কি কুৎসিত সময়ে আমরা বসবাস করি যে আমার এমন একটা লেখাও লিখতে হয়।

ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের রাজত্বের বিরুদ্ধে আমরা যারা দাঁড়াই, কথা বলি, তাদের নিয়মিতই শুনতে হয় আমরা বিএনপি-জামাতের এজেন্ট।

প্রতিবাদ করতে গেলেই শোনা লাগে আমরা তারেক জিয়াকে এনে ক্ষমতায় বসাতে চাই। জিজ্ঞেস করা হয় শিবিরের দানব তান্ডবের সময়ে আমরা কোথায় ছিলাম।

এটা কোন নতুন ব্যাপার নয়। সব বিষয়ে প্রতিবাদকারীদেরই এমন হোয়াটএবাউটিজমের শিকার হতে হয়। আপনি কাশ্মীরের আজাদি চান, তো যখন বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন হচ্ছিলো আপনি তখন কোথায় ছিলেন? আপনি বাংলাদেশের হিন্দু নির্যাতন নিয়ে কথা বলেন, আপনাকে বলবে আপনি বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার সময় কই ছিলেন? আর আপনি যদি ইজরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাহলে আপনাকে বলা হবে হলোকস্টের সময়ে আপনি ছিলেন কোথায়?

আসলে এই দুই ভাগে ভাগ করে দেবার রাজনীতিটা আমাদের ঐক্যে ফাটল ধরানোর একটি রাজনীতি। সাহসী কণ্ঠ নিয়ে রাজপথে নামা মানুষদের মাঝে স্বার্থের গন্ধ ঢুকিয়ে দেয়া যাতে মানুষ তাদেরকে বিশ্বাস করতে না পারে। আর তাদের নিজেদের সহযোদ্ধাদের মনে খচখচানি তৈরি করা যে আমরা তাহলে কাদের সাথে কাজ করছি? এটা আমাদের ঐক্য, সঙ্ঘটি ভেঙ্গে দেয়ার একটা হীন প্রচেষ্টা মাত্র।

তবে এমন চক্রান্তে দমে যাই নাই বলেই আজ আমরা এতদূর আসতে পেরেছি। মুক্তিযোদ্ধাদেরও দুষ্কৃতিকারী বলা হতো, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে বলা হতো ভারতের দালাল। যখনই আপনি স্বৈরাচারী অপরাজনীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন তখন আপনার পরিচয় নিয়ে রাজনীতি চলবেই। আপনার সংকল্প যতই দৃঢ় হোক না কেন, তাকে নিয়ে কুৎসা রটানোই হবে।

কাজেই আজ যদি আমাদের শিবির বলা হয়, তাহলে বলব আমাদের লেখালেখি, কথা, ভাবনার ডায়েরী ঘেঁটে দেখেন আমরা কে। দলের বাইরে মানুষ থাকে, তারে চিনতে শিখেন। আর কিছু হইলেই শেখ হাসিনা পড়ে গেলেই জাতি রসাতলে চলে যাবে আর বিএনপি জামাত ক্ষমতায় চলে আসবে, এটা বলা বন্ধ করেন। জনতার মাঝে বিএনপি জামাতের সমর্থন নাই। যারা রাজপথে ট্যাগের ভয় ছাড়িয়েও আন্দোলন করছে, তাদের আছে। আপনাদের জন্যে বস্তাপচা বিএনপি জামাত আর হুমকি নয়– হুমকি এরা। এদেরকে নিজের পরিচয়ে চিনতে শিখেন।

অবশ্যই আমি আর আমরা বিশ্বাস করি আদর্শিকভাবে বিএনপি ও জামাতও সন্ত্রাসী সংগঠন এবং তাদের ভয়াবহ সন্ত্রাসের ইতিহাস আছে। এতে কোন সন্দেহ নাই যে ক্ষমতায় এলে তারা ছাত্রলীগের মতই ভয়াল রূপ ধারণ করবে।

এবং তখন এই আমরাই তাদের প্রতিরোধ করবো, কথা দিলাম।

তখন প্রয়োজনে ঠিক উলটো ট্যাগটাও খাবো।

ট্যাগ খাওয়ার ভয় পেরিয়ে প্রতিরোধের রাজনীতিটা কাউকে না কাউকে তো করতেই হয়।

তবে তার আগ পর্যন্ত আমরা আমাদের বর্তমান দানবের মোকাবিলা করেই যাবো, এই প্রতিজ্ঞাও রইলো।

লেখকঃ অনুপম দেবাশীষ রায় মুক্তিফোরামের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য

Share.

মুক্তিফোরাম একটি মুক্তিবাদী, বহুত্ববাদী এবং জনপন্থী সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যে গড়ে ওঠা সংগঠিত গণমঞ্চ। এর লক্ষ্য হলো নতুন ধরণের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক চর্চা নির্মাণ। নোংরা হিসেবে রাজনীতির যে রূপকল্প এদেশের মানুষের কাছে নির্মাণ করা হয়েছে, সেটিকে চ্যালেঞ্জ করতে চায় মুক্তিফোরাম। আবার যেসব একক আদর্শ (যেমন বামপন্থা-ডানপন্থা) বা পরিচয়ের রাজনীতি (সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, জাতিবাদ) দিয়ে জনগণের সংহতি ও বৈচিত্র্য হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে তার একটি এন্টিডোট হয়ে ওঠাও মুক্তিফোরামের প্রকল্প।

1 Comment

  1. রেজাউল করিম মুকুল। on

    আবরার হত্যাকান্ড / রীতিমত ভর্তি যুদ্ধ করে যারা বুয়েটের মতো বড় মাপের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পায় তাদের মায়েরা হাসবে, অহংকার করবে এটাই স্বাভাবিক। বাবা মায়ের কান্নার মতো কোন নোংরা গর্হিত কাজতো তাদের করার কথা নয়। মাত্র দুই এক বছর পরে লেখা পড়া শেষ হয়ে যাবে, দেশের বড় বড় সম্মানজনক পদে চাকুরি করবে, সংসার জীবনে পা রাখবে এটাতো সব শিক্ষার্থীর স্বপ্ন, সব মায়েরই আশা। শুধু বুয়েট নয়, অত বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আবাসিক হলে থেকে লেখা-পড়া করার সুযোগ পাওয়া কোন ছাত্রের; কোন মায়ের কান্নাই শুনতে চাই না। দেশে অনেক রকমের বিশ্ববিদ্যালয় আছে, লেখাপড়া করার দরকারই হয় না। যারা সত্যিকারের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বারান্দায় হাটার সুযোগ পায় নাই তাদের জন্য এসব লিখছি না। রেজাউল করিম মুকুল।

Leave A Reply