- মানবজমিনের একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম, “ঠিকাদারির লাভের অঙ্ক ফেরত দিলেন ছাত্রলীগ নেতা“
- কালের কণ্ঠের শিরোনাম, “সাড়ে চার কোটি টাকা ফেরত দিলেন ছাত্রলীগ নেতা“
- ঢাকা ট্রিবিউনের বাংলা ভার্সনের শিরোনাম, “কাজ শেষে সরকারকে সাড়ে ৪ কোটি টাকা ফেরত দিলেন ঠিকাদার“
এভাবে বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হয়েছে।
কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনটির ইন্ট্রো তুলে দেয়া হলো–
“ছাত্রলীগ নেতাদের নীতি-নৈতিকতা, মানবিকতা, দেশপ্রেম নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এরই মাঝে সরকারি প্রকল্পের প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা ফেরত দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন চট্টগ্রামের এক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। তাঁর নাম মো. আবু তৈয়ব। তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক।”
কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনের আরেকটি প্যারা হচ্ছে–
“গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রকল্পের টাকা বাঁচিয়ে ঠিকাদার আবু তৈয়ব গণপূর্ত বিভাগে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। এমন ঘটনা সচরাচর হয় না।”
ঢাকা ট্রিবিউনের বাংলা ভার্সনের প্রতিবেদন থেকে প্রথম দুটি প্যারা উঠিয়ে দেয়া হল–
“চট্টগ্রাম মহানগরীতে বরাদ্দকৃত অর্থের চেয়ে কম টাকায় একটি সরকারি প্রকল্পের কাজ শেষ করেছেন মো. আবু তৈয়ব নামের এক ঠিকাদার। এমনকি বেঁচে যাওয়া ৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমাও দিয়েছেন তিনি। আবু তৈয়ব চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদে সেনানিবাসের পাশে ‘বায়েজিদ সবুজ উদ্যান’ নামে একটি পার্ক গড়ে তুলেছে গণপূর্ত বিভাগ। প্রকল্পের বরাদ্দ ছিল ১২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। ২০১৭ সালের এপ্রিলে কাজটি পায় আবু তৈয়বের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তিনি ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকায় কাজ শেষ করে বাকি ৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা গণপূর্ত বিভাগকে বুঝিয়ে দেন।”
কালের কণ্ঠকে “গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে” “আবু তৈয়ব গণপূর্ত বিভাগে দৃষ্টান্ত স্থাপন” এর কথা জানালেও BD FactCheck-কে নিজের নাম প্রকাশ করার অনুমতি দিয়েই পিডাব্লিউডি (গণপূর্ত বিভাগ) চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান যা বলেছেন তা তুলে ধরা হলো–
ফোন করে ‘বায়েজিদ পার্ক প্রকল্পের বিষয়ে কথা জানতে চাই’ বলতে শাহজাহান (মোবাইল নম্বর 01811….30) অপর প্রান্ত থেকে হেসে উঠেন!
এরপর তিনি বলেন, “ঠিকাদারের পক্ষ থেকে টাকা ফেরত দেয়ার তো কোনো সুযোগই নেই। বায়েজিদ পার্কে ১২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ছিলো। এটা চূড়ান্ত কিছু নয়। কখনো কোনো ঠিকাদারকে প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয়ের পুরো টাকা দেয়া হয় না। এটার সুযোগই নেই। কারণ প্রথমে যে ব্যয় ধরা হয় তা আনুমানিক। কাজ শেষে খরচ কমবেশি হতে পারে। ফলে আনুমানিক ব্যয় যেটা ধরা হয় সেটি ঠিকাদারকে একসাথে দেয়া হবে কেন?”
নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান আরও বলেন,
“আর তৈয়ব নামে আমাদের কোনো ঠিকাদার নেই। ওই প্রকল্পের ঠিকাদার হচ্ছেন অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা। তৈয়ব নামে কেউ তাদের সাথে ইনফরমালি কাজ করলে আমাদের জানা নেই।”
তিনি জানান, ২০১৭ তে শুরু হয়ে ২০১৮ এর ডিসেম্বরে প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়। তখন মোট প্রকল্প ব্যয় নির্ধারিত হয়, এবং তখনই হিসাব করে দেখা যায় মোট ব্যয় ৮ কোটি টাকার কিছু বেশি হয়েছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান আরও জানান, আজকের মধ্যেই এ বিষয়টি স্পষ্ট করে বিবৃতি দেবে গণপূর্ত বিভাগ।
বায়েজিদ পার্ক প্রকল্প প্রকৌশলী পরেশ কর্মকারকে (মোবাইল নম্বর 01712….18) কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। প্রকল্প ব্যবস্থাপক জনাব সৌরভকেও (01811….96) কল করা হলে তিনিও রিসিভ করেননি।
সর্বশেষ এ বিষয়ে BD FactCheck এর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়ব (মোবাইল নম্বর 01812….16 ) বলেন,
‘ভাই, আমাকে নিয়ে কেন এসব হচ্ছে আমি বুঝতে পারছি না। আমি তো ওই প্রকল্পের ঠিকাদারই না। সাব-কন্ট্রাক্টর হিসেবে কিছু কাজ করেছি। আমি কিভাবে পুরো প্রকল্পের টাকা ফেরত দেব?’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্পের যে ব্যয় প্রথমে ধরা হয়েছিল সেটা ছাড় হয়ে (অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে) পিডাব্লিউডি (গণপূর্ত বিভাগ) এর কাছে এসেছিলো। কিন্তু কাজ শেষে পুরো টাকা না লাগায় সেটি ফেরত গেছে। কিন্তু ঠিকাদারের হাত থেকে তো ফেরত যাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ এই টাকা তো ঠিকাদারের কাছেই আসে নাই।’
সংবাদমাধ্যমে এ সংক্রান্ত রিপোর্টে তো আপনার বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে আপনি টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন। আপনি কি তাহলে এখন ভিন্ন কথা বলছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আবু তৈয়ব বলেন,
‘আমি বলিনি আমি ফেরত পাঠিয়েছি। বলেছি পিডাব্লিউডি থেকে টাকাটা ফেরত গেছে। ঠিকাদার বা আমি বেঁচে যাওয়া টাকা ফেরত পাঠিয়েছি এমন কথা আমি বলিনি।’
উভয়ের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, তৈয়ব ওই প্রকল্পের ঠিকাদারই নন (ঠিকাদার হলেন অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা)। অথচ মিডিয়ার খবরে এসেছে তৈয়বই এই প্রকল্পের ঠিকাদার (বাস্তবে তিনি উপ-ঠিকাদার, যার সাথে প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই)।
দ্বিতীয়ত, ৪ কোটি টাকা ঠিকাদারের হাতেই আসেনি। ফলে সেই টাকা সরকারকে ফেরতে দেয়ার প্রশ্নই উঠছে না।
অর্থাৎ, তৈয়বকে নিয়ে প্রচারিত এসব তথ্য ভুয়া। এবং তিনি নিজেই এখন তা স্বীকার করছেন।
(গণপূর্তের বিবৃতি আমাদের হাতে এলে তা প্রকাশ করা হবে)।
এই প্রতিবেদনের স্বত্বাধিকার বিডি ফ্যাক্টচেক সংরক্ষণ করে। বিডি ফ্যাক্টচেকের ফেইসবুক পেইজঃ https://www.facebook.com/bdfactcheck বিডি ফ্যাক্টচেকের ফেইসবুক গ্রুপঃ https://www.facebook.com/groups/253387601875225