নভেল করোনাভাইরাস কি?
নভেল করোনাভাইরাস (সিওভি) হলো করোনাভাইরাসের এক নতুন প্রজাতি। নভেল করোনাভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্ট এই রোগটি প্রথম চীনের উহানে চিহ্নিত হয়েছিল। তখন থেকেই রোগটির নাম করা হয়েছিল করোনাভাইরাস রোগ ২০১৯ (কোভিড-১৯)
কোভিড-১৯ ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়?
সংক্রমিত ব্যক্তির শ্বাসতন্ত্রের ফোঁটার (কাশি এবং হাঁচির মাধ্যমে তৈরী) সাথে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে এবং এই ভাইরাস দ্বারা দূষিত অংশ স্পর্শ করার মাধ্যমে এটি সংক্রমিত হয়। কোভিড-১৯ ভাইরাস বেশ কয়েক ঘন্টা ভূপৃষ্ঠে বেঁচে থাকতে পারে, তবে সাধারণ জীবাণুনাশক এটিকে মেরে ফেলতে সক্ষম।
চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্মীদের কোভিড-১৯ সংক্রামিত হওয়ার ঝুঁকি কতটুকু?
করোনভাইরাস মহামারীটির সামনের সারিতে কর্মরত চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্মীদের প্রতিরক্ষামূলক গিয়ারের জাতীয় ঘাটতির কারণে নিজেকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে কাজ করছেন। বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে তারা তাদের রোগীদের দ্বারা সংক্রামিত হচ্ছেন । ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্মীদের আক্রান্ত রোগী হতে কোভিড-১৯ সংক্রামিত হয়ে মৃত্যু হয়েছে এমন বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। ইতালিতে রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৩ হাজার ৬৪৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় সংক্রমিত হয়েছে। ডাক্তার ও নার্স মিলে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৯ জন। যা ইতালির করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত ডাক্তার ও নার্সদের মোট সংখ্যার ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশে ডেল্টা মেডিকেল কলেজে এন্ড হসপিটালের একজন চিকিৎসক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। রোববার (২২ মার্চ) তার শরীরে করোনার অস্তিত্ব ধরা পড়ে। তিনি মিরপুরের টোলারবাগের এক করোনা (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করেছিলেন। হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করছেন ৩০ বছর বয়সী ওই চিকিৎসক। বাংলাদেশ ডক্টর’স ফাউন্ডেশনের প্রধান প্রশাসক ডা. নিরুপম দাস সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আজ (রোববার) তার (ওই চিকিৎসকের) ভাইরাস ইনফেকশনের প্রতিবেদন এসেছে। এর আগে ডেল্টা মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটালের ৪ জন চিকিৎসক, ১২ জন নার্স এবং ৩ জন স্টাফকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। গত ২০ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত ছিলেন তারা।
বাংলাদেশের ডাক্তারদের PPE নিশ্চিতকরনের কেন জরুরী?
সরা বিশ্ব বর্তমানে কোভিড-১৯ এর নিয়ন্ত্রনে হিমশিম খাচ্ছে। গত তিম মাস ধরে বিভিন্ন দেশে তিন লক্ষের অধিক মানুষ কোভিড-১৯ দ্বারা সংক্রামনের শিকার হয়েছে এসব রোগিদের সেবা প্রদান করতে চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্মীদের সুরক্ষায় সর্বপ্রথম যে জিনিসটি প্রয়োজন হচ্ছে তা হল PPE। তবে বাংলাদেশে এখনো PPE এর মত অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সেভাবে রাষ্ট্রের নজরে আসছে না। সরকারী বেসরকারী হাসপাতাল গুলোতে PPE ও অন্যান্য সুরক্ষা গিয়ারের চরম সংকট। শতভাগ প্রস্তুতির হাঁকডাক থাকলেও করোনা পরিস্থিতি শুরুর তিনমাস পরে এখনো সরকারী ভাবে এখনো বলা হচ্ছে টেস্টিং কিট আসছে, PPE আসছে বা ব্যবস্থা হচ্ছে। কিন্তু বর্তমান সংকটকালীন সময়ে চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্মীদের PPE ছাড়া চিকিৎসা প্রদান সরাসরি আগুনে ঝাঁপ দেয়ার মত। কারন একজন রোগি যদি কোভিড-১৯ সংক্রামিত হয়ে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসেন এবং তা নিশ্চিত হওয়ার আগেই কিন্তু চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্মীদের কোভিড-১৯ সংক্রামনের ঝুঁকি চরম। সেই সাথে তাদের দ্বারা হাসপাতাল গুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা অন্যান্য রোগিদের ভেতরেও সংক্রামন ছড়িয়ে পড়া স্বল্প সময়ের ব্যাপার। ইতমধ্যে সংক্রামনের আশংকায় দেশের বেশকটি মেডিক্যাল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কর্মবিরতিতে গিয়েছে যা এমন সংকটাপন্ন অবস্থায় আরো ভোগান্তি বাড়াবে। আজ (২৩ মার্চ) সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিংয়ে ডাক্তারদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম (পিপিই) নেই, এ বিষয়ক প্রশ্নের উত্তরে জাহিদ মালেক বলেন, ‘চীনে যখন করোনাভাইরাস ধরা পড়েছিল, তখন তাদের কাছেও পিপিই ছিল না। এখনো আমাদের পিপিই অতটা দরকার নেই।’ এটি একটি দায়িত্ব জ্ঞানহীন মন্তব্য ছাড়া কিছুই নয়।
এমতাবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রনে সরকারী বেসরকারী সকল হাসপাতাল ক্লিনিকে চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্মীদের WHO এর স্টান্ডার্ড অনুযায়ী PPE ও PPE রক্ষনাবেক্ষনের সকল সরঞ্জামাদি দ্রুত নিশ্চিত করুন।
বাংলাদেশ তৈরী পোশাক রপ্তানীতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সরকার চাইলে PPE তৈরীতে দেশের দেশের গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোর সহযোগিতা নিতে পারে। অতএব অনতিবিলম্বে সকল হাসপাতালে PPE নিশ্চিত করুন।
চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্মী বাঁচলেই দেশের মানুষ বাঁচবে।