সমাজ বইয়ে সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ, বিজ্ঞান বইয়ে সূর্য আর ধর্ম বইয়ে সৃষ্টিকর্তা। সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতা ব্যাতীত সকল ক্ষমতাই আসলে আপেক্ষিক। এই সহজ বিষয়টাই আমরা বুঝিনা। বুঝিনা বলেই “জেলায় ডিসির বেশি পাওয়ার নাকি এসপির?” শীর্ষক শিরোনামে আমাদের আড্ডা শুরু হয়ে চুড়ান্ত রুপ নেয় অঘোষিত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে। সবাই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হলে ক্ষমতার প্রসঙ্গ আসে কোথা থেকে আর পরীক্ষার নাম কি করে বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিস সার্ভিস) হয় !
একটা দেশ চালাতে যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, আইনজীবি, সাংবাদিক, সেনাবাহিনী, রাজনীতিবিদদের ভূমিকা আছে ঠিক একইভাবে ব্যাবসায়ী, উদ্যোক্তা, নাপিত, জেলে, কামার, কৃষকদেরও ভূমিকা আছে। বিশেষ একটি বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করে মানুষকে অন্য পেশায় নিরুৎসাহীত করা উচিত নয়। সবাইকে সবার আগ্রহের যায়গায় শান্তিতে কাজ করতে দেয়াটাই দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক।
পেশাগত বৈষম্যই এখন বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের পথে অন্যতম প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খেয়াল করলেই দেখবেন আমাদের চারপাশের এমন অনেকেই আছে যারা উন্নত দেশে থাকেন কিন্তু তারা সেখানে কী করেন আমরা সঠিকভাবে জানিনা বা জানার চেষ্টাও করিনা। ছেলে আমেরিকায় থাকেন, এটাই হয়ে যায় পাত্রের যোগ্যতা। এটা সম্ভব হয়েছে কারণ তাদের দেশে সকল পেশার প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা আছে, তাই কি কাজ সেটা নিয়ে আমাদের মাথাব্যাথাও অনেক কম। বিশেষ কোনো কাজের ব্রান্ডিং করেনি বলেই তারা পুরো দেশটাকেই ব্রান্ডে পরিণত করতে পেরেছে। বাংলাদেশে শ্রেণীবৈষম্য দিনদিন ভয়াবহতর হচ্ছে। শ্রেনীবৈষম্যের কথা বাদ দিলাম, এইদেশে বিসিএস ক্যাডারদের মাঝেই যে পরিমাণ ক্যাডার বৈষম্য রয়েছে বলে শেষ করা যাবেনা। এভাবে চলতে থাকলে সামনে হয়তো এমন দুর্দিন আসবে যেটাকে অতিক্রম করার ক্ষমতা কারোরি থাকবেনা।
বিসিএস ক্যাডার হওয়াটা দোষের কিছু নয়, নিজের সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও লক্ষ লক্ষ তরুণ বিসিএস দেবে। কেউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে, কেউ হবেনা। একজন বিসিএস ক্যাডার এই মুহূর্তে চাকরি ছেড়ে দিলে দেশ ও জাতির বিন্দুমাত্র ক্ষতি হবেনা। শূন্যপদ পূরণের জন্য লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত তরুণ পাবেন। কিন্তু একজন মাঝারি উদ্যোক্তাও যদি তার কাজ থেকে সরে আসেন তাহলে কর্মসংস্থান হারাবে অনেকেই। চাকুরি করে শুন্যস্থান পূরণের চেয়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা কতটা গর্বের, কতটা গুরুত্বপূর্ণ এর মর্মার্থ বাঙালী যতদিন পর্যন্ত অনুধাবন করতে পারবেনা ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশ কাঙ্খিত লক্ষে পৌঁছাতে পারবেনা।
শ্রেণীবৈষম্যের কারণে প্রতিনিয়িতই ধ্বংস হচ্ছে অনেক অনেক সম্ভাবনার বীজ। দয়া করে উদ্যোক্তাদের নিয়ে হাসিঠাট্টা, সমালোচনা করে দেশের অগ্রযাত্রাকে বাঁধাগ্রস্থ করবেন না এবং নিজেকে অশিক্ষিত মুরুব্বি প্রমাণ করবেন না। বাংলাদেশের অশিক্ষিত মুরুব্বি(দুঃখিত) এবং মেট্রীক ফেল পাশের বাড়ির আন্টি সমাজকে যদি ইউরোপ আমেরিকা কিংবা চিনে পাঠিয়ে সেখানকার পরিবেশটাও কোনোমতে বাংলাদেশের মতো দুষিত করা যেতো তাহলে হয়তো ল্যারি পেইজ কিংবা বিল গেটসরা তৈরি হতোনা, তৈরি হতোনা একজন জেফ বেজোস কিংবা মার্ক জাকারবার্গ, চিনের শিল্পবিপ্লব না হয়ে হয়তো বিসিএস কোচিং বিপ্লব হতো।
বাংলাদেশ তখনই কাঙ্খিত লক্ষ অর্জনে সফল হবে যখন এদেশে সকল পেশার মানুষকে শ্রদ্ধা করার সংস্কৃতি তৈরি হবে। বিসিএস ক্যাডারকে অভিনন্দন জানাতেই পারেন, একজন বিসিএস ক্যাডারকে একবার অভিনন্দন জানালে একজন উদ্যোক্তাকে পাঁচবার অভিনন্দন জানানো উচিত। আর সেটা সম্ভব হলেই দেশে যথেষ্ট পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, বেকারত্ব অনেকাংশেই ঘুচে যাবে এবং স্বাবলম্বী হবে দেশ এবং জাতি।
এস এম মুস্তাফিজ রিদম, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী।