আমার একটি স্কুলের বন্ধুর সাথে আমার আবরারের ঘটনাটা নিয়ে কথা হচ্ছিল। কথায় কথায় আমি বললাম বাংলাদেশের পাবলিক ইউনিভার্সিটি গুলোতে গণরুম এবং র‍্যাগিং নিয়ে ছাত্রদের উপর যে অত্যাচার করা হয় ছাত্রলীগের এই অত্যাচার গুলো বন্ধ করা উচিত।

আমার এই বন্ধুটি চটকরে ক্ষেপে গেল এবং সে বলতে শুরু করলো তুই শুধুমাত্র কয়দিন যাবত ছাত্রলীগকে দোষ দিচ্ছিস, বিএনপি-জামাত-শিবির ২০০১ থেকে ২০০৪ অনেক খুন করেছে ওগুলো নিয়ে কোন কথা বলছিস না।

ওর ধারণা মতে আমি বিএনপি করি সেজন্য ছাত্রদল-ছাত্রশিবির নিয়ে কোন খারাপ মন্তব্য করছি না, তাদের পূর্ব কুকর্মের জন্য আমি কোনো সমালোচনা করছি না।

আসলে অামার বন্ধু টির ধারনা ভুল কারণ বিএনপি যে সময় ক্ষমতায় ছিল সেই সময় আমরা খুবই ছোট ছিলাম ছাত্রলীগ-শিবিরের কুকর্ম আমি নিজ চোখের সামনে কখনো দেখতে পারিনি। কিন্তু নিউজ পোর্টাল এবং পুরনো পত্রিকা ঘেটে আমি যে নিউজ গুলো দেখতে পারি ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবির ও ছাত্রলীগের মতোই অনেক কুকীর্তি করেছে। তারাও অনেক খুন এবং রগ কাটার সাথে জড়িত এমনকি ধর্ষণের সাথেও এগুলো অবশ্যই ন্যাক্কারজনক ঘটনা।

এবং যেহেতু আওয়ামী লীগ সরকার বিগত ১১ বছর যাবৎ ক্ষমতায়, সরকার যেমন করে যুদ্ধাপরাধী দুর্নীতিবাজ এবং বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করছে ছাত্রদল এবং শিবিরের যারা কুকর্ম করেছে খুন করেছে তাদের ও বিচার হোক এটা আমি অবশ্যই মন থেকে চাই। এবং সাথে সাথে আমি এইটা ও চাই বর্তমান ছাত্রলীগ যে ত্রাসের রাজনীতি শুরু করেছে সেই রাজনীতির বন্ধ করুক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সে বাংলাদেশের সবগুলো পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে যে রাজনৈতিক ত্রাশ এবং কুসংস্কৃতি প্রচলিত রয়েছে সেগুলো বন্ধ ঘোষণা করুক। আমি জানি তিনি যদি একবার বলেন তাহলে এগুলো বন্ধ করা সম্ভব।

কিন্তু আমার মনে সংশয় যে দেশে চিফ জাস্টিস রাতের বেলা ভেগে যায় নিজের প্রাণের ভয়ে সে দেশে কি অাদোও কোন ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হবে তা নিয়ে আমার অনেক সংশয় রয়েছে।

বিএনপি খারাপ কাজ করেছে বলে ছাত্রদল খারাপ কাজ করেছে বলে ছাত্রলীগ ও এখন খারাপ কাজ করে তা উসুল করবে, এটা তো কোন কথা হতে পারে না।

”তুমি অধম বলে আমি উত্তম হবনা কেন”– এই প্রবাদটা কে কেন আমরা ধারণ করতে পারিনা।

কেন আমরা নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে বারবার চাপাতে চাই, আমরা কেন অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি না, অতীতে যে খারাপ কাজ করেছে তাদের সেই খারাপ কাজের শাস্তি হোক সেটা আমি অবশ্যই চাই এবং সেটা যে কোন দলেরই হোক না কেন।

সাথে সাথে বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে যাতে পরিচ্ছন্ন পানির মতো ছাত্র রাজনীতি হয় এবং ছাত্ররা যাতে ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে যেতে পারে সেজন্য আমি অাশায় বুক বেধে অাছি।

আমরা যুক্তি ছাড়া তর্কে না গিয়ে কিভাবে দেশটাকে সুন্দরভাবে গোছানো যায় কিভাবে ছাত্র রাজনীতির হাত ধরে সুস্থ পরিবেশ আমাদের ক্যাম্পাসগুলোতে ফেরানো যায় এগুলো নিয়ে আলোচনা করা উচিত। লোক দেখানো শোঅফের রাজনীতি বন্ধ করে দেশের স্বার্থে রাজনীতি করতে হবে।

অামরা যদি একে অপরের গাঁয়ে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করি তাহলে কোন দিনই আমরা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব না। আর শেষ কথা অামাদের আত্মসমালোচনা সহ্য করা শিখতে হবে কারণ দাদা রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।

আমরা যদি আত্মসমালোচনা সহ্য করতে না পারি নিজের দোষ অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে চাই তাহলে আমাদের ভিতর কার যে পশু, কোনদিনই অামরা তা শেষ করতে পারবো না। আমাদের আজীবন বেঁচে থাকতে হবে পশুত্ব নিয়ে এবং আমাদের সোনার বাংলাদেশে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যাবে।

লেখকঃ মোঃ রেজানূর রহমান, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ই.সি.ই ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী।

Share.

মুক্তিফোরাম একটি মুক্তিবাদী, বহুত্ববাদী এবং জনপন্থী সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যে গড়ে ওঠা সংগঠিত গণমঞ্চ। এর লক্ষ্য হলো নতুন ধরণের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক চর্চা নির্মাণ। নোংরা হিসেবে রাজনীতির যে রূপকল্প এদেশের মানুষের কাছে নির্মাণ করা হয়েছে, সেটিকে চ্যালেঞ্জ করতে চায় মুক্তিফোরাম। আবার যেসব একক আদর্শ (যেমন বামপন্থা-ডানপন্থা) বা পরিচয়ের রাজনীতি (সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, জাতিবাদ) দিয়ে জনগণের সংহতি ও বৈচিত্র্য হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে তার একটি এন্টিডোট হয়ে ওঠাও মুক্তিফোরামের প্রকল্প।

1 Comment

Leave A Reply