ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিনে ধর্ম অবমাননা করার দায়ে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হলে তার কর্মকান্ডের প্রতিবাদে মিছিল বের করে ওই এলাকার মুসলিম জনতা। এই মিছিলে পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে এবং চার মারা পড়ে–পুলিশসহ আহত হয় আরও অনেকে।
এর আগেও বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে ধর্ম অবমাননার ইস্যুতে মুসল্লিরা ফুঁসে উঠেছে। অনেক সময়ে ক্ষমতাসীনেরা মুসল্লিদের সেই আবেগ ব্যবহার করে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছেন। অনেক সময় দেখা গিয়েছে যে এই প্রাথমিক ধর্ম অবমাননার ব্যাপারটিই ছিল দাঙ্গা লাগানোর জন্যে আগে থেকে সাজানো–এবারেও দেখা গিয়েছে একটি হিন্দু ছেলেকে ফাঁসানোর জন্যে তার একাউন্ট হ্যাক করে এই পোস্ট দেয়া হয়েছে। এরকম ঘটনা আমাদের মনে সন্দেহের জন্ম দেয় এবং আমাদের ভাবতে সন্দেহ করে যে এইসকল সহিংসতার ঠিক কতোটা সাধারণ মানুষের ধর্মীয় কোন্দলের ফসল আর ঠিক কতোটা ক্ষমতার সাজানো।
সেই সন্দেহ থেকেই ভোলার ঘটনা নিয়ে কিছু প্রশ্ন জাগে। প্রথম প্রশ্ন হলো এমন একটি মিছিলে পুলিশ গুলি কেন চালাবে? এই মুসল্লিরা কি এমন কোন নিরাপত্তা ঝুঁকি ছিল যে তাদের হত্যা করে দমাতে হবে? এই গুলি চালানোর জাস্টিফিকেশন কি? বলা হচ্ছে যে ভাঙ্গচুর, ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং গুলির উত্তরে পালটা গুলি চালানো হয়েছে। তাই যদি হবে তাহলে এতোগুলো মানুষ মারা যাবার কারণ কি? নন-লিথাল গুলির ব্যবহার (ছররা, রাবার বুলেট) কি পুলিশ করতে পারতো না? সেগুলো না থাকলে কি কমপক্ষে ভয় দেখাতে বা ছত্রভঙ্গ করতে সশস্ত্র আক্রমণকারী (পুলিশের ভাষ্যমতে)-দের হাতে বা পায়ে গুলি করতে পারতো না? পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার একটি ব্যাপার কি এখানে রয়ে যাচ্ছেনা? হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে আনা কি পুলিশের দায়িত্ব নয়? আমাদের কি সন্দেহ হতে পারে না যে মুসল্লিদের আরও তাঁতিয়ে দেবার জন্যে, সহিংস করে তোলবার জন্যেই এই বেখেয়ালি আক্রমণটি করা হলো?
দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, ঠিক এমন সময়েই এরকম অস্থিরতা তৈরি করা হবে? এসব ঘটছে ঠিক তখন যখন আবরার হত্যার ফলাফল হিসেবে সরকার কিছুটা হলেও জনপ্রিয়তা হারিয়েছে আর ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার রায় দেবার দিন ঘনিয়ে এসেছে। বাবরি মসজিদ মামলার রায় দেবেন আসাম এনআরসি ঘটনায় জড়িত একজন বিচারক এবং বর্তমান হিন্দুত্ববাদী সরকারের বিচার বিভাগে আগ্রাসনের আমলে রায়টি কোন দিকে যাবে সেটি সহজেই অনুমেয়। আর এই রায়কে কেন্দ্র করে আগের মতন আবারও এদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আগুণ ছড়িয়ে দেয়া খুব কঠিন হবার কথা নয়। হয়তো আমার কথাটি খুবই অবান্তর শোনাতে পারে, তবু কেবল নিজস্ব তত্ত্ব থেকে বলি যে ভোলার আজকের সহিংসতা সেই রায়ের উত্তাপকে বহুগুণে ছড়িয়ে দেবার কোন কূটচাল হলেও হতে পারে।
আমার তত্ত্বতে কাউকে বিশ্বাস করতে বলছি না, কেননা এর কোন প্রমাণ আমার হাতে নাই। আমি তবু লিখছি সকলকে সতর্ক করে দেবার জন্যে। একটি পরিকল্পিত সহিংসতার ঘটনা ঘটতে পারে, যেটিকে এই রাষ্ট্রযন্ত্র ঘটে যেতে দেবে নির্বিকারে এবং প্রচ্ছন্ন বা প্রত্যক্ষ মদদও দেবে–ঠিক যেমনটি হয়েছিলো ২০১৪ সালের বিএনপির দানবতাণ্ডবের সময়ে। তারপর যখন জনগণের জীবন চূড়ান্তভাবে দুঃসহ হয়ে উঠবে, তখন তীব্রভাবে দমন করবে এবং জনগণকে দেখাবে যে এই সরকার ক্ষমতায় না থাকলে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় দেশ ধ্বংস হয়ে যেতো।
হতে পারে এর পুরোটাই নেহাত আমার কল্পনা, তবু এমনতর ঘটনা যে এই দেশে আগে ঘটানো হয়নাই তা নয়। কাজেই বিশ্বাস না করলেও আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে যাতে করে কোন ক্ষমতা আমাদের ধর্মীয় আবেগকে ব্যবহার করে কৌশলে আমাদের সহিংস করে না তুলতে পারে। এখন বিক্ষুব্ধ সময়। বিক্ষুব্ধ সময়ে সতর্ক থাকাটা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
ফারুক রাসুল একজন লেখক, গবেষক ও স্যাটায়ারিস্ট
1 Comment
স্যাটায়ারিষ্টের এ’রকম লেখা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা এবং দাঙ্গা বাধানোর জন্য অনুঘটকের কাজ করতে পারে। এধরণের লেখা সূর্যের দিন আনতে সাহায্য করতে না পারলেও “চাঁদের দিন” আনতে পারে। যে পরিমান ধর্মীয় গোঁড়ামি, উশৃঙ্খলতা, উগ্রতা এবং সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সূর্য কিংবা চাঁদ কোনটাই আসবে না, সমাজে অন্ধকার নেমে আসবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। কেউ কোন অন্যায় করলে তার প্রতিকারের জন্য আইনের আশ্রয় না নিয়ে যারা আইন হাতে তুলে নেয় এবং যারা সেই কাজে পরামর্শ বা উৎসাহ দেয় ঊভয়েই সমাজের জন্য ক্ষতিকর। https://www.facebook.com/NurulAzimRoni.official/videos/406551593630396/