অবশেষে দীর্ঘ আলোচনা, দর কষাকষি এবং উৎকণ্ঠা পার হয়ে গত ৮ আগস্ট শপথ নিলেন বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রত্যাশার চাপ অনেক। একটি সফল গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে উৎখাত করার পর এটিই প্রথম সরকার। মাঝে তিন দিন দেশ ছিল সরকারবিহীন, জনগণ ছিল চিন্তিত। পথে পথে বিজয়ের উল্লাসের সাথে মিশে ছিল উৎকণ্ঠা – কী হবে সামনে? আমাদের গণ অভ্যুত্থান যাবে কোন পথে? এখন সবাই একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন।
সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস – বাংলাদেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। বাংলাদেশের ঘোর সংকটকালে তিনি দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন, দ্ব্যর্থকণ্ঠে ঘোষণা দিচ্ছেন তিনি দেশ গড়ে তুলবেন। তিনি হয়ত পারফেক্ট নন, কিন্তু তিনি বেস্ট অপশন। তিনি সর্বজনপ্রিয়, দেশে ও দেশের বাইরে ক্লিন ইমেজের অধিকারী, এবং আওয়ামী লীগের হাতে নিপীড়িত। এরকম একজনই পারবেন দেশি-বিদেশি চক্রান্তকে প্রতিহত করতে।
উপদেষ্টা প্যানেলের বাকি সদস্যরা প্রত্যেকেই সজ্জন, স্ব স্ব মহিমায় উজ্জ্বল, দেশপ্রেমিক বিজ্ঞজন। তাদের কাঁধে এখন গুরুভার। দেশবাসী তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।
তবে সব নজর থাকছে ছাত্র প্রতিনিধি নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ওপর। তারা তরুণ, সফল আন্দোলনের কাণ্ডারি হিসেবেই তারা সরকারে বসছেন। যদিও তাদের প্রভাব আন্দোলনে ঠিক কতটা ছিল তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন বা একটি আক্ষরিক গণ অভ্যুত্থানের নায়ক হিসেবে গুটিকয় ব্যক্তি কতটা প্রতিনিধিত্বমূলক, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়। তবে, তারুণ্যের শক্তিকে আমাদের অগাধ বিশ্বাস।
তারুণ্য আজ বাংলাদেশকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তারা জালেমশাহীর পতন ঘটিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তারা এখন সড়ক ব্যবস্থাপনা নিয়োজিত আছে, এলাকা পাহারা দিচ্ছে, আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করছে, মুছে দিচ্ছে রক্তের দাগ। এদেশের বুকে আঠারো নেমে এসেছে। তার প্রতিফলন আমরা সরকারে দেখতে চাই। আমরা চাই – দেশটা হবে সবার।
জনতার মনে নানা প্রশ্ন, নানা শঙ্কা। এই অনির্বাচিত সরকার কতদিন থাকবে? নির্বাচন কবে হবে? কারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে? আওয়ামী লীগের ফেলে যাওয়া শূন্যস্থান কীভাবে পূরণ হবে? সমাজ ও প্রশাসনের সর্বস্তরের দালালদের কী হবে? বাংলাদেশের বুক থেকে কবে উপড়ে ফেলা হবে স্বৈরাচারের শেষ চিহ্ন? এই প্রশ্নের উত্তর কিন্তু আজ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই দিতে হবে। তারা দীর্ঘ সময় নিয়ে মসনদে বসতে চান, ভালো কথা। কিন্তু ২০০৭ সালের মত প্রতিক্রিয়াশীল, বিদেশী মদদপুষ্ট, সেনা সমর্থিত সরকারের পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে চাই না। গণতন্ত্রের জন্য আমাদের জীবন দেয়া, তা নিয়ে কোনো ছল-চাতুরি মেনে নেয়া হবেনা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দিকে জনতা তাকিয়ে আছে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে। হ্যাঁ, বিপ্লবের পরদিনই সবাই দুধে-ভাতে থাকবে, এই আশা আমরা করিনা। কিন্তু, জনতার প্রত্যাশা গণতন্ত্র, ন্যায়, সমতা, আইনের শাসন, সুবিচার, নিরাপত্তা, হারানো সার্বভৌমত্ব ফিরে পাওয়া। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তা অবশ্যই পূরণ করতে হবে।
তাদের মনে রাখতে হবে –জনতা্র আদালত কিন্তু আজীবনের জন্য স্বাধীনতার পক্ষেই রায় দিয়েছে আর এই রায় তারা রাজপথেই রক্ষা করতে আবারো পিছপা হবে না।
সাদিক মাহবুব ইসলাম মুক্তিপত্রের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।