মাছ কেটে, রিকশা চালিয়ে, রাজমিস্ত্রীর কাজ কিংবা ফুটপাতে দোকানদারি করে যদি এত বেশি আয় হয় তাহলে তোরাও সেই কাজ শুরু করে দে। তোরা কি এমন জমিদারের বাচ্চা এই কাজ করতে পারিস না? আমরা যতদূর জানি বাংলাদেশের জমিদারি প্রথার বিলুপ্তি হয়ে গেছে বহু আগেই। তাহলে গরিব মানুষের একটু ভালো থাকা দেখে ঘেউ ঘেউ করিস তোরা কারা?
কত বড় বদমাইশ হইলে ১২ বছরের একটা ছেলে বাস-লেগুনার হেল্পারি করতেসে সেই অমানবিক ব্যাপারটাকে এরা ‘হিংসা’ করতেসে! ভেতরে বসলে চরম গরমে কষ্ট পাই। এজন্য আমি অনেক সময় লেগুনার পিছনে হ্যান্ডেল ধরে পাদানিতে দাঁড়িয়ে আসতাম। বাইক কেনার আগে এটাই ছিল আমার রুটিন ।
এভাবে আধা ঘন্টা কিংবা ৪০ মিনিট দাড়িয়ে থাকলেই হাঁটু টনটন করে। ঘাড় ব্যথা হয় বেশিক্ষণ হাতল ধরে রাখলে। গ্রামের মানুষ হিসেবে আর দশজনের মত আমি নিজেও অনেক পরিশ্রমী লোক। এমনকি এখনও বাসার সব কাজ, রান্নাবান্না, কাপড় কাচা এবং ঘর মোছার কাজও নিজে করি। আমার মত পরিশ্রমী লোকেরই যদি লেগুনার হ্যান্ডেল ধরে ঝুলে থাকতে যদি ওই অবস্থা হয়, তাহলে ভাবুন ফেসবুকে যারা স্ট্যাটাস দিতে আসে, লেগুনার হেল্পার হলে তাদের কি অবস্থা হবে?
ওদিকে যারা মাছ কাটে তাদের অনেকেই রাতে ভাত খেতে গেলে দুর্গন্ধে বমি করে ফেলে। তাদের প্রায় প্রত্যেকের সারাবছর সর্দিকাশি এবং লাংসে ইনফেকশন লেগেই থাকে। সারাদিন হাত ভেজা থাকায় বেশিরভাগ মাছ কাটা মানুষের হাতের সবগুলো আঙ্গুল পচা। হাত ধোয়ার সময় এদের অনেককে আমি যন্ত্রণায় চিৎকার করতে দেখেছি। ওদের সঙ্গেও হিংসা করে যারা তাদেরকে বলুন পারলে গিয়ে এক সপ্তাহ মাছ কেটে আয়।
একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করে শেষ করব। জয়দেবপুর বাজারের এক ভদ্রলোক আমার মাছ কেটে দিতেন। একদিন পৌর সুপার মার্কেটের সামনে ভ্যান গাড়ির দোকানে চা খাচ্ছি। মাছ কাটার ও ঐ ভদ্রলোক যাচ্ছেন দেখে ডেকে সালাম দিলাম। বললাম চাচা আসেন চা খাই। উনি একটু বিব্রত হলেও দাঁড়ালেন। জিজ্ঞাসা করলেন কেমন আছো বাবা? কিছুক্ষণের মধ্যে চা শেষ হলে উনি রওনা দেওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়ালেন। আমিও স্বাভাবিক ভাবেই হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়ালাম।
ভদ্রলোক হ্যান্ডশেক না করে লজ্জায় হাত লুকোচ্ছেন। প্রথমে ভাবছিলাম পেশাগত কারণ, স্থানীয় বিভিন্ন প্রভাবশালী মানুষের সাথে আমার দৃশ্যমান যোগাযোগ এবং আরো আনুসাঙ্গিক নানা ব্যাপারে উনি ইতস্তত বোধ করতে পারেন। পরে খেয়াল করে দেখি উনার হাতের আঙ্গুল সবগুলা ঘায়ে দগদগ করছে। এতটাই বিশ্রী ভাবে উনার হাত ক্ষতবিক্ষত যে আমি এবং আমার বন্ধু জাহিদ পুরোপুরি চমকে গেলাম।
দুজনে পরে অনেকটা জোর করে তৌফিক ভাইয়ের চেম্বারে নিয়ে গেলাম উনাকে। যা শুনলাম ভয়ে এখনও গায়ে কাঁটা দেয়। অথচ আয় বেশি শুনলে উনাদেরও হিংসা করার লোকের অভাব হয় না। এই বিষয়গুলো আড়াল করে শুধু তাদের আয় নিয়ে যারা স্ট্যাটাস দিচ্ছে তারা জাত ছোটলোক। হৃদয়ের দিক থেকে ভিখারী কিন্তু আচরণের দিক থেকে জমিদার এই ই-ত*রগুলোকে প্রতিহত করা আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব।
লেখকঃ মোঃ আদনান আরিফ