২০২০ সালে শুধু একটি নতুন বছরই নয়,নতুন একটি দশকেরও শুরু হলো। গত দশকে অর্থাৎ ২০১৯ পর্যন্ত আমাদের অর্জনের খাতায় অনেক ভারী। এতোটাই ভারী যে এই ভার বইতে এখন প্রাণ ওষ্ঠাগত!
উদাহরণস্বরূপ,
“অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির ফলে বাংলাদেশ দ্রুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে! শিক্ষা, শিশুমৃত্যুহার কমানো এবং দারিদ্র হ্রাসকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে! (সূত্রঃ বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা)
তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের নারী ও শিশুর উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভূষিত করা হয়েছে জাতিসংঘের সাউথ–সাউথ এওয়ার্ডে।(সূত্রঃ মাল্টি সেক্টরাল প্রোগ্রাম অনভায়োলেন্স এগেইনস্ট ওমেন)
প্রায় ১৬ কোটি জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশ বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ!” (সূত্রঃ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন)
অল্পকিছু উদাহরণ এখানে। কিছু কথা বলা যাক এই ক’টা নিয়েই। শেষ থেকেই শুরু করি। বাংলাদেশ খাদ্যে যদি স্বয়ংসম্পূর্ণই হয়, তাহলে ভারতে পেঁয়াজ এর উৎপাদন কম হওয়ায় আমাদের দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম আকাশচুম্বী হলো কেন? কেনইবা মিসর এবং অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে হলো?? ভাববার বিষয় বইকি!
তারপর, নারী ও শিশুর উন্নয়ন! এর সবথেকে উৎকৃষ্ট উদাহরণ বোধহয় সাড়ে তিন বছরের শিশু তানহার ধর্ষণের ঘটনা ও এর বিচার!
শিক্ষারহার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। খুবই সত্য কথা কিন্তু শিক্ষিত মানুষের সংখ্যাটা কতটা বাড়ছে? যারা একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, একজন প্রবীণ সাংবাদিককে অসন্মান করে, তাদের শিক্ষা নিয়ে সন্দিহান হতে হয়।
কাঠামোগত রুপান্তর ও সামাজিক অগ্রগতির ফলে উন্নয়ন! পুরনো ঘটনাবলী না ঘেঁটে খুব সাম্প্রতিক দুটি ঘটনা দিয়ে উদাহরণ দেয়া যায়, আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ড ও ডাকসুতে হামলার ঘটনা।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণের ফলে দ্রুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ! নায্য অধিকারের দাবিতে অনশনরত পাটকল শ্রমিকের মৃত্যু। মানুষ কতটা অসহায় হলে কাজের নায্য মজুরির জন্য অনশন করে তা আশা করি আর বুঝিয়ে দিতে হবে না।
না,আমি বলছি না যে আমাদের অর্জনের খাতায় পুরোটাই শূন্য। কিন্তু যে অর্জন সাধারণ জণগণের জীবনযাত্রাকে ছুঁতে পারছেনা, যে অর্জনে জনগণকে তাদের মৌলিক অধিকার পেতে ক্রমাগত আন্দোলন-মিছিল করতে রাজপথে নামতে হচ্ছে, “গণতন্ত্র” হাস্যকর হয়ে যাচ্ছে ; সর্বোপরি , স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, সেই অর্জনের কতটা মূল্য!
হিসেবে বেশ গরমিল হয়েছে গত দশক জুড়ে। সরকারি পরিসংখ্যান আর দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি কোনভাবেই খাপ খাচ্ছে না। কথায়-কাজে মিলের থেকে অমিলই বেশি তাদের। একেবারে উনিশ-বিশ অবস্থা। ২০১৯ থেকে ২০২০ এ পদার্পণের সাথে সাথে এই উনিশ-বিশ অবস্থা থেকেও উত্তরণ প্রয়োজন। আর এর জন্য প্রয়োজন জনগণের একতা, আর নিজের অধিকারের প্রশ্নে সর্বদা সোচ্চার থাকা। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার সংবিধান অনুযায়ী জনগণের জন্য কাজ করতে এবং কাজের জবাবদিহি করতে বাধ্য। কারণ সরকার চলে জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। সুতরাং নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে আমাদের। বঙ্গবন্ধুর ১৯৩৯-১৯৭১ পর্যন্ত সময়ের অধিকাংশ সময় এই ভূখণ্ডের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য কারাবরণ এবং ত্রিশ লাখ বা তারও অধিক শহীদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দিতে পারি না আমরা।
মুক্তিফোরামের পক্ষে সম্পাদকীয়টি লেখেন,ইরাবতী চৌধুরী
Subscribe to Updates
Get the latest creative news from Mukti Potro
সরকার চলে জনগণের ট্যাক্সের টাকায়,কথায়-কাজে অমিল কেন?
Previous Article২০১৯ বর্ষশেষ আয় ব্যয়ের হিসেব
Next Article “এই তন্ত্রে শোষিতের পক্ষে কিছুই লেখা নাই”
Muktiforum
মুক্তিফোরাম একটি মুক্তিবাদী, বহুত্ববাদী এবং জনপন্থী সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যে গড়ে ওঠা সংগঠিত গণমঞ্চ। এর লক্ষ্য হলো নতুন ধরণের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক চর্চা নির্মাণ। নোংরা হিসেবে রাজনীতির যে রূপকল্প এদেশের মানুষের কাছে নির্মাণ করা হয়েছে, সেটিকে চ্যালেঞ্জ করতে চায় মুক্তিফোরাম। আবার যেসব একক আদর্শ (যেমন বামপন্থা-ডানপন্থা) বা পরিচয়ের রাজনীতি (সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, জাতিবাদ) দিয়ে জনগণের সংহতি ও বৈচিত্র্য হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে তার একটি এন্টিডোট হয়ে ওঠাও মুক্তিফোরামের প্রকল্প।
Leave A Reply