কোন এক অজানা কারণে আমারা মানে বাংলাদেশীরা এক অদ্ভুত রোগ আক্রান্ত হয়ে পড়েছি। আমরা খুব ভালো ইগনোর করতে পারি ইদানীং!
“পেট্রোল-ডিজেল এর দাম বাড়ছে, তাতে আমার কি! আমার তো গাড়িই নাই, আমি চড়ি রিকশায়! ”
একটা কথা ভেবেছেন কি, এই সবের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দামও সমানতালে বাড়ছে?
“ধুর এতো কে ভাববে! সময় আছে নাকি ভাবার!”
এই উদাহরণ দেয়ার কারণ আমাদের ইগনোর করার ক্ষমতা কতটা ভালো তা বুঝানোর জন্য। তা হলে ভূমিকা হলো, এবার ঝেড়ে কাশি!
হালের কিছু ইস্যু যেমন, জাবি ভিসির দুর্নীতি, শোভন-রব্বানিদের চাঁদাবাজি কেলেঙ্কারি,পেঁয়াজের কালোবাজারি এবং মূল্যবৃদ্ধি রোধে সরকারের ব্যর্থতা, ধানের ন্যায্যমূল্য কৃষকের কাছে পৌঁছাতে সরকারের ব্যর্থতা, সৌদি আরবে নাজমাদের ধর্ষণ ও হত্যার বিচারহীনতা,ক্যাসিনো কান্ড, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হলে হলে টর্চারসেল, পার্শ্ববর্তী মিত্র দেশ ভারতের সাথে মাত্রাতিরিক্ত বন্ধুত্ব প্রদর্শন এবং উদারতার বিরুদ্ধাচরণের ফলে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড, বিনা কারনে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, আমিন জুয়েলার্সের মালিকের ধর্ষকপুত্রের জামিন,পাটকল শ্রমিকদের অনশনে মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় নিষ্ক্রিয়তা, দুটি ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকান্ডে শ্রমিকের মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় নিষ্ক্রিয়তা,হলি আর্টিজানে হামলাকারীদের মাথায় আইএস টুপি রহস্য ইত্যাদি ধামাচাপা দিতে রাজাকারদের তালিকা নিয়ে বিভ্রাট সৃষ্টি! তবুও মানুষজন ” Not নড়ন-চড়ন ” আমাদের মধ্যে Unity অর্থাৎ একতার বড়ই অভাব!
অথচ ভারতের অবস্থাটা একবার চিন্তা করেন!! NRC এবং CAB/CAA এর বিরুদ্ধে সবধর্মের মানুষই সোচ্চার। তারা তাদের সরকারের একটা অন্যায় এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপের প্রতিবাদ করছে এবং তাও একসাথে। অন্যদিকে জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরোচিত পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের সাথে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একাত্বতা ঘোষণা করেছে তখন তাদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের মদদপুষ্ট একটি গোষ্ঠী হামলা চালায়! ভাবেন, আমাদের নিজেদের মধ্যেই কতো বিভাজন! এখন বলবেন, “আরে রাখেন! এতো ভাববার সময় আছে নাকি? আর ভেবেই বা কি হবে? আমাদের সরকার বলছেন, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়! তাই, তাতে আমার কি!” একটা কথা, এই এনআরসি & সিএএ পুরোপুরি কার্যকর হলে এর মাশুল আপনাকে আমাকেও দিতে হবে।
আসামের প্রায় কয়েক লাখ মানুষ নাকি বাংলাদেশী রিফিউজি! এর ফলাফল আন্দাজ করতে পারছেন অবশ্যই। আর সিএএ তো পুরোপুরি সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরির এবং কট্টর হিন্দুত্ববাদের দৃষ্টান্ত!
কোন ধর্মই অন্য ধর্মের মানুষকে অসম্মান করতে শেখায় না। বরং সব ধর্মেই সবার আগে মানবিকতা, “সবার ওপর মানুষ সত্য” যারা সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করতে চায় এবং যারা এতে মৌনসম্মতি দেয় তারা এটিকে শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। তারপরও একদল লোক বলবে, “ তাতে আমার কি! ”
~ ইরাবতী চৌধুরী; সম্পাাদক, মুুুক্তিফোরাম ~
Subscribe to Updates
Get the latest creative news from Mukti Potro
Previous Articleনব্য সাংবাদিকতার ঘোরতর সংকট
Next Article সিলেক্টিভ মানবাধিকারের লড়াই
Muktiforum
মুক্তিফোরাম একটি মুক্তিবাদী, বহুত্ববাদী এবং জনপন্থী সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যে গড়ে ওঠা সংগঠিত গণমঞ্চ। এর লক্ষ্য হলো নতুন ধরণের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক চর্চা নির্মাণ। নোংরা হিসেবে রাজনীতির যে রূপকল্প এদেশের মানুষের কাছে নির্মাণ করা হয়েছে, সেটিকে চ্যালেঞ্জ করতে চায় মুক্তিফোরাম। আবার যেসব একক আদর্শ (যেমন বামপন্থা-ডানপন্থা) বা পরিচয়ের রাজনীতি (সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, জাতিবাদ) দিয়ে জনগণের সংহতি ও বৈচিত্র্য হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে তার একটি এন্টিডোট হয়ে ওঠাও মুক্তিফোরামের প্রকল্প।
Leave A Reply