উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে দেয়া জবাবদিহি পত্রের অনুলিপি নিচে তুলে ধরা হলোঃ
২৪শে ডিসেম্বর ২০১৯
বরাবর
উপাচার্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
বিষয় : বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন ও মতামত প্রকাশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন বারবার ব্যর্থ হচ্ছে তার কারণ জানানোর অনুরোধ।
জনাব,
আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত কতিপয় শিক্ষার্থীর মা-বাবা, অভিভাবক, প্রাক্তন ছাত্র, লেখক, শিল্পী, সাংবাদিক, আইনজীবী, তথা রাষ্ট্রের কর প্রদানকারী নাগরিকবৃন্দ গভীর উদ্বেগের সাথে বেশ কিছুদিন যাবত লক্ষ্য করছি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীরা হরহামেশাই বিভিন্ন প্রকার নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, কিন্তু তারা আপনার কাছ থেকে কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না। আমরা জানতে পারছি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্য হওয়া সত্ত্বেও আপনি সকল ছাত্রের প্রতি শিক্ষকসুলভ নিরপেক্ষতা প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
আপনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতনভুক সর্বোচ্চ ও সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের যে দায়দায়িত্ব রয়েছে তা সুচারূরূপে পালন করার জন্যই আমাদের রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে আমাদের করের টাকায় আপনার বেতন-ভাতা সম্মানী পরিশোধ করা হয়। আমাদের সন্তান-সন্ততির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আপনি আইনত দায়িত্বপ্রাপ্ত জেনেই আমরা আমাদের সন্তানদের আপনার অভিভাবকত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরণ করেছি। কিন্তু আপনি রাষ্ট্রীয় তহবিলের টাকায় বেতনভাতা প্রাপ্ত একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রধান হওয়া সত্ত্বেও কেন একটি দলীয় সরকারের কর্মকর্তার মতো আচরণ করছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। দিনের পর দিন আপনার পক্ষপাতমূলক, অমানবিক আচরণে আমরা হতবাক, বিমর্ষ এবং উদ্বিগ্ন। আপনার এই আচরণ অপরাধীদের আরো অপরাধ করতে ধারাবাহিকভাবে উস্কানি দিয়ে চলেছে বলে আমরা মনে করছি।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সকল নজির ভঙ্গ করে ডাকসু ভবনের ভিতরে ঢুকে আলো নিভিয়ে ডাকসুর ভিপিসহ অন্তত ৩০ জন ছাত্রকর্মীকে এমন নৃশংস কায়দায় মারধোর করা হয়েছে, যার পরিণতিতে অন্তত দুইজন ছাত্র এখনো আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে আইসিইউতে রয়েছে এবং বাকীদের জীবনহানীর আশঙ্কা না থাকলেও তাদের অনেকেরই শারীরিক সুস্থতা চিরতরে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত ছাত্ররা আপনার প্রশাসনের সাহায্য প্রার্থনা করেছিল, কিন্তু আপনি ও আপনার প্রশাসন এ ঘটনা বন্ধ করার কোনোপ্রকার উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো তাদেরই কটূকথা বলে বহিষ্কারের হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দিয়ে আক্রমণকারীদের পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন। অতীতেও এ ধরণের নানা অভিযোগ আপনি ও আপনার প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে উত্থাপিত হয়েছে, এবং আপনি তার একটারও সুষ্ঠ তদন্ত করে বিচার করেছেন বলে আমরা দেখতে পাইনি।
শিক্ষার্থীরা যাতে জ্ঞান আহরণের জন্য মুক্ত পরিবেশে যুক্তি-তর্ক এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে সেজন্যেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং আপনার দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জন্য সেই পরিবেশ নিশ্চিত করা। কিন্তু আপনি দিনের পর দিন তার বিপক্ষে কাজ করে চলেছেন। এর বহু নজির বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও মিডিয়ায় ছড়ানো রয়েছে। আমরা এ অবস্থার অবসান চাই এবং কেন আপনি এবং আপনার প্রশাসন আমাদের সন্তানদের সাথে এমন অশিক্ষকসুলভ আচরণ করছেন তার কারণ জানতে চাই।
ধন্যবাদসহ
উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজের পক্ষে
রাখাল রাহা, লেখক ও শিক্ষা আন্দোলনকর্মী