রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ ধরা হয় গণমাধ্যমকে। রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি অংশকে জনগণের সামনে স্বচ্ছভাবে তুলে ধরাই এর কাজ। গণমাধ্যম স্বাধীন। গণমাধ্যমই একটি রাষ্ট্রের সাধারণ জনগণকে তাদের মুক্ত তথ্য-বচন-চিন্তার অধিকার সংরক্ষণ করে থাকে। ভোট যদি রাষ্ট্রের প্রতি জনগণের ❝সিদ্ধান্ত❞ হয়ে থাকে তবে গণমাধ্যম জনগণের ❝বোল❞। জনগণের রাজনৈতিক ভাষা। রাষ্ট্রের যেসকল নাগরিক কোনভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত থাকে না, তাদের একটি রাজনৈতিক ভাষা দিয়ে থাকে এই গণমাধ্যম।
কি? অবাক হচ্ছেন? হাসি পাচ্ছে? কিংবা কান্না? অনেকের হয়তো সব কিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে? কারণ বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি, তাতে গণমাধ্যম যে কেবল নায়ক নায়িকার প্রেম, বিয়ে, সরকার প্রধানের বন্দনা, বাতাবি লেবুর ফলন, সেতুর স্প্যানের বাইরে গিয়ে— জনগণের জন্যে একটি স্বকীয় স্বাধীন ❝রাজনৈতিক ভাষায়❞ পরিণত হতে পারে, কিংবা জণগনের মুক্তবাকের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে— এসকল অবাক করা তথ্য শুনে অনেকেই হয়তো হেসে উঠেছেন ইতোমধ্যে। অনেকে হয়তো অবাক হচ্ছেন। ভাবছেন, মিডিয়া এভাবে কাজ করে? অনেক শিক্ষিত মানুষ হয়তো তাচ্ছিল্যের সাথে মুখ ভেংচে মনে মনে বলে ফেলেছেন ❝মিডিয়া নিয়ে ওসব আবেগী আলাপ সবাই-ই দেয়। বাংলাদেশের মিডিয়া! তাও আবার মুক্ত মিডিয়া!❞
তা যাই হোক, এবার একটু সিরিয়াস আলাপে আসা যাক। আমরা সবাই জানি বাংলাদেশে আজ গণতন্ত্র মৃত। গণমাধ্যম এখন আর জনগণের কথা বলছে না। এক একটা মিডিয়া হাউজ এক একটি অলিগার্কদের মুখপাত্র। তবু আজও কোন সাংবাদিক মাইক হাতে রাস্তায় নামলে, মানুষ চায় সেই মাইকে তাদের মনের কথা জানাতে। তারা চায় তাদের কষ্টের কথা, দম বন্ধ হয়ে আসার কথাগুলো ঐ সাংবাদিক রাষ্ট্রের কাছে পৌঁছে দিক। কিন্তু সেরকম কিছুই হয় না। এরই মাঝে বিদ্যুতের দাম বিনা শুনানিতেই বেড়ে যায়, চালের দাম হয় প্রায় একশো, প্রাণ রক্ষার ওষুধের বাজারেও আঁচ লাগায় আগুন।
এখানেই হাজির আমরা, মুক্তিপত্র। গণতন্ত্রের মুখোশে যে ফ্যাসিবাদ আজ খুবলে খাচ্ছে আমাদের গণমাধ্যমকে, সেখানেই জণগনকে কথা বলার সুযোগ করে দিতে চায় মুক্তিপত্র। মহান ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে। এই ভাষার মাসই হোক আমাদের লড়াইয়ের নতুন শুরুয়াত। আমরা জনগণের সেই ❝বুলি❞ হয়ে উঠতে চাই। সেই কথা বলার অধিকার নিয়ে হাজির হতে চাই, যা গত একযুগে ধ্বংস করা হয়েছে। উন্নয়নের নামে, চেতনার নামে, সর্বোপরি ❝উন্নয়নের গণতন্ত্র❞ নামে।
গণতন্ত্রের যে লড়াইয়ে আজ নেমেছে বাংলাদেশের মানুষ সে লড়াই হোক সু-সংহত, সেই লড়াইয়েরই ভাষা বলুক মুক্তিপত্র। আপনারা আপনাদের লেখা পাঠান, চিন্তা আমাদেরকে জানান। ভাষা যে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কতটা শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে— তা এই ভাষার মাসেই আমরা দেখিয়ে দিতে পারবো বলে আমরা আশা করি। দিনশেষে মুক্তিপত্র হোক জনতার ভাষা। গণতন্ত্রের ভাষা।