Site icon মুক্তিপত্র

পেঁয়াজ ছাড়া রান্না করবো কেনো?

গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন পেঁয়াজ ছাড়াও রান্না হয়।

আর তার বাণীতে অনুপ্রানীত হয়ে অনলাইনে আসছে পেঁয়াজ ছাড়া রান্নার নানান রেসিপি! যদিও পেঁয়াজ ছাড়া পেঁয়াজু ভাজার রেসিপি এখনো পাইনি।

একটি রাষ্ট্রে সরকার ব্যাবস্থার প্রধান ব্যাক্তিটি যখন এমন ধরনের কথাবার্তা বলেন গণমাধ্যমের সামনে তখন সেই রাষ্ট্রের নাগরিকদের আর কি করার থাকে সেটা আমার জানা নেই।

বিগত বছর গুলোতে বিভিন্ন বিষয়ে এটা বাদ সেটা বাদ এমন করতে করতে এখন এসেছে পেঁয়াজ বাদ।

মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার প্রথমটি হল অন্ন বা খাদ্য। দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধিও নতুন কিছু নয়।

বিশেষ করে বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পণ্যের মৌসুমী মূল্য বৃদ্ধি মোটামুটি ঐতিহ্যে রুপ নিয়েছে।

যেমন প্রতি রমজান মাসের শুরুতে ছোলা বুট, চাল, ডাল, তেল, মসলা, দুধ সহ কাঁচা সবজি্ বিশেষ করে পেঁয়াজ, বেগুন, টমেটো, ধনেপাতা, কাঁচা মরিচ, মাছ-মাংসের দাম দ্বিগুন হয়ে যায় নিয়ম করেই।

আর এর পেছনে প্রত্যক্ষ ভাবে দায়ী দুটি পক্ষ

১| এক শ্রেনীর ব্যবসায়ী
২| সরকার

প্রথম পক্ষ ব্যবসায়ীদের কাজ হল লাভ বের করে আনা তবে আমাদের দেশে সেটা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যার নাম আমরা দিয়েছি “সিন্ডিকেট” যাদের কাজ হল বিভিন্ন মৌসুমে পণ্যের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বাজারে মূল্য বৃদ্ধি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া!

দ্বিতীয় পক্ষ সরকার আগামী ১৬ই ডিসেম্বর আমরা স্বাধীনতার ৪৯ বছরে পদার্পণ করব।

আমাদের নিজেস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হচ্ছে, হাতে হাতে সরকারি মোবাইল আছে, তাতে ফোরজি ইন্টারনেট আছে, আমাদের স্যাটেলাইট আছে সব ডিজিটালাইজেশন হয়ে গেছে বলে ঢোল পেটানো হচ্ছে চারিদিকে!

তবে এখনো পর্যন্ত আমাদের বিভিন্ন খাদ্য পণ্যের চাহিদা ও উৎপাদনের কোন আধুনিক হিসাব পরিসংখ্যান ও খাদ্য পরিকল্পনার ব্যবস্থা নেই। দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রনে সরকারের কোন শক্ত পদক্ষেপ নেয়ার মত প্রতিষ্ঠান নেই! দু একটি আছে তাতে লোকবল নেই!
সরকারি বেসরকারি ভাবে তৈরী পর্যাপ্ত সংখক উন্নত মানের খাদ্য সংরক্ষনাগার নেই। যার কারনে উৎপাদন মৌসুমে ফলন ভালো হলে কৃষকের উৎপাদিত পন্য ন্যায্য দাম পায় না, রাস্তায় ফেলে নষ্ট করে কৃষক বলে আর করবো না ফসল চাষ।

আর মৌসুম পাল্টালেই পণ্যের হাহাকার! দ্রুত এই দেশ সেই দেশ হতে ট্রকে করে, জাহাজে করে, উড়োজাহাজে করে, পারলে রকেটে করে পণ্য আমদানি করা হয়!

আর মাঝখানে সবচেয়ে বড় ভোগান্তির শিকার নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষেরা।

গণভবনে বসে সহজেই বলা যায় পেঁয়াজ না খেলে কি হয়? কাল হয়ত চালের দাম বাড়লে বলবে ভাত না খেলে কি হয়?

এভাবে একটি একটি করে পন্য বাদ দিতে দিতে একদিন প্রধানমন্ত্রী হয়ত বলবেন না খেয়ে থাকলে কি হয়?

রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের খাদ্যের চাহিদা পূরন ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনে রাখাও রাষ্ট্রের সরকারের দায়িত্ব।

বিভিন্ন খাতে হাজার কোটি টাকার দূর্নীতি হয় আর “টিসিবি” এর জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ দেয়া হয় না।

কেন হয় না? মজুতদারেরা বেশিরভাগ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সহযোগী বলে?

কারন টিসিবি সক্রিয় হলে তাদের দাপট শেষ! মানুষ ন্যায্য মূল্যে পণ্য পাবে দূর্নীতির মাধ্যমে পণ্যের কৃত্তিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে মুনাফা লাভের সুযোগও বন্ধ হয়ে যাবে! আর মুনাফা বন্ধ হলে সরকারের মিটিং মিছিলে তেলবাজি করার লোকও থাকবে না।

যার কারনে কোন সরকারই টিসিবিকে সক্রিয় করার বিষয়ে উদ্যোগী হয় না।

আর সাধারন জনগনের সবাই “বয়লিং ফ্রগ সিনড্রোমে” আক্রান্ত দেশে দুদিন পর পর কোন না কোন পন্য বা সেবার দাম বৃদ্ধি পায় আর সেটা নিয়ে দুই দিন মানুষ হইচই করে হাট বাজারে তার পর মানিয়ে নেয়। আর সেই পন্যের বা সেবার দাম কমে না।

যেমন ধরুন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের কথা বাদ দেই সড়ক পথে বাস টিকেটের কথাই বলি।

একটা সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের বাসের টিকেটের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখানো হত ফ্লাইওভাররের নির্মাণ কাজের কারনে দেরি, মেঘনা সেতুতে যানযটে দেরি, চারলেনের সড়কের কাজ চলছে তাই দেরি–এসব যুক্তিতে মূল্য বৃদ্ধি।
এখন তো ভাই ফ্লাইওভারের কাজও শেষ চার লেনের কাজও শেষ তা এখন বাসের ভাড়া কমেছে কি?

কমে নি, কমবেও না।

আর সাধারণ মানুষও অন্যায়ের বিরুদ্ধে চুপ থাকতে থাকতে বাক প্রতিবন্ধী হয়ে গেছে।

তাই তো শুনতে হয় পেঁয়াজ ছাড়া রান্না করুন!

আর সাধারণ মানুষ যদি গদি ধরে টান দিতে শিখত তবে তখন গদি রক্ষায় বলত ন্যায্য মূল্যে পণ্য কিনুন, সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে।

ব্যার্থতা আমাদের সকলের, কারন আমরা সরকারকে জবাবদিহিতা নিশ্চিতে বাধ্য করতে পারিনি তাই আমাদের এধরনের পেঁয়াজ ছাড়া রান্নার উদ্ভট উপদেশ শুনতে হয় চুপ করে।

জবাবদিহিতা থাকলে চালের দাম ১০/- টাকাই থাকত, কৃষক বিনামূল্যে সার পেত নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, আর পেঁয়াজের দামও ২৮০/- টাকা হত না।

রায়হান মুক্তিফোরামের একজন লেখক

Exit mobile version