গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র করোনাভাইরাস কভিড-১৯ টেস্টিং কিট তৈরির পদ্ধতি বের করেছে বলে ঘোষণা দিয়েছে। তবে এই টেস্ট কিট কাজ করবে কি করবে না তা নিয়ে কিছুটা মতভেদ তৈরি হয়েছে। বায়োলজিক্যাল রিসার্সের সাথে জড়িত কেউ কেউ বলছেন এর জন্য Reverse transcription polymerase chain reaction (rt PCR) দরকার। এই নিয়ে আমি ড এন্ড্রু রয়, ফ্যাকাল্টি এন্ড কোর রিসার্চার, মাস্ট্রিকট ইউনিভার্সিটি, নেদারল্যান্ডস-এর সাথে কথা বললাম মাত্রই। যা বুঝলাম সেটা হচ্ছে-
করোনা বা এইধরনের টেস্ট দুটি পদ্ধতিতে করা যায়-
১। ফরেন প্রোটিন এন্টিবডি ডেভেলপ করেছে কিনা এটা এনজাইম পরীক্ষার টেস্ট কিট দিয়ে কিছুটা সহজে করা যায়।
২। তবে খুব নিশ্চিত হবার জন্য পিসিআর ভালো, যেখানে ডিএনএ রেপ্লিকেশন চেইন নিয়ে নিখুঁত ধারনা পাওয়া যাবে।
তাই enzyme-based (ELISA ) স্থানীয় কিট উদ্ভাবনকে নিরুৎসাহিত করা উচিৎ নয় এই মুহুর্তে। তবে ফরেন প্রোটিন এন্টিবডি ডায়াগনোসিস করা গেলেও সেটি স্পেসিফিক নয়। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও এটা পজিটিভ রেজাল্ট দিবে। মানে ফলস করোনা পজিটিভ। প্রথম কয়েকটা টেস্টে একটা কনফিউশন তৈরি হবার একটা চান্স আছে এই পদ্ধতিতে। তবে যেহেতু ডেঙ্গু করোনা ইত্যাদির সংক্রমণে এন্টিবডি/এঞ্জাইম ভিন্ন হয়, বেশ কয়েকটি টেস্ট কেইস পাইলটের পরে রেজাল্টে একুরেসি আসবে, যখন সঠিক এন্টিবডি জানা যাবে।
গণস্বাস্থ্য উদ্ভাবন করেছেন, এটা ভালো, তবে এটাকে দ্রুত টেস্ট ট্রায়াল, পাইলট ও প্রডাকশনে নিতে হবে। নচেৎ শুধু উদ্ভাবনে লাভ নেই। সবচেয়ে ভালো হয়, কয়েকটা ট্রায়াল করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন নিবার ব্যবস্থা করা, তাহলে যাবতীয় সংশয় কেটে যাবে। ট্রায়াল ছাড়া এই কিট বাজারজাত করা অসম্ভব।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আঠারো কোটি মানুষের দেশে একটা মাত্র পিসিয়ার টেস্ট ল্যাব থাকবে, আই ই ডি সি আরে, সেটা ধরা ছোঁয়ার বাইরে, উনারা ইচ্ছা করলে স্যাম্পল নিবেন ইচ্ছা করলেই এফোর কাগজে প্রিন্ট করে টেস্টিং বন্ধ করে দিয়ে বলবেন অনলাইনে যোগাযোগ করুন- এইসব হাস্যকর এবং লজ্জাকর দায়িত্বহীনতা।
বর্তমানে করোনার টেস্ট সক্ষমতা বর্তমানে শুধু আইইডিসিআর এই সীমাবদ্ধ, দেশে একটি মাত্র ল্যাব। ১৫ মার্চ পর্যন্ত সরকারের হাতে মাত্র ১৭৩২টি কিট। এটা অগ্রহণযোগ্য, দেশের সব যায়গা কিংবা সব শহর বা রাজধানীর সব এলাকার কোটি মানুষের বিপরীতে আইইডিসিআর এর নামমাত্র সক্ষমতা মেনে নেয়া যায় না। জরুরি ভিত্তিতে টেস্ট কিট সংগ্রহ বা উৎপাদন করুন, সফস্টিকেটেড বায়ো মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট সহ ল্যাব ও টেস্ট কিটের সাপ্লাই নিশ্চিত করুন। দেশের সব বিভাগীয় সদরে অন্তত একটি ল্যাব সক্ষমতা তৈরি করুন। চায়নার সহায়তা নিন, দরকার হলে কূটনৈতিক চ্যানেল কাজে লাগান।
সব বড় বড় সরকারি (এমনকি বেসরকারিও) হাসপাতাল করোনা সহ ডেঙ্গুর টেস্টকিট, প্রটেকটিভ মেডিক্যাল সপ্লাই সরবারহ নিশ্চিত করতে হবে, অতি দ্রুত। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শাখা বাড়ান প্রতি বিভাগে! উন্নয়ন প্রকল্প আর ব্যাংক লুটের ধান্ধা বাদ দিয়ে জনকল্যাণে কিছু খরচ করেন।
আবার বলা হচ্ছে, পিসিয়ার খুব দামি। এই দেশে পুকুর কাটা, বালিশ তোলা, ভবনের মাটি কাটা, বিদেশ ভ্রমনের কাজে কোটি কোটি লোপাট হচ্ছে। সর্বেসর্বা লুট থামিয়ে কূটনৈতিক চ্যানেল কাজে লাগিয়ে অবশ্যই সাশ্রয়ী দামেই অতি দ্রুত একাধিক সফস্টিকেটেড বায়োমেডিক্যাল ল্যাব করা সম্ভব।
ফাইজ তাইয়েব আহমেদ।