‘আপনারা জানেন যে বাংলাদেশের জনগণের উপরে ২৫ এ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী রাতের আধারে যে বর্বরোচিত গণহত্যা, যে অন্যায় যুদ্ধ আমাদের জনগণের উপরে চাপিয়ে দিয়েছিল এবং জনগণ সেদিনকে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধে দাড়িয়ে ছিলেন। এবং সেই সংগ্রামে ভারত রাষ্ট্র, তৎকালীন সরকার, ভারতের জনগণ, ভারতের গণতান্ত্রিক শক্তি আমাদের সেই স্বাধীনতা সংগ্রামে তারা সমর্থন করেছিলেন, সহায়তা দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ তাদের এর সমর্থনে কৃতজ্ঞ।
কিন্তু আমরা যারা রাজনীতির ছাত্র, আমরা যারা জনগণের অধিকারের জন্য লড়াই করি, আমরা জানি, যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারত রাষ্ট্রের যেই ভূমিকা, ভারতের সরকারের যেই ভুমিকা, ভারতের সরকারের যেই ভূমিকা এবং ভারতের গণতান্ত্রিক জনগণের যেই ভূমিকা সেইটা এক নয়। সেই জন্য আমরা দেখেছি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর পরই সে আমাদের অন্যতম নয় নাম্বার সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলকে ভারতের সেনাবাহিনী আটক করেছিলেন৷ বাংলাদেশের সমগ্র দক্ষিণ অঞ্চলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে হরতাল পালন করেছিলাম আমরা। সুতরাং বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের যেই স্বাধীনতাকামী জনগণ, তার স্বাধীনতার যেই স্পৃহা, সেই স্পৃহাকে ভারতের শাসক শ্রেণী এবং রাষ্ট্র সেদিন যে বুঝতে পারিনি তা নয়। আপনারা দেখবেন সারেন্ডার এট ঢাকায় জেনারেল জেকব তার বইতে এক পর্যায়ে লিখেছেন শেষে, ততকালীন ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী, তার উপদেষ্টা ডি. পি. ধর।
ডিপি ধরকে জেনারেল জেকব বলেছেন যে, ‘ আমরা তো এখন চট্রগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে পারি’। তখন ডিপি ধর বলেছিলেন, ‘আপনি একজন সামরিক মানুষ, এই মুহুর্তে যদি চট্রগ্রাম বন্দরে হাত দেন তাহলে বাংলাদেশের মানুষ ভারতের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবে।’
তো, বাংলাদেশের উদ্ভবের সঙ্গে এগুলা পরিষ্কার বোঝার বেপার আছে। এবং ভারত রাষ্ট্রর দিকে তাকালে দেখবো, আজকে কাশ্মীরের দিকে তাকান। ভারত যখন হয় ১৯৪৭ সনে, একশটির উপরে প্রিন্সলি স্টেট ছিলো। কিভাবে হায়দ্রাবাদ ভারতের সেনাবাহিনী দখল করেছেন, কিভাবে গোয়া তারা দখল করেছেন, কিভাবে কাশ্মীর তারা দখল করেছেন। এবং এখনো কাশ্মীরের উপর..তারা যেইটুকু সাংবিধানিক অধিকার দিয়েছিলো সেইটুকুও তারা কেড়ে নিয়েছে। কিভাবে তারা উত্তর পূর্ব ভারতের নাগাল্যান্ড তারা দখল করেছিলো, মনিপুর তারা দখল করেছিলো। সুতরাং এই ইতিহাসের পর্বে ভারত রাষ্ট্রের যেই ভুমিকা, দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের দুশমন এই ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ! আজকে তার ডালপালা, সেই নখ আজকে তারা বিস্তার করেছেন। আজকে ভারতের ফ্যাসিস্ট উগ্র হিন্দুত্ববাদী মোদী সরকার ভারতের জনগনকে বিভক্ত করার জন্যে সেইখানে এন আর সি করেছে। সেইখানে সিটিজেন এমেন্ডমেন্ট এক্ট তারা করেছে। আশার কথা এই যে ভারতের তরুনরা, সেই জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়, জামিয়া আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রগতিশীলরা, তরুনরা মাঠে নেমে দাঁড়িয়েছেন এই উগ্র ফ্যাসিস্ট মোদী নীতির বিরুদ্ধে।
সুতরাং আজকে বাংলাদেশে যখন সীমান্ত হত্যার বিরুদ্ধে দাড়িয়েছি, আমরা জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল থেকে একটা কথা পরিষ্কার এবং স্পষ্ট বলতে চাই। বাংলাদেশের জনগণ কোন ভারতের তাবেদার সরকার দেখতে চায় না। ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোন তাবেদার পদলেহী সরকার, প্রশাসন জনগণ দেখতে চায় না। এই বাংলাদেশ ভাষা আন্দোলনের দেশ, তিতুমীরের দেশ, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কৃষক সংগ্রামের দেশ। এই দেশ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এক দেশ। সুতরাং বন্ধুগন আজকে আমারা সীমান্ত হত্যার বিরুদ্ধে যখন দাঁড়িয়েছি তখন গতকালকে জানা গেলো যে ভারতের সুপ্রীম কোর্টে ফেলানী হত্যার বিচারের দাবিতে যে রিট হয়েছে ২০১৫ সনে তার পাচ বছর পর তার শুনানির ব্যবস্থা হয়েছে আগামী ১৮ই মার্চ। আপনারা জানেন ভারত সরকার, ভারত রাষ্ট্র এই বি এস এফ কে তারা দ্বায়মুক্তি দিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশের সহস্র নাগরিককে তারা দিনের পর দিন হত্যা করে যাচ্ছে। সুতরাং আজকে বাংলাদেশের জনগণকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কোন শক্তিবলে তারা এই মদদ দিচ্ছে। এইখানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের যেই রাষ্ট্রদূত, এই দূতাবাস তার তৎপরতার দিকে নজর রাখতে হবে । আমাদের জনগণকে বিভ্রান্ত ও বিভক্ত করার জন্য তারা নানান ষড়যন্ত্র করছে। যেভাবে পাকিস্তানিরা করতো। পাকিস্তানিরা উর্দুভাষী বিহারীদেরকে আমাদের পূর্ব বাংলার জনগণের স্বাধিকারের বিরুদ্ধে তাদেরকে ব্যবহার করতো। ঠিক তেমনিভাবে আজকে ভারতীয় দূতাবাস এইখানে মতলববাজ হিন্দু নেতাদেরকে ব্যবহার করছে আমাদের জনগণের ঐক্যকে বিনষ্ট করার জন্যে। সুতরাং এইদিকেও আমদের নজর রাখা দরকার। আমরা পরিষ্কারভাবে মনে করি, প্রকৃত অর্থে জনগণের একটি গণতান্ত্রিক সরকার, জনগণের রাষ্ট্র, জনগণের সংবিধান ছাড়া কিছু হবে না। কোন সংস্কার করে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে না। কোন চুনকালাম করে হবে না। এইটা একটা জনগণের ক্ষমতার প্রশ্ন। ক্ষমতা আসবে কোত্থেকে।
আজকে এক তরুন শিক্ষার্থী নাসির, তিনি এইখানে যে বসছেন, আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই। এর আগে প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন এর আগে তিন বছর আগে ফেলানি হত্যার বিচারের দাবিতে এখানে সমাবেশ করেছিলো। আমরা আমন্ত্রনে এসছিলাম। আমরা জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল থেকে ভারতের সাথে বন্দী বিনিময় চুক্তি না থাকা স্বত্বেও হাসিনা সরকার সেই উলপাড় বিদ্রোহীদেরকে ভারত সরকারে হাতে তুলে দিইয়েছিলো। আমরা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। ২০১০ সনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ভারত সফর করেন, তার আগে আমরা সমাবেশ করে বলেছিলাম যে, বাংলাদেশের সাথে ভারতের এমন কোন অধীনতামূলক চুক্তি আপনি করবেন না। উনি ফিরে আসার পরেও আমরা সমাবেশ করেছিলাম। আপনারা জানেন, শেখ হাসিনা – মন মোহন চুক্তিতে কি আছে। এইখানে সন্ত্রাস দমনের নামে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালইয়ের সাথে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালইয়ের যৌথ টাস্ক ফোর্স আছে। এইখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের সাথে যৌথ টাস্কফোর্স আছে। এইখানে বাংলাদেশে সীমান্ত ব্যবস্থাপনার নামে কার্যত বি এস এফের একটা কর্তৃত্ব কায়েম হয়েছে যেই জন্য বিজিবি কোন কথা বলে না। সরকার নিরব থাকে। আমরা সরকারকে পরিষ্কার বলতে চাই যেইটা মাওলানা ভাসানী বলেছিলেন যে ইসলামাবাদের গোলামির জিঞ্জির ভেঙ্গেছি ভারতের জিঞ্জির পড়ার জন্য নয়। এবং আজকে এই বিষয়টা আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের দেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার, সভা সমাবেশ করার স্বাধীনতা, জনগণের সরকার গঠনের যেই স্বাধীনতা, তার যে একটা গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোট দানের অধিকার তা এইখান থেকে উচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। এই বাংলাদেসে বাহাত্তুর সন থেকে ঘুষ দুর্নীতি লুটতরাজ, চোরাচালান এসবের মধ্য দিয়ে এক লুটেরা ব্যবসায়ী শ্রেনী এইখানে ক্ষমতায় এসছে। আজকে তারা দানবে পরিনত হয়েছে। আজকে বাংলাদেশ থেকে গত দশ বছরে প্রায় নয় লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। পাকিস্তানের ২২ পরিবার আমাদের শোষন করতো, এই পূর্ব বাংলা থেকে ইসলামাবাদে টাকা পাচার হতো। এখন এই টাকা কারা পাচার করে? এই শাসক শ্রেনি এই শাসক দালালী লীগের, প্রশাসনের দূর্নীতিবাজ কর্তারা। সুতরাং সমগ্র বাংলাদেশে আজকে জনগণ এক দূর্বিষহ জীবনের মধ্যে চলছে।’
১৫/০২/২০২০
ফয়জুল হাকিম
সাধারণ সম্পাদক
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
1 Comment
Great content! Super high-quality! Keep it up! 🙂