এন্টিডোট হয়ে ওঠাও মুক্তিফোরামের প্রকল্প।

Leave A Reply